অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম

প্রসঙ্গ দেওয়ানী মোকদ্দমা ও ফৌজদারী মামলা এবং প্রধান পার্থক্যসমূহ

জাহিদুল ইসলাম : 

Civil suit & Criminal case অর্থাৎ দেওয়ানী মোকদ্দমা ও ফৌজদারী মামলা শব্দ দুইটা আমরা সাধারণত শুনে থাকি। দেওয়ানী ও ফৌজদারী শব্দ দুইটি নিয়ে আইনের নবাগত ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক আগ্রহও পরিলক্ষিত হয়। তাহলে জেনে নেয়া যাক দেওয়ানী মোকদ্দমা (Civil suit) ও ফৌজদারী মামলা (Criminal case) আসলে কি এবং এর প্রধান পার্থক্য।

প্রকৃতিগত বা ধরণের ভিন্নতার দিক থেকে মামলা প্রধানত দুই প্রকার।

🔫 ফৌজদারী/Criminal
🎁 দেওয়ানী / Civil

ফৌজদারী মামলা :
যে সকল মামলাসমূহ কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উৎপত্তি হয় তাই ফৌজদারী মামলা (Cases arising out of any offence are called criminal case.)। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিচারে প্রমান সাপেক্ষে শাস্তি প্রদান করা হয় অথবা অব্যাহতি বা খালাস দেয়া হয়।

যেমন: চুরি, খুন, ডাকাতি, দস্যুতা ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভুত মামলা হচ্ছে ফৌজদারি মামলা (Criminal case)।

দেওয়ানী মোকদ্দমা:
যেসকল মোকদ্দমার উদ্ভব হয় প্রধানত কোন সম্পত্তি ও পদের অধিকার বা অন্য কোন অধিকার থেকে তাকে দেওয়ানী মোকদ্দমা বলে ( Suits relating to the rights of the post & property are called civil suit.)।

যেমন: স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত মোকদ্দমা ( Recovery of possession of immovable & movable property.) , চাকরি ফিরে পাবার মোকদ্দমা, বিবাহ-বিচ্ছেদ, দাম্প্যত স্বত্ব উদ্ধারের অধিকার সম্পর্কিত মোকদ্দমা ইত্যাদি হচ্ছে দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা।

বিষয়টিকে আরেকটি উদাহরনের মাধ্যমে আরও সহজ করা যাক। পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার বাসিন্দা ছালেম ও শিহাব এর মধ্যে একটি জমির স্বত্ত বা মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শিহাব উক্ত জমি দখলে নেয়। ছালেম উক্ত জমি নিজ দখলে নিতে গিয়ে শিহাবকে উচ্ছেদ করে ও মারাত্মক অস্ত্র দ্বারা গুরুতরভাবে জখম করে। এখানে ছালেম ও শিহাব এর মধ্যে একটি জমির স্বত্ব বা মালিকানা নিয়ে যে বিবাদ তা থেকে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমার উৎপত্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে শিহাব ছালেমের বিরুদ্ধে সুনিদৃষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী স্বত্বসহ দখল পুনরুদ্ধার এর মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে দেওয়ানি আদালতে। অন্যদিকে শিহাবকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে ছালেম শিহাবকে মারাত্ম অস্ত্র দ্বারা গুরতর আঘাত করেছে বলে শিহাব সালেমের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩২৬ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারে ফৌজদারী আদালতে। এখানে একটি ব্যাপার দেখা গেল যে, দেওয়ানী বিষয়কে কেন্দ্র করে ফৌজদারী বিষয়ের উদ্ভব ঘটতে পারে।

প্রধান পার্থক্যসমূহ

  • ফৌজদারী মামলার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা। অন্যদিকে দেওয়ানী মোকদ্দমার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পক্ষদ্বয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা শাস্তি প্রদান নয়।
  • ফৌজদারী মামলায় শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হতে হয় ( Beyond reasonable doubt) অন্যদিকে দেওয়ানী মোকদ্দমার রায়, ডিক্রি প্রদানের ক্ষেত্র ভারসাম্যতার নীতি ( Balance of probability) অবলম্বন করা হয়।

উল্লেখ্য যে, ফৌজদারী এর ক্ষেত্রে বলা হয় মামলা (Case) এবং দেওয়ানী এর ক্ষেত্রে বলা হয় মোকদ্দমা (Suit)।

ফৌজদারী মামলার বিচার ফৌজদারী আদালতে এবং দেওয়ানী মোকদ্দমার বিচার দেওয়ানী আদালতে অনুষ্ঠিত হয়।

আইন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, বিশেষত আইনের নবীন শিক্ষার্থী ও জনসাধারনের মনে দেওয়ানী মোকদ্দমা ও ফৌজদারী মামলা নিয়ে যে প্রশ্নের উদ্ভব হয়, আশা করছি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তার উত্তর অনেকাংশেই তুলে ধরতে পেরেছি। ধন্যবাদ সকল পাঠককে।

লেখক : আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট