সদিচ্ছা থাকলে দেশ-সমাজ পাল্টে দেওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার সুমন
স্বকৃত নোমান (নীচে ডান দিকে, ইনসেটে)

সদিচ্ছা থাকলে দেশ-সমাজ পাল্টে দেওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার সুমন

স্বকৃত নোমান: ব্যারিস্টার সুমনকে পছন্দ করতাম না। ফেসবুকে তার কোনো ভিডিও কিংবা কোনো নিউজ এলে এড়িয়ে যেতাম। হঠাৎ একদিন মনে হলো, আচ্ছা, লোকটাকে কেন অপছন্দ করি? অনেক অনুসন্ধান করেও কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। আমরা আসলে কোনো কারণ ছাড়াই অনেক মানুষকে অপছন্দ করি। যেমন অনেকে আমাকে করেন। আমাকে অপছন্দ করার অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু অনেকে কারণ ছাড়াই করেন।

একবার একজন প্রসঙ্গক্রমে বললেন, ‘আপনি এই কাজটি ভালো করছেন, দেখে ভালো লাগছে। আপনাকে আমি আগে পছন্দ করতাম না।’ জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন আমাকে অপছন্দ করতেন?’ বলেছিলেন, ‘কোনো কারণ ছিল না, এমনি।’ আরেকবার একজন বললেন, ‘আপনার উপন্যাসটা ভালো লেগেছে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে পছন্দ করি না।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন পছন্দ করেন না? তিনি বললেন, ‘আপনি ভ্রমণে গেলে ফেসবুকে খালি ছবি পোস্ট দেন, সে-কারণে অপছন্দ করি। ফেসবুকে আনফলো করে রেখেছি।’ একবার একজন বললেন, ‘আপনার লেখাজোখা খারাপ না, কিন্তু আপনাকে পছন্দ হয় না।’ বললাম, ‘পছন্দ না হওয়ার কারণ?’ বললেন, ‘আপনার নামটি অদ্ভুৎ। স্বকৃত কোনো নাম হলো?’

কয়েক বছর আগে এক লোক ম্যাসেঞ্জারে লিখলেন, ‘স্বকৃত স্বীকৃত নাস্তিক।’ আমি লিখলাম, ‘আমি যে নাস্তিক, সেই ব্যাপারে আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা?’ তিনি সরলভাবে বললেন, ‘না’। বললাম, ‘আমি নাস্তিক হয়ে আপনার কোনো ক্ষতি করেছি কিনা? তিনি বললেন, ‘না।’ সঙ্গে সঙ্গে আবার লিখলেন, ‘স্যার, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ আমি বললাম, ‘স্যার নয়, ভাই। বলুন, নোমান ভাই।’ তারপর তিনি আমার সঙ্গে একদিন দেখা করলেন। অনেক কথাবার্তা হলো। এখন তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক।

এরকম অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমার প্রসঙ্গ থাক, ব্যারিস্টার সুমনের কথা বলি। একদিন তাঁর সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হলো। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ। নিরন্তর তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন জনকল্যাণে। কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি করে যাচ্ছেন জনসেবা। অবাক করা ঘটনা হচ্ছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি নির্মাণ করেছেন পঁয়তাল্লিশটি ব্রিজ। এই বর্ষায় গ্রামে গ্রামে বিতরণ করছেন গাছের চারা। স্লোগান দিচ্ছেন, ‘গাছ লাগাও, দেশ বাঁচাও।’ গাছ না থাকলে যে দেশ বাঁচবে না, রাজনীতিকরা না বুঝলেও তিনি ঠিক বুঝতে পেরেছেন।

যুবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই, তা তিনি জানেন। তাই নিজের নামে গড়ে তুলেছেন ফুটবল একাডেমি। ফুটবলের পুনর্জাগরণে রাখছেন অনন্য ভূমিকা। কেবল দেশে নয়, তার ফুটবল টিম খেলেছে ভারতেও। এটাও এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব। কেবল নাচ-গান-নাটক-সিনেমা সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়। যুবসমাজকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমুখী করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত রাখাও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

যেখানে দুর্নীতি-অনিয়ম, সেখানেই হাজির হয়ে যান ব্যরিস্টার সুমন। ফেসবুক লাইভে এসে সৃষ্টি করেন জনসচেতনতা। তিনি যেখানেই যান সেখানেই জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে। এ এক অভাবনীয় ব্যাপার। জনসেবার সদিচ্ছা থাকলে দেশকে, সমাজকে কতটা পাল্টে দেওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার সুমন। তাঁর ইতিবাচক কাজের শেষ নেই। একটার পর একটা করেই যাচ্ছেন।

জনসেবার সদিচ্ছা থাকলে দেশ-সমাজ পাল্টে দেওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার সুমন

দেশব্যাপী জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁর যে জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে এবং ক্রমাগত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে যে তিনি আরও উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর কাছে প্রত্যাশা, দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রেও তিনি কাজ করবেন। সাংস্কৃতিক শূন্যতায় আমাদের যুবসমাজের বোধ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারা বুঝতেই পারছে না একটি জাতির জন্য সংস্কৃতি কতটা জরুরি। এই জায়গাটাতেও তাঁর কাজ করার আছে বলে মনে করি। আশা করি তিনি তা করবেন।

আমরা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে পারি না। প্রশংসায় আমাদের খুব কুণ্ঠা। যেন প্রশংসা করলে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। ব্যরিস্টার সুমন, অকুণ্ঠ চিত্তে আমি আপনার প্রশংসা করছি। আপনার মতো আরও এক শ মানুষ তৈরি হোক এই দেশে। আপনি এগিয়ে যান আপনার গন্তব্যের দিকে। আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা।

লেখক- কথা সাহিত্যিক।