বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার্থীদের জন্য ৭ পরামর্শ
অ্যাডভোকেট মো. আরিফুর রহমান

বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার্থীদের জন্য ৭ পরামর্শ

মো. আরিফুর রহমান: বার কাউন্সিল পরীক্ষার্থীদের জন্য আইনজীবী হওয়া এখন স্বপ্ন। বর্তমান সময়ে আইন পেশা ক্রমেই স্বপ্নের পেশায় রুপান্তরিত হয়েছে, আর আপনার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে প্রথমেই প্রয়োজন কঠিন মনোবল ও অধ্যবসায়।

সিদ্ধান্ত নিলেন বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। আপনি প্রথমেই একধাপ এগিয়ে এর সাথে নিয়মিত অধ্যবসায় চালিয়ে গেলে, আপনি শতভাগ উত্তীর্ণ হবেন এটা নিশ্চিত। মনে রাখবেন পরিশ্রম আর মেধা কখনো বিশ্বাস ঘাতকতা করে না; তবে শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। একদিনও বন্ধ দেওয়া যাবে না।

আমার দেখা- ২০২৩ সালে যারাই উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই কঠিন পরিশ্রম করেছেন আর যারা পরীক্ষার তারিখ দিলে পড়তে বসবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা গুরুত্ব দেননি কিংবা নিজেকে রথি-মহারথী ভেবেছেন তারাই অকৃতকার্য হয়েছেন।

মনে রাখা প্রয়োজন, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাজারে অসংখ্য গুরু রয়েছেন, ফলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। যথার্থ শিক্ষক নির্বাচন কিংবা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আপনার সফলতায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

সহপাঠী সম্পর্কে সতর্কতা

কিছু সহপাঠী পাবেন যারা বলবে এই বছর আর পরীক্ষা হবে না বা পরীক্ষা এক বছর পরে হবে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে কারণ তারা নিজের যেমন ভালো করতে পারে না তেমনি অন্যের ও কোন উপকারে আসে না; বরং তারা পড়াশোনার অন্তরায় হিসাবে কাজ করে। আপনি এমনভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন যেন কাল পরীক্ষা হলে কালই পরীক্ষায় বসবেন আর একজনও যদি উত্তীর্ণ হয় এই একজনটা হবেন আপনি। এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে সফলতা অনিবার্য।

পরীক্ষা সম্পর্কিত তথ্য

পরীক্ষা সম্পর্কিত তথ্য জানতে হলে বার কাউন্সিলের নোটিশ কিংবা এটর্নি জেনারেল এর বক্তব্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অন্যান্য তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন মহল কাজ করে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন

পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মনে রখবেন, মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। এক বই শেষ করে আরেক বই পড়তে যাওয়ার আগে অবশ্যই পূর্বের বইটি ভালো করে রিভিশন করতে হবে। যদি দুটি বই শেষ হয়, তাহলে তৃতীয় বই পড়ার আগে পূর্বের দুটি বই রিভিশন দিতে হবে। এইভাবে সাতটি বই সমাপ্ত করতে হবে। তবে রিভিশনের ক্ষেত্রে “গ্রুপ স্টাডি” বিশেষ ভূমিকা রাখে। তিন জন বন্ধু নিয়ে একটি গ্রুপ করুন। সকালে যা পড়বেন বিকালে তিন বন্ধু মিলে রিভিশন দেবেন। এতে যেমন ভালো রিভিশন হবে, সেই সাথে ঘটবে তথ্যের আদান-প্রদান আর আপনি হবেন তথ্যে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ।

তিন ধাপের পরীক্ষায় কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ

প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইবা প্রতিটি ধাপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোন একটা ধাপে আটকে যাওয়া মানে আইনজীবী হওয়ার বাসনা থেকে অনেকটা পেছনে চলে যাওয়া।

উত্তীর্ণ হতে লক্ষমাত্রা কত হওয়া চাই

অনেকেই বলে পঞ্চাশ পেলেইতো পাশ। প্রিলিতে ৫০ পেয়ে পাশ করলেই হল। ধরি এই ধারণা নিয়ে পড়লেন এবং পাশ করলেন দেখবেন দ্বিতীয় ধাপে আটকে গেছেন, অর্থাৎ প্রিলি পরীক্ষায় যদি ভালো প্রস্তুতি না হয়; তাহলে রিটেন পরীক্ষা অতিক্রম করা বর্তমান সময়ে বেশ কঠিন তাই প্রিলি পরীক্ষায় চরম এবং চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।

লক্ষমাত্রা (৫০) নয় বরং সর্বোচ্চ হতে হবে। প্রিলিতে ভালো প্রস্তুতি মানে রিটেন, ভাইবা পরীক্ষায় এগিয়ে যাওয়া। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি ধাপেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে; তবেই আইনজীবী হওয়ার মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

ফ্রি ক্লাস!

অনেকেই পাবেন যারা অনলাইনে ফ্রি ক্লাস করায়, বাস্তবতা হচ্ছে ফ্রি বলতে কোন কিছুই হয় না। চটকদার বিজ্ঞাপন আর অল্প সময়ের অভিনয় পড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়াবে, কিন্তু জ্ঞান অর্জন হবে না। যখনই ফ্রি স্যারের কাছে সরাসরি পড়তে চাইবেন তখনই দেখবেন টাকা পয়সা নিয়ে দর কষাকষি হবে। পড়তে হলে অবশ্যই ফি দিতে হবে। যদি যথার্থ গুরু হয়, মনে রাখবেন গুরুদক্ষিণা ছাড়া কখনো যথার্থ জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।

আবার অনেকে বলবে অল্প পড়ে পাশ করা যায় কিংবা আগে পাশ করুণ তার পর জ্ঞান অর্জন করুণ এসব ডাহা মিথ্যা কথা। আইনে যথাযথ জ্ঞান অর্জন ছাড়া এখন উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়, যদি কম পড়েই পাশ করা যেতো তবে ২০২৩ সালে যারা আইনজীবী হয়েছেন তারা প্রায় ১২% পাশ করতেন না। এর বেশি হওয়ার কথা ছিল। তার মানে এই নয় সব পড়ে ফেলার কথা বলছি বরং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পড়া আপনাকে আবশ্যই পড়তে হবে। মনে রাখবেন আপনি আইনজীবী হতে যাচ্ছেন, আপনার নামের আগে বিজ্ঞ যুক্ত হবে। ফলে পরীক্ষার আগে আইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জনে ক্ষতি কি।

সাপলুডু খেলা!

মনে রাখা ভালো, সাপলুডু খেলায় সাপের মুখে পড়লে যেমন নিচে নেমে যেতে হয়; তেমনি বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষায় দুইবার অকৃতকার্য হলে আবার প্রথম থেকে অর্থাৎ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে হবে। ফলে সাপের মুখ নয় বরং মই এর সন্ধান করা উচিত যেন এক লাফে তিন ধাপ পার হতে পারেন।

লেখক: অ্যাডভোকেট; জজ কোর্ট, সিলেট।