হাইকোর্ট ও করোনা
হাইকোর্ট ও করোনা

করোনা রোগীদের ১০ পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শনে ৭ দিন সময় দিলেন হাইকোর্ট

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার, সিলিন্ডার রিফিলিং ও হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবহার খরচসহ কোভিড-১৯ রোগীদের ১০টি পরীক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রদর্শনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

জনস্বার্থে করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই নতুন মূল্য তালিকা সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করার পর রোববার (১৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালীপদ মৃধা। এর ওপর শুনানি করেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী বশির আহমেদ।

প্রতিবেদন দেখে আদালত বলেছে, সরকারি-বেসরকারি যেসব হাসাপতাল করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিচ্ছে, সেসব হাসপাতালের সামনে উন্মুক্ত স্থানে নতুন এই মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে হবে।

এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালীপদ মৃধা গণমাধ্যমকে বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সিলিন্ডার রিফিলিং ও অক্সিজেনের ব্যবহার মূল্যসহ করোনাভাইরাসের বিভিন্ন জরুরি পরীক্ষার মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর শুরু হবে।

যে ১০টি পরীক্ষার মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে

  • প্রতিবেদনে সিবিসি পরীক্ষার স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
  • সিআরপি পরীক্ষার স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা।
  • সিরাম ক্রিয়েটিনাইন পরীক্ষার স্থিরমূল্য ৪০০ টাকা ধরা হয়েছে আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
  • এলএফটি নামের পরীক্ষাটির স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা, এর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
  • এস ইলেক্ট্রোলাইটস পরীক্ষাটির এক হাজার টাকা স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা।
  • ডি. ডিমার পরীক্ষার স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা।
  • এস. ফেরিশন পরীক্ষার জন্য স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
  • এস. প্রোকালসিটোনিন পরীক্ষাটির স্থিরমূল্য ২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে আর এর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০টাকা।
  • সিটি স্কেনের ( চেস্ট) স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা।
  • চেস্ট এক্স-রের (এ্যানালগ) স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা এবং চেস্ট এক্স-রের (ডিজিটাল) ৬০০ টাকা। এ দুটি এক্স-রের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ও ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য
অক্সিজেন সিলিন্ডার, রিফিলিং ও ব্যবহারের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত দুটি পরিমাণের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

বাজারে ১ হাজার ৩৬০ লিটার বা ১ দশমিক ৩৬ কিউবিক মিটার সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৬ হাজার ৮০০ লিটার বা ৬ দশমিক ৮ কিউবিক মিটার সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।

অক্সিজেন রিফিলিংয়ের মূল্য
অধিদফতরের পক্ষ থেকে কর ও শুল্কসহ প্রতি কিউবিক মিটার অক্সিজেনের রিফিলিং মূল্য ৬৫ টাকা ধরা হয়েছে। তবে সিলিন্ডার পরিবহন ব্যয় এর বাইরে ধরা হবে।

অক্সিজেনের ব্যবহার মূল্য
অক্সিজেনের ব্যবহারে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একক অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেমে দুই থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারে একজন রোগীর জন্য ১০০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটারের জন্য ১২৫ টাকা ও ১০ থেকে ১৫ লিটার ব্যবহারের জন্য ১৫০ টাকা ধরা হয়েছে।

জেনারেটর বেইজড সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে একজন রোগীর দুই থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১২০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটারের জন্য ৩০০ টাকা ও ১০ থেকে ১৫ লিটার ব্যবহারের জন্য ৩৫০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে।

এছাড়া লিক্যুইড অক্সিজেন ট্যাংক বেইজড দুই থেকে থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেনের জন্য ১২০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটার ব্যবহারের জন্য ২৫০ টাকা ও ১০ থেকে ১৫ লিটার ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। আর সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম প্লাস হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা দিয়ে ৬০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের মূল্য ৫০০ টাকা ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, সপ্তাহ দু-এক আগে নতুন মূল্য তালিকাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে সে মূল্য তালিকার অনুমোদন এখনও আমরা পাইনি।

প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ ও কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জরুরি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক গত ৩ সেপ্টেম্বর সভা হয়। সে সভায় নতুন করে মূল্য নির্ধারণ হয়।

‘দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ-১৯৮২’ যথাযথভাবে অনুসরণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস ল’ইয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম ২০১৮ সালের জুলাইয়ে হাই কোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৪ জুলাই হাই কোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি (ইউজার ফি) নির্ধারণের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ১৯৮২ সালের দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অধ্যাদেশের বিধান যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়নের অগ্রগতিও জানাতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

সেদিন রিট আবেদনকারী পক্ষ হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করলে, সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ তদারকির জন্য হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।