ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

আইনানুযায়ী মামলা তদন্তের এখতিয়ার রয়েছে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের

 

মো: পিজুয়ার হোসেন:

সম্প্রতি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের একজন অভিযুক্ত আসামীর সাথে তদন্তকালীন সময়ে কথোপকথনের বিষয়ে এক বিশাল বিতর্ক উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্তসংস্থা এই বিষয়ে তাকে অভিযুক্ত করে গণমাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের কারো কারো দাবি অনুযায়ী প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের আইন অনুযায়ী এই এখতিয়ার নেই এবং যদি তিনি কোন অভিযুক্ত আসামীর সাথে কথোপকথন করেন তবে তা অনৈতিক।

আসুন আমরা দেখি ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে এই বিষয়ে কি বলা আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৮(২) ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে- “Any person appointed as a Prosecutor is competent to act as an Investigation Officer and the provisions relating to investigation shall apply to such Prosecutor.” অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে যদি কাউকে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তবে তার একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার দক্ষতা আছে বলেই ধরে নেয়া হবে এবং ঐ আইনে তদন্ত করার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া বর্নিত আছে সবই ঐ প্রসিকিউটরের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য হবে।

যেহেতু প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে ২০১৩ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সেহেতু ট্রাইবুনালের আইন অনুযায়ী তিনি তদন্ত করবার দক্ষতা রাখেন। সুতরাং তদন্ত সংস্থায় নথিভুক্ত যেকোন অভিযুক্ত আসামীর ব্যাপারে তদন্ত করবার এখতিয়ার প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের আছে। অতএব, যারা প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের তদন্ত করবার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা আইন না জেনেই প্রশ্ন তুলেছেন।

এবারে আসি পরের প্রশ্নে- তদন্তকালে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ কোন অভিযুক্ত আসামীর সাথে তদন্তের স্বার্থে দেখা করতে বা কথা বলতে পারেন কিনা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৮(৪) ধারা প্রযোজ্য হবে যেখানে বলা আছে- “Any Investigation Officer making an investigation under this Act may examine orally any person who appears to be acquainted with the facts and circumstances of the case.” অর্থাৎ একজন তদন্ত কর্মকর্তা (এক্ষেত্রে একজন প্রসিকিউটর) তার তদন্তকালীন সময়ে অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল যেকোন ব্যক্তিকে মৌখিকভাবে কথাবার্তা বলে ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই করবার অধিকার রাখেন।

তাহলে, প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ কোন অভিযুক্ত আসামীর ব্যাপারে তদন্তকালীন সময়ে তার সাথে মৌখিক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতেই পারেন। আইন তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। বিষয়টি কোনভাবেই অনৈতিক বলে বিবেচ্য হতে পারে না।

এখানে উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের কোথাও নেই যে কি উপায়ে বা কি কৌশলে এই মৌখিক আলাপচারিতা হতে পারে। একেকটি অভিযোগ তদন্ত করার একেক কৌশল থাকে। একজন তদন্ত কর্মকর্তা বা একজন প্রসিকিউটর যিনি দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আইন অনুযায়ী স্বীকৃত, তিনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন কিভাবে বা কি কৌশলে তিনি তদন্তের দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে হ্যা, নৈতিকতার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন পরিলক্ষিত হবে যে একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত প্রসিকিউটর কোন অভিযুক্ত আসামীর কাছে এই আলাপচারিতার মাধ্যমে কোন অভিযুক্ত আসামীর কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেছেন বা বিশেষ কোন সুবিধা আদায়ে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন কি-না। গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের যে অডিওর কথা আমরা জানতে পেরেছি তাতে কোন অভিযুক্ত আসামীর সাথে তার কথোপকথনের মধ্যে যদি এ ধরনের কোন সুযোগসুবিধা বা ঘুষ দাবির কথা আমরা জানতে পারি, তবে নিশ্চয়ই তিনি একটি অনৈতিক কাজ করেছেন বলে আমরা ধরে নিব। আর যদি তা প্রতীয়মান না হয় তাহলে আমরা কিছুতেই বলতে পারি না যে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ তদন্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কোনভাবে নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন।

পুরো ব্যাপারটিই যেহেতু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন সেহেতু আমরা অপেক্ষা করে থাকবো যে প্রকৃত সত্য যেন প্রতিষ্ঠিত হয়।

লেখক: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক।