অর্পিত সম্পত্তির মামলায় মূল মালিকদের ক্ষতিপূরণসহ হাইকোর্টের দেয়া রায়ের কয়েকটি মতামত ও নির্দেশনা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ কর্তৃক ঘোষিত রায়ের ৩৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পেয়েছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, বিচারপতি বোরহানউদ্দিন এবং বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম।
আজ শনিবার (২০ আগস্ট) আপিলকারীর পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায় অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্তি বে-আইনি। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কোনো প্রচেষ্টাও বেআইনি হবে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়া জনগণের উন্নতির জন্য সরকার অপ্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তি উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে বলেও মত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর অর্পিত সম্পত্তি আইন চালেঞ্জ করে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবদুল হাই জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের দায়ের করলে আদালত রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে মতামত ও নির্দেশনা দেন।
হাইকোর্টের মতামত ও নির্দেশনায় বলা হয় –
- ভবিষ্যতে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা যাবে না,
- প্রতিটি জেলায় সম্পত্তি অর্পিত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা,
- প্রতি জেলায় আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় মামলা নিষ্পত্তি করা,
- মামলা ফাইলের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রয়োগ করা,
- ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় নির্দিষ্ট সময় বাস্তবায়ন করা,
- সরকারের দখলে থাকা দাবিহীন অর্পিত সম্পত্তি মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা,
- প্রয়োজনীয় আইন করে যে সম্পত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর নামকরণে মূল মালিককে অন্তর্ভুক্ত করা এবং
- যেসব অর্পিত সম্পত্তি অপ্রত্যর্পণযোগ্য সেই ক্ষেত্রে মালিককে আইন করে ক্ষতিপূরণ দেয়া।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় আপিল দায়ের করে এবং শুনানি শেষে গত ২ জুন আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেন, ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে প্রণীত আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠন, নির্দিষ্ট সময় মামলা নিস্পত্তি, তামাদি আইন প্রয়োগ, ডিক্রি বাস্তবায়ন, আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন, অর্পিত সম্পত্তি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধানগুলি আছে।
রায়ে বলা হয়, আদালত কোনও আইন করার বিষয়ে ম্যানডামাস ইস্যু করতে পারে না, সরকারের নিকট ন্যাস্ত সম্পত্তির বিষয় সরকারের উপর আইন করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
আদালত রায়ে আরও বলেন, ভবিষ্যতে আর কোনও সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত না করার বিষয়ক নির্দেশনা নিরর্থক। কারণ আপিল বিভাগ ইতিপূর্বে দেওয়া রায়ে ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্তি বে-আইনি ঘোষণা করেছে।
আদালতে আপিলকারী ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাভোকেট মনজিল মোরসেদ। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাভোকেট মো. ইমতিয়াজ ফারুক। অন্যদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
রায় প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কারণ যদি মূল মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো তাহলে হাজার হাজার একর অর্পিত সম্পত্তি যা সরকারের দখলে আছে সেসব সম্পত্তির মূল্য বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ পরিশোধ করতে হতো।