‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে অন্যের মালিকানার জমি কেউ নিজের বলে দাবি করছে এমন প্রমাণ পেলে সাত বছরের কারাদণ্ড, আর অন্য কারও জমি ষড়যন্ত্র করে নিজের নামে নেওয়া হয়েছে এমন প্রমাণ মিললে দুই বছরের কারদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৯ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে ভূমির কতগুলো অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যাতে করে নাগরিকেরা নিজ-নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগ-দখলের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।’
‘আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা এবং প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। সরকারি এবং সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও দমনে ব্যবস্থা নেওয়া।’
শাস্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের মালিকানাধীন ভূমি হিসেবে প্রকাশ করা, কোনো ভূমি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে তা অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, নিজ মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বলে ভান করে বা জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করে কিংবা কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি, সেই ব্যক্তি থেকে ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ- এসব কাজ করলে সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
খসড়ায় জালিয়াতি সংক্রান্ত বিষয়ে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ঠ সাধন করার বা অন্য কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করার অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার ইচ্ছায় কিংবা প্রতারণা করা যেতে পারে- এমন মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ, কোনো দলিল সম্পাদিত হবার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কর্তন করে বা অন্য কোনভাবে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করা ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূমি অবৈধ দখল করলে দুই বছর, সরকারি স্বার্থযুক্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট, শ্রেণী পরিবর্তন করলে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া আইনানুগ কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে কোনো আইন প্রয়োগে বাধা দিলে দুই বছর, অপরাধ সংগঠন বা সহায়তা করা বা প্ররোচনা করলেও একই পরিমাণ সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
তবে খসড়ায় আর্থিক জরিমানার দণ্ড রাখা হয়নি বলেও জানান তিনি।
ভূমি অফিসের কর্মকর্তারাও ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের জড়িত থাকলে সহযোগী হিসেবে একই পরিমাণ শাস্তি দেওয়া যাবে। এখানে বলা হয়নি সরকারি কর্মকর্তা হলে তিনি শাস্তি পাবেন না।
বিদেশে থাকা অবস্থায় কারো জমি ভোগদখল করলে সেটি আইনে বিচারের মধ্যে রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমন হলে এখন এই আইন প্রয়োগ করে আপনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ আদালতের বাইরে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
প্রসঙ্গত, ‘দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কেউ যত বছরই জোর করে কোনো জমি দখল করে রাখুক না কেন উপযুক্ত দলিল ছাড়া তিনি কখনই মালিকানার স্বীকৃতি পাবেন না। এই আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।