সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এসিল্যান্ড ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক ব্যক্তিকে দুই মাসের কারাদণ্ড ও একই পরিবারের অন্য দুজনের বিরুদ্ধে এখতিয়ার বহির্ভূত ব্যবস্থা নেয়ায় বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়েছেন আবেদনকারী।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বগুড়ার শেরপুর নিবাসী মো. তৌহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের পক্ষে রোববার (৩১ জানুয়ারি) আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন। আইনজীবী শিশির নিজেই রিটের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ।
রিটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি), রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি), রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল আলম, রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসিল্যান্ড) ও রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আবেদনকারীর ডেইরি ফার্মে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ড সুবির কুমার দাসের সঙ্গে আবেদনকারীর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছোট ভাই আহসান হাবিবের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে আবেদনকারীর আরেক ছোট ভাই একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক তারিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু মীমাংসার এক ঘণ্টা পর এসিল্যান্ড রায়গঞ্জ থানার ১০ পুলিশ সদস্যকে আবেদনকারীর শেরপুরের বাড়িতে পাঠান। পুলিশ সদস্যরা ওই ঘটনা সংক্রান্ত খোঁজ-খবর নেন। তারা আহসান হাবিবকে থানায় গিয়ে এসিল্যান্ডের কাছে পুনরায় দুঃখিত হওয়ার জন্য বলেন।
আহসান থানায় যাবেন বলে তাদের জানান। কিন্তু পুলিশ স্থান ত্যাগ করার সময় আবেদনকারীর বাসায় অবস্থানরত আরেক ছোট ভাই আরিফুল ইসলামকে ধরে থানায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে উপজেলায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এসিল্যান্ড আরিফুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন।
একই দিন এসিল্যান্ডের নির্দেশে আবেদনকারীর ভাই তারিকুল ইসলামকে বেদম মারধর করা হয়। সেদিনই রায়গঞ্জ উপজেলার ইউএনও তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রংপুর কারমাইকেল কলেজ, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের চিঠি পাঠান।
তিনি আরও একটি চিঠি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন এবং সভাপতি বরাবর পাঠান। ওই চিঠিতে তিনি আবেদনকারীর ছোট ভাই আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। মোবাইল কোর্টের আদেশের কপি পাঁচ দিনের মধ্যে সরবরাহ করার বিধান থাকলেও ২৩ দিন পর তার আদেশ দেন। ঘটনার দিন থেকেই আবেদনকারীর পরিবার প্রশাসনিক হুমকির শিকার হচ্ছেন।
ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আবেদনকারী এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক ব্যক্তিকে দুই মাসের কারাদণ্ড ও একই পরিবারের অন্য দুজনের বিরুদ্ধে এখতিয়ারবহির্ভূত ব্যবস্থা নেয়ায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। ওই নোটিশের পরে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
রিটে ঘটনাসমূহের বিচারবিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি আবেদনকারী পরিবারের নিরাপত্তাও চেয়েছেন। দ্রুততম সময়ে আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে আশা করেন রিটের পক্ষের আইনজীবী।