নাজমুল হুদা বীরবিক্রমকে হত্যার ৪৮ বছর পর মামলা, 'জিয়ার নির্দেশে হত্যার' অভিযোগ
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম)

নাজমুল হুদা বীরবিক্রমকে হত্যার ৪৮ বছর পর মামলা, ‘জিয়ার নির্দেশে হত্যার’ অভিযোগ

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদাকে (বীর বিক্রম) হত্যার ঘটনায় ৪৮ বছর পর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে এই হত্যাকাণ্ডে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বুধবার (১০ মে) মামলাটি দায়ের করেন সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান। তিনি খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে। মামলায় ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আব্দুল জলিলকেও আসামি করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই আমার বাবাকে হত্যা করা হয় এবং হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়।’

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর খুন হন আমার বাবা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম। আমার বয়স তখন ছিল পাঁচ বছর, আর আমার বড় ভাইয়ের আট বছর। আমার বাবা রংপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘৭২ বিশেষ কমান্ডার’ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে নিহত হন। তার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম এবং কর্নেল এটিএম হায়দার বীর উত্তম নিহত হন।’

নাজমুল হুদা বীরবিক্রমকে হত্যার ৪৮ বছর পর মামলা, 'জিয়ার নির্দেশে হত্যার' অভিযোগ
মামলাটি দায়ের করেন খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি, তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত আবু তাহেরের নির্দেশে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈন্যরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) ও মেজর মুক্তাদির (তৎকালীন ক্যাপ্টেন ও পরে পেট্রো বাংলার সাবেক চেয়ারম্যান) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আরও জানতে পারি, ১০ ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত) উল্লিখিত তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর বেয়নেট চার্জ করে।’

বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই আমি আমার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার বিচার দাবি করছি। হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট তদন্ত করে অনতিবিলম্বে দোষীদের বিচার করা হোক।’

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি উৎপল কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের নির্দেশে কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমসহ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়– এই অভিযোগে নাজমুল হুদার মেয়ে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা মামলার অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখছি, তদন্ত করছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলছি।’