অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন

রূপালী ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল

বেল্লাল হোসাইন: 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রূপালী ব্যাংকের জন্য ৩৬টি লিগ্যাল অফিসার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সিনিয়র অফিসার অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর নবম গ্রেডে তারা নিয়োগ পাবে। অন্যান্য সাধারণ নিয়োগ পরীক্ষার চেয়ে বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষাগুলো ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আগে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে লিগ্যাল অফিসার  এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এক্স-ক্যাডার আইন) পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা ও নিজ পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।

সাধারণত বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে গুটিকয়েক প্রার্থী বাছাই করতে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষ পেশাগত যেমন লিগ্যাল অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ইত্যাদি পদে আবেদনকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় এক্ষেত্রে সরাসরি রিটেন পরীক্ষা নেয়া হয়। তবে রিটেন অংশে অল্পকিছু নৈর্ব্যক্তিক ধরণের প্রশ্ন থাকে যা অধিক নম্বর নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

অগ্রণী ব্যাংক হাউজ বিল্ডিং এর পরীক্ষা অভিজ্ঞতাঃ এই পরীক্ষা কম্বাইন্ড হয়েছিল। মোট পদ ছিল ৫৪টি। সরাসরি রিটেন পরীক্ষা হয়েছিলজন,বং ১৬টি রচনামূলক প্রশ্নে ১০ করে ১৬০ নম্বর। সময় ২ ঘন্টা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা অভিজ্ঞতাঃ সরাসরি রিটেন পরীক্ষায় ভাইভার জন্য ৫টি পদের বিপরীতে ২২ জন টিকেছিল। এখানেও ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। ৩০ নম্বরের এক কথায় উত্তর লেখার প্রশ্ন ১৫*২= ৩০। এই ১৫টির মধ্যে সামান্য কিছু মৌলিক গণিত প্রশ্ন ছিল। বাকি সব মূলত সাধারণ জ্ঞান । বাংলা ভাষায় একটি সাম্প্রতিক ইস্যুতে রচনা/ফোকাস রাইটিং ২০ নম্বর এবং ইংরেজিতে একটি রচনা/ফোকাস রাইটিং ২০ নম্বর। বাকি সকল প্রশ্ন আইন সম্পর্কিত। সম্ভবত আইন সম্পর্কে ১০টি প্রশ্ন লিখতে হয়েছিল। এই পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ও উত্তর একই কাগজে লিখতে হয়েছিল। তাই প্রশ্ন বের করা যায়নি।

পরীক্ষার আয়োজক যারাঃ অগ্রণী ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিং এর পরীক্ষা নিয়েছিল আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ।

পরীক্ষার খাতায় লেখার ভাষাঃ শুধু বাংলা রচনা/ফোকাস রাইটিং প্রশ্নটি ছাড়া সবকিছু সম্পূর্ণ ইংরেজিতে উত্তর করতে হয়েছিল।

পরীক্ষার খাতায় লেখার কৌশলঃ লেখার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ থাকবে। অল্প জায়গায় অনেকগুলো প্রশ্ন খুব কম সময়ে লিখতে হবে। কাজেই সব প্রশ্নের উত্তর  টু দ্য পয়েন্ট ও সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে গুছিয়ে লিখতে হবে। হাতের লেখা যেন স্পষ্ট হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কোনো উত্তর না পারলে, অহেতুক চিন্তা না করে দ্রুত স্কিপ করে অন্য প্রশ্নে চলে যাবেন। শেষে আবার বাদ দেয়া প্রশ্ন ট্রাই করবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে এলে কৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই কিছু হলেও লিখে আসার চেষ্টা করবেন।

সময়জ্ঞানঃ পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েই বুঝে ফেলতে হবে কোন প্রশ্নের উত্তরে কতটুকু সময় দিতে পারবেন। এসব পরীক্ষায় বড় দুর্বলতা জ্ঞান নয় বরং সময়জ্ঞান!

গণিত ভীতি জয়ঃ আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণভাবে কিছুটা গণিত ভীতি কাজ করে। কিন্তু বিগত পরীক্ষায় গণিত থেকে প্রশ্ন আসেনি। আশা করা যায় এবারও আসবে না। তারপরও নিয়োগ পরীক্ষা স্বভাবতই অনিশ্চিত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো।

ভাষাগত দক্ষতাঃ উত্তর যেন সঠিক বানান ও ব্যাকরণ মেনে লেখা হয়। ভাষাগত নৈপূন্য অধিক নম্বর নিশ্চিত করে।

ব্যাংকের লিগ্যাল অফিসারদের কার্যপরিধি অনুযায়ী মূলত জমিজমা বন্ধক নেয়া, বন্ধকীতব্য সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কে আইনগত মতামত দেয়া, প্যানেল আইনজীবীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা, তাদের আইনগত মতামতের যথার্থতা যাচাই-বাছাই করা, বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয়, মানি স্যুটে অর্থ আদায়, অর্থঋণ আদালতের কাজ প্রভৃতি বেশি করতে হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যেকোন আইনি ইস্যুতে মতামত দেয়া ও পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন প্রতিষ্ঠানের হয়ে মামলা করা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলে তা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেয়া। এছাড়াও কর্মচারী ব্যবস্থাপনায় শ্রম আইনের খুব প্রয়োগ হয়ে থাকে। ব্যাংকে বহুল প্রচলিত মামলাসমূহের মধ্যে অর্থঋণ আদালতের মামলা, চেক ডিজঅনারের মামলা, কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট মামলা, ব্যাংকের বিরুদ্ধে রিট মামলা মোকাবিলা ইত্যাদিতে দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

তাই এই পদে নিয়োগ পেতে কিছু বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখা জরুরি। তাই ভূমি ও অর্থ সম্পর্কিত আইনগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

আইনের যে বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিবেনঃ বিজনেস ল’/কমার্শিয়াল ল’, অর্থঋণ আদালত আইন, কোম্পানি আইন, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, শ্রম আইন, বাংলাদেশের সংবিধান, এছাড়া অন্যান্য মৌলিক আইনসমূহ এবং সাম্প্রতিক ইস্যুতে বাংলা ও ইংরেজি রচনা।

রূপালী ব্যাংকে যা হতে পারেঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে নির্বাচনী ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। পরের লাইনে লিখিত পরীক্ষার কথা বলা আছে। তাই কিছুটা কনফিউশান তৈরি হয়েছে। সেজন্যে এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া যেতে পারে। তবে নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়। এভাবে স্বল্প সময়ে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষাও মাঝে মাঝে অনুষ্ঠিত হয়। এমসিকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা সমাপ্ত হতেও পারে, তবে নিশ্চিত নয়। সেক্ষেত্রে পড়ার বিষয়বস্তু একই থাকবে। তখন জুডিসিয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বই থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

যেকোনো চাকুরীর পরীক্ষায় মূলত যে কাজের জন্য লোক নেয়া হবে বিশেষ করে কোনো টেকনিক্যাল কাজে; সে কাজটি করতে যে স্কিল বা জ্ঞান লাগে সেই জ্ঞান যাচাইয়ের জন্য সেই টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়। তার সাথে ইংরেজি, বাংলা, গণিত ও প্রচলিত সাধারণ আইনের প্রশ্ন তো থাকেই। তবে আইনের শিক্ষার্থীরা যদি বিজেএস এর সিলেবাস ধরে প্রিপারেশন নেয়, তবে কোনো জবেই আটকানোর কথা না। সাথে বাড়তি কোম্পানি আইন, ব্যাংকিং আইন ও শ্রম আইন পড়তে হবে। এই নির্দেশনা যেকোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ল’ অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

মেধা, শ্রম ও ভাগ্যের সঠিক সমন্বয় হলে বিজয়ের হাসি আপনারই। সকলের প্রতি শুভ কামনা রইল।

লেখকঃ আইন কর্মকর্তা, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডbellal.sincere@gmail.com