আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ৩শ' বিচারক দিয়ে 'নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি' গঠন

নির্বাচনি অপরাধ দমনে শুক্রবার মাঠে নামছে ৬৫৩ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : আগামী রোববার (৭ জানুয়ারী) অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপরাধ দমনে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশে মাঠে নামছে প্রথম শ্রেণির ৬৫৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) মোঃ আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দেশের ৩০০ টি সংসদীয় আসনে মোট ৬৫৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে নির্বাচনি মাঠে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে নির্বাচনে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে মাঠে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের অভিপ্রায় অনুযায়ী ৬৫৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান মতে, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ পাওয়া বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ নির্বাচনের ২ দিন আগে, নির্বাচনের দিন ৭ জানুয়ারী এবং নির্বাচনের ২ দিন পর অর্থাৎ আগামী ৫ জানুয়ারী থেকে ৯ জানুয়ারী পর্যন্ত মোট ৫ দিন নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৮৯ এ তে উল্লেখিত ৭৩ (২বি), ৭৪(২এ), ৩, ৪, ৫, ৬ মতে ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২ অনুযায়ী ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ১৯০ এর (১) উপধারা মতে নির্বাচনী অপরাধ সমুহ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন।

নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া ৬৫৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের চাকরি উল্লেখিত সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অনুকূলে যানবাহন, সহায়ক স্টাফ, পুলিশ সহ আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নির্বাচনি মাঠে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের গত ১ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন থেকে ব্রিফিং/প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনে ৩০০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি (Electoral Enquiry Committee) গঠন করা হয়।

গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) মোঃ আবদুছ সালাম এক প্রজ্ঞাপনে জারী করে দেশের ৩০০ টি আসনের জন্য এসব কমিটি গঠন করেন। যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারকগণকে ইলেকট্টোরাল ইনকুয়ারী কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি “নির্বাচনী অপরাধ, নির্বাচনি আচরণবিধি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি বা পরিচালনায় বাঁধাগ্রস্ত বা ব্যাহত করে, এমন নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম” সংক্রান্ত বিষয় সমুহ অনুসন্ধানপূর্বক কমিশনের নিকট নিয়মিত প্রতিবেদন প্রেরণ করছেন।

প্রজ্ঞাপন জারীর সাথে সাথে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত বিজ্ঞ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ নিজ নিজ দপ্তর হতে অবমুক্ত হয়ে তাঁদের চাকরি আইন ও বিচার বিভাগ থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারকগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ন্যুনপক্ষে ৪৭ দিন নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনী অপরাধ সমুহ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করার জন্য নিয়োগ দেওয়া ৬৫৩ জন প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনরত ৩০০ জন কর্মকর্তা সহ মোট ৯৫৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন।