ফেনী জেলা জজ আদালত
ফেনী জেলা জজ আদালত

বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনা ও ভরণ-পোষণসহ ৮ শর্তে এক আসামির প্রবেশন

বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনা ও ভরন-পোষনের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাসহ আট শর্তে মাদক মামলায় দোষী সাবস্ত্য এক আসামির প্রবেশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) ফেনীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রবেশনপ্রাপ্ত আসামির নাম মো. মোতাহের হোসেন প্রকাশ রিয়াদ। তিনি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন মুছাপুর কেদার বাড়ীর বাসিন্দা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এ.পি.পি অ্যাডভোকেট জনাব নিমাই লাল সূত্রধর এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জনাব আব্দুস সাকুর।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ আগস্ট আসামি রিয়াদকে ফেনীর পরশুরাম সীমান্ত ফাঁড়ির ৪/বি কোম্পানী বিজিবি আটক করেন। ফেনীর পরশুরাম থানাধীন খন্দকিয়া গ্রামস্থ সীমান্ত এলাকায় আটকের পর তার প্যান্টের পকেট থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় হাবিলদার মো. মোর্শেদ আলম বাদী হয়ে মামলা রুজু করেন। পরশুরাম থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. মোস্তাক চৌধুরী তদন্ত করে একই বছরের ৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রের প্রেক্ষিতে গত ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে মামলার বিচারকালে ০৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন।

মামলার বিচার চলাকালে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর আসামী মোতাহের হোসেন রিয়াদ অনুতপ্ত হয়ে কখনও মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রয় করবেন না মর্মে অঙ্গীকার করে জবানবন্দিতে প্রদান করেন।

ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে প্রাক দন্ডাদেশ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে সমাজসেবা অফিসার রাসেল আহাম্মদ গত ৯ ডিসেম্বর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এরপর বিচারক এই মামলার ঘটনা, উদ্ধারকৃত আলামত, আসামী পেশায় হকার ও তার বৃদ্ধ মা থাকার বিষয়টি এবং আসামী নিজে অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করায় প্রকাশ্য আদালতে আসামীকে The Probation of Offenders Ordinance, 1960 এর ৫ ধারায় ০৮ (আট) টি পৃথক শর্তে ০১(এক) বছরের জন্য দন্ড ঘোষণা না করে আসামীকে সংশোধন করার উদ্দেশ্যে প্রবেসন প্রদান করা হয়।

প্রবেশনের শর্তাবলী

১। আসামী মো. মোতাহের হোসেন প্রকাশ রিয়াদ কখনো মাদক সেবন, পরিবহন ও বিক্রয় করবেন না। পাশাপাশি মাদক সেবন থেকে দূরে  থাকার জন্য আসামিকে ধূমপান পরিহার করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
২। আসামী মাদক বিরোধী জনমত ও আন্দোলন এবং জনসচেতনায় ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে ও ভূমিকা রাখতে হবে।
৩। আসামীকে মাদক বিরোধী কার্যক্রমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবেসনকালীন সময়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিস, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী এর নির্দেশনাক্রমে বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে মাদক বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
৪। আসামী প্রবেসনকালীন সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের বিষয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
৫। আসামী তার নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় ও তার গ্রামের মধ্যে সরকারী রাস্তার পাশে ১০(দশ) টি ফলজ ও ১০(দশ) টি বনজ গাছ রোপন করতে হবে এবং উক্ত বিষয়টি প্রবেসন কর্মকর্তাকে  অবহিত করতে হবে।
৬। আসামীকে প্রবেসন চলাকালীন সময়ে তার বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনা ও ভরন-পোষনের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
৭। আসামী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে প্রতি মাসে ন্যূনতম ০১ (এক) বার দেখা করবেন ও তার অগ্রগতি জানাবেন। এছাড়া প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। প্রবেসন কর্মকর্তার নির্দেশ মতে তিনি নিজেকে পরিচালিত করার চেষ্টা করবেন।
৮। আসামীর ০২ জন সন্তানকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য পড়াশুনার ব্যবস্থা করবেন।

আদালত তার আদেশে আসামীকে প্রতি মাসে প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে দেখা করে তার কাজের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন। প্রবেসন কর্মকর্তাকে প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর শর্ত প্রতিপালনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এ রায়ে উপস্থিত আসামী, ফেনী আইনজীবী সমিতির সদস্যগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আসামী সংশোধিত হয়ে সুনাগরিক হিসাবে জীবন অতিবাহিত করবেন মর্মে আশা প্রকাশ করেন।