ব্যাংকের কোটি টাকা শোধে মোস্তফা গ্রুপের পরিচালকদের জামিন
চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত (ছবি: সংগৃহীত)

মাহিন গ্রুপের কর্ণধারকে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

ঋণ নিয়ে বিদেশে পলাতক

ঋণ নিয়ে কানাডায় পলাতক চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপি মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আশিকুর রহমান লস্করকে ৩০ দিনের মধ্যে এক হাজার ১২৫ কোটি পরিশোধের সময় বেধে দিয়েছে আদালত।

আরব বাংলাদেশ ব্যাংক (এবি ব্যাংক) লিমিটেডের দায়ের করা একটি মামলায় একতরফা রায় দিয়ে আদালত ঋণ পরিশোধ ছাড়াও কানাডা থেকে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবেদন নাকচ করে দেয়।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান গতকাল রোববার (৮ অক্টোবর) এই রায় দেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে একতরফা রায় ঘোষণা করেন। বিবাদী কানাডা থেকে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলেও আদালত তাদের সেই সুযোগ দেননি।’

মামলার আদেশে বলা হয়, মামলায় বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে এক হাজার ১২৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৭০ টাকার ডিক্রি দেয়া হয়। বিবাদীদের রায়ের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিক্রিকৃত টাকা বাদী ব্যাংকের অনুকূলে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া গেল।

রায় বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৫০(২) ধারা অনুযায়ী সুদসহ বাদী পক্ষ আইনগত পদ্ধতিতে ডিক্রিকৃত টাকা বিবাদীপক্ষ থেকে আদায় করতে পারবে।

নাগরিকদের আমানতের টাকা আদায় করার জন্য বিবাদীদের কানাডা থেকে দেশে ফেরত আনার কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আদেশের কপি সিনিয়র সচিব, অর্থবিভাগ, সিনিয়র সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং এবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় শিপ ব্রেকিং খাতের ব্যবসায়ী মাহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিকুর রহমান লস্করের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জুন মাসে মামলাটি দায়ের করে এবি ব্যাংক লিমিটেড। মামলায় আশিকুর রহমান লস্করসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। অপর তিন আসামি হলেন এআরএল শিপব্রেকিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিউর রহমান লস্কর, শামসুন নাহার লস্কর ও রাবেয়া লস্কর।

ওই মামলায় বিবাদীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় একতরফা রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করে আদালত। বিবাদীপক্ষ আমমোক্তার নিয়োগ করে মামলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আবেদন করেন।

মামলা পরিচালনার জন্য আমমোক্তার নিয়োগের স্বপক্ষে ৪নং বিবাদী কোনো ন্যায়সংগত কারণ উল্লেখ করেননি। বিবাদী দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থতা কিংবা ব্যবসায় উপলক্ষে নিয়মিত বিদেশ গমনের কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি। ৪নং বিবাদীর সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হওয়ার কারণে ৪নং বিবাদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।

প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপী ঋণের দায় নিয়ে ৪নং বিবাদী সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করায় আমমোক্তারের মাধ্যমে এই মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতে পারে না। সার্বিক বিবেচনায় ৪নং বিবাদীর দরখাস্ত না মঞ্জুর করে আদালত।

প্রসঙ্গত, পাওনাদার ব্যাংক ও চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের তথ্যমতে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সর্বশেষ দেশত্যাগ করেছেন শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান লস্কর (মাহিন)। খেলাপি মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞার একদিন পর গত ৬ মার্চ সপরিবারে দেশের বাইরে পালিয়ে যান আলোচিত এই ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী।