বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাভোগ করেন মো. জালাল ওরফে জজ মিয়া। সেই ঘটনায় আলোচিত জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে।
আজ সোমবার সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে অনুমতি নিয়ে জজ মিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবীর পল্লব এ রিট দায়ের করেন।
রিটে জজ মিয়াকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতকারীদের খুঁজে বের করতে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক, মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), নোয়াখালীর সেনবাগ থানার ওসি, পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), তৎকালীন আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, তৎকালীন এএসপি আব্দুর রশিদ, তৎকালীন এএসপি মুনশি আতিকুর রহমান এবং তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বেআইনিভাবে জজ মিয়াকে কারাবাসে রাখার জন্য লুৎফজ্জামান বাবর, খোদা বকশ চৌধুরী, আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা ব্যক্তির দায় আছে কি না, তা নিরূপণে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
জজ মিয়ার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় লুৎফজ্জামান বাবর, খোদা বকশ চৌধুরী, আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন বা অন্য কোনো ব্যক্তি দায়ী হলে তাঁদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে তাদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা আদালতে দাখিল করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ১১ আগস্ট লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের পরও জজ মিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ রিট দায়ের করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সালের এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৫ সালের জুনে জজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় তাঁকে জজ মিয়া সাজিয়ে কারাবাসে কনডেম সেলে রাখা হয়। ২০০৯ সালের জুনে তিনি মুক্তি পান। কোনো দোষ ছাড়াই তাঁকে প্রায় চার বছর কারাগারে রাখা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলের নেতা-কর্মীসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মী।
শুরু থেকেই এ গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়। নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় মো. জালালকে। তাঁকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে রেখে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয় যা পরবর্তীতে তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট জজ মিয়াকে সকল আইনি সহায়তা প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সমন্বয়কারী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার।