স্থায়ী হচ্ছে ‘দ্রুত বিচার আইন’

স্থায়ী হচ্ছে ‘দ্রুত বিচার আইন’

আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন)-২০২৪–এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মধ্য দিয়ে আইনটির মেয়াদ বারবার না বাড়িয়ে স্থায়ী হচ্ছে। আগে আইনটি বিভিন্ন মেয়াদ বাড়ানো হতো।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সভায় আইনের খসড়াটি নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকটি। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ যখন প্রথম জারি করা হয়, তখন এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরবর্তী সময়েও মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ৯ এপ্রিল। মন্ত্রিসভায় এটিকে স্থায়ীভাবে গ্রহণ করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন নতুন করে মেয়াদ বাড়াতে হবে না।

আইনটি স্থায়ী করার প্রেক্ষাপটটি কী, কেন এটি স্থায়ী করা হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে এই আইনটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজে লেগেছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে যা ছিল, সেই আইনটিই থাকবে। শুধু মেয়াদ বাড়াতে হবে না। একেবারে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত হলো।

শাস্তি ও বিচার হয় যেভাবে

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কোনো অপরাধ করলে তিনি অন্তত দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন৷

এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনকালে সরকার বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিসাধন করলে সে জন্য আদালত তা বিবেচনা করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে ওই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদেশ দিতে পারবেন এবং এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি দাবি হিসেবে আদায়যোগ্য হবে।

সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রতিটি জেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করতে পারবে। প্রজ্ঞাপনে প্রতিটি দ্রুত বিচার আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিতে পারবে। সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে এই আদালতের বিচারক নিযুক্ত করবে।

বিচারপদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যায় ২২–তে বর্ণিত পদ্ধতি, যত দূর প্রযোজ্য হয়, তা অনুসরণ করবেন।

এ ছাড়া এই আইনের অধীন কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাতেনাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বা অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ধরা হয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে, পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক রিপোর্টসহ তাঁকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করবে।

পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অপরাধ সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট বা অভিযোগ পেশ করবে এবং আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে ওই রিপোর্ট বা অভিযোগ পাওয়ার তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করবেন৷

অভিযুক্ত ব্যক্তি হাতেনাতে ধরা না পড়লে, অপরাধ সংঘটনের পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৯(২) এর অধীন রিপোর্ট বা অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এই রিপোর্ট বা অভিযোগ দায়েরের পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে (ধারা ১১ এর বিধান সাপেক্ষে) আদালত বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন।

এ ছাড়া এই আইনের অধীন {(৪) উপধারা (২) ও (৩) এ যা কিছুই থাকুক না কেন} কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ধরা না হয়ে (উপধারা (২) এ উল্লিখিতভাবে) অন্য কোনোভাবে ধরা হলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, এই অপরাধের বিষয়ে, যত দ্রুত সম্ভব, রিপোর্ট বা অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এবং আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে এই রির্পোট বা অভিযোগ পাওয়ার তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন।