চাকুরীর প্রাপ্যতা, অব্যাহতি, চূড়ান্ত পাওনা গ্রহণের অধিকার

চাকুরীর প্রাপ্যতা, অব্যাহতি, চূড়ান্ত পাওনা গ্রহণের অধিকার

মো. আবু হোরায়রা চৌধুরী: সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক বাংলাদেশী স্বতঃসিদ্ধভাবে কতিপয় মৌলিক অধিকারের মালিক। দেশের সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক বাংলাদেশীর মৌলিক অধিকার ১৮টি।

সংবিধান অনুযায়ী ১৮টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা। আবার জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে সংবিধানে। নাগরিকের চাকরির প্রাপ্যতা, অব্যাহতি, চূড়ান্ত পাওনা ইত্যাদি অধিকার নিয়ে সংবিধান ও প্রচলিত আইনের বিধিবিধান নিম্নে উল্লেখ করা হল-

১. বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় ও মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ২৮(২) রাষ্ট্র গণজীবনের সর্বস্তরে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। অনুচ্ছেদ ২৯(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।

২.বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায় ও রাষ্ট্র পরিচালনা মূলনীতি ২০(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য সম্মানের বিষয়। রাষ্ট্র সকল ব্যক্তির জন্য বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টি করবে।

৩. বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় ও মৌলিক অধিকারের ৩৪(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জোরপূর্বক শ্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তথাপি চাকরি হতে অব্যাহতি অধিকার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়ের করা যাবে।

৪. শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী কোন স্থায়ী শ্রমিক ৬০ দিনের লিখিত নোটিশ প্রধান পূর্বক চাকরিতে ইস্তফা দিতে পারবেন অন্যতায় উক্ত আইনের ৪ (খ)ধারা অনুযায়ী মালিক পক্ষ কে ক্ষতিপূরণ দিবে যা আমার মক্কেল তাহার শেষ সুবিধার সাথে সমন্বয় করেছে।

৫. শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩১ ধারায় বলা আছে সাময়িক ও বদলি শ্রমিক ব্যতীত অন্য কোন শ্রমিক তাহার ছাঁটাই’ ডিসচার্জ’ বরখাস্ত’ অপসারণ অবসর গ্রহণ বা চাকুরী অবসানের সময় মালিকের নিকট হইতে চাকুরী সংক্রান্ত একটি প্রত্যয়ন পত্র পাওয়ার অধিকারী হইবেন।

৬. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী গন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ হইতে ০৪ মে ২০০৫ তারিখে প্রকাশিত বিআরপিডি সার্কুলার নং ০৬ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৫ তারিখে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হইতে এফআইডি সার্কুলার নম্বর-০৯ অনুসারেঃ

  • যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম অনিষ্পন্ন অবস্থায় না থাকে তবে সংশ্লিষ্ট পদত্যাগকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদত্যাগপত্র দাখিলের ০৭ দিনের মধ্যে এবং আর্থিক দায়দেনা যদি থাকে সমন্বয় হওয়া সাপেক্ষে তিনি অব্যাহতিপ্রাপ্ত হবেন।
  • যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কেস বিচারাধীন থাকে সে ক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে চাকুরী বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি যোগ্য হবে।
  • যদি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থ আত্মসাৎ ‘দুর্নীতি’ জাল-জালিয়াতির’ নৈতিক স্খলনজনিত কারণে চাকরি হইতে বরখাস্ত হন তাহলে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ১১(৪ ক) ধারা মোতাবেক তিনি পরবর্তী কোন ব্যাংক কোম্পানির চাকুরীতে নিয়োগের অযোগ্য হবেন।

৭. শ্রম আইন ২০০৬ ধারা ২৯ মতে যদি কোন শ্রমিকের কোন ভবিষ্যৎ তহবিলের সদস্য হন এবং তহবিলের বিধি অনুযায়ী তিনি মালিকের চাঁদা সহ উক্ত তহবিল হইতে কোন সুবিধা প্রাপ্য হন, তাহা হইলে তাহার ছাটাই ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অবসর গ্রহণ, অপসারণ বা চাকরি অবসান হওয়ার কারণে উক্ত সুবিধা হইতে তাহাকে বঞ্চিত করা যাইবে না।

৮. শ্রম আইন ২০০৬ ধারা ৩০ মতে অবসর,ডিসচার্জ বরখাস্ত এবং চাকরি অবসান ইত্যাদি যে কোনো কারণে শ্রমিকের চাকুরি ইতি ঘটার পরবর্তী সর্বোচ্চ ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে নিয়োগ কারী কর্তৃপক্ষ উক্ত শ্রমিকের প্রাপ্য সকল পাওনা পরিশোধ করিতে হইবে।

সংবিধান নাগরিকের শুধু মৌলিক অধিকারের বর্ণনা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তা বলবৎ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। সংবিধানের তৃতীয় ভাগ ‘মৌলিক অধিকার’-এর শুরুতেই ২৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না। আর যদি করা হয়, তবে তা স্বতঃসিদ্ধভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী পূর্বেকার সকল আইন সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। এছাড়া সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ১০২ অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগকে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার এখতিয়ার দিয়েছে।

লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট।