রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশে প্রদর্শন না করার নির্দেশ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেনুর মিয়ার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার (১০ এপ্রিল) এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের ধারাবাহিকতায় রিট পিটিশন নম্বর-১৮৮৯/২০২৩ এর পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, ভারতে নির্মিত ‘ফারাজ’ চলচ্চিত্রটি নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, অন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং টেলিভিশন চ্যানেলে ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে নির্মিত ‘ফারাজ’ সিনেমাটি বাংলাদেশের সব অনলাইন পোর্টাল, ই-পত্রিকা, পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ও টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এর আগে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ‘ফারাজ’ সিনেমা অ্যামাজন ও নেটফ্লিক্সসহ সব ধরনের অনলাইন প্লাটফর্মে প্রচার ও প্রদর্শন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে এক রিটের শুনানি নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
‘ফারাজ’ প্রচার ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশের সিনেমা হল ও সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন হলি আর্টিসানের ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।
তার পক্ষে এ রিট দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান। রিটে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ আইজি ও বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ফারাজ যাতে দেশের প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়া হয়, সেই দাবি করে আসছেন ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।
তিনি দাবি করেন, এই সিনেমাটি বাস্তব ঘটনায় নির্মিত, তাই মুক্তির আগে নিহত সদস্যদের পরিবারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুন : অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘ফারাজ’ প্রচার ও প্রদর্শনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
অবিন্তা কবিরের মা বলেন, ‘প্রতিটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ গবেষণা করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ আছে। এ সিনেমা মুক্তির পর নিহতরা হয়তো নেতিবাচকভাবে সবার সামনে উপস্থাপিত হবেন। সর্বোপরি ফারাজ বাংলাদেশের মানসম্মান ক্ষুণ্ন করবে।
রিট করা হয়েছিল ভারতেও
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের ১০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ফারাজ। হংসল মেহতা পরিচালিত সিনেমাটি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। এরপর সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সিনেমা মুক্তির স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে রিট করা হয়। ফারাজ সিনেমার মুক্তির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করেছেন ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট।
তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন, ছবিটি পর্দায় দেখানোর সময় এই মর্মে একটি ‘ডিসক্লেইমার’ দিতে হবে যে, সিনেমাটি হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও এতে তুলে ধরা ঘটনাগুলো ‘সম্পূর্ণ কাল্পনিক’ (পিওর ওয়ার্ক অব ফিকশন)।
হলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের অন্যতম অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তার নিহত মেয়ের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে, পরিবারের কোনো সম্মতি না নিয়ে ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এই ফারাজ সিনেমা বানানো হচ্ছে।
সিনেমার মুক্তি আটকাতে তিনি ভারতের আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি হাইকোর্টের একক বিচারপতির বেঞ্চ ফারাজ সিনেমার মুক্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন।
সিনেমাটিতে ফারাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কারিনা কাপুরের চাচাতো ভাই জাহান কাপুর। পরেশ রাওয়ালের ছেলে আদিত্য রাওয়াল এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এটি তাদের অভিষেক চলচ্চিত্র। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমির আলী, জুহি বব্বর, শচিন লালওয়ানি, পলক লালওয়ানি ও রেশম সাহানিসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবিরসহ ২০ জন।