মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর
মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইনের ভূমিকা

মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর: আইন আছে। আছে শাস্তির বিধানও। কিন্তু তা রয়েছে শুধু খাতায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুত্সাহিত করার জন্য যে কনভেনশন হয় বাংলাদেশ তার স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে কনভেনশনের বিধানাবলী বাংলাদেশে কার্যকর করার লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উত্পাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণকরার উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, যার ২০১৩ সালে সংশোধনী এনে শাস্তিসহ কিছু বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার কোনভাবেই কমানো সম্ভব হচ্ছেনা বরং ১৮বছরের নিচের তরুণ-তরুণী মাঝে আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে। হয়ে যাচ্ছে আধুনিকতা বা ফ্যাশনের অন্যতম উপাদান।

ধূমপান

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, (২০১৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২(ঘ) ধারা অনুযায়ী, কোন তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়া শ্বাসের সাথে টেনে ফুসফুসে নেওয়া বা বাহির করা, এবং কোন প্রজ্বলিত তামাকজাত দ্রব্য ধারণ করাও ধূমপানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, ( ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২(খ) ধারা অনুযায়ী,“তামাক” অর্থ কোন নিকোটিনা টাবাকাম বা নিকোটিনা রাসটিকার শ্রেণিভুক্ত উদ্ভিদ বা অন্য কোন উদ্ভিদ বা কোন পাতা বা ফসল, শিকড়, ডাল বা কোন অংশ বা অংশ বিশেষ। একই ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, “তামাকজাত দ্রব্য” অর্থ তামাক, তামাক পাতা বা নির্যাস হতে প্রস্তুত যে কোন দ্রব্য, যা চোষণ বা চিবানোর মাধ্যমে গ্রহণ করা যায় বা ধূমপানের মাধ্যমে শ্বাসের সাথে টেনে নেওয়া যায় এবং বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং হুক্কা বা পাইপের ব্যবহার্য মিশ্রণও (mixture) তামাকজাত দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত হবে।

ধূমপান এলাকা

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, (২০১৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২(ঙ) ধারা অনুযায়ী, ধূমপান এলাকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্টকৃত কোন এলাকা। অর্থাৎ নির্ধারিতবাসরকারকতৃকবিশেষআদেশদ্বারাঘোষিতঅন্যকোনস্থানবাযানবাহনযাশুধুধূমপানেরজন্যইব্যবহারকরা, যেখানসর্বসাধারনেরপ্রবেশাধিকারনিষিদ্ধ।

অপরাধমূলক কাজ ও শাস্তি

১. এই আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ব্যতীত অর্থাৎ উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান করলে, উক্ত ব্যক্তি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দন্ডিতহবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

২. এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা বা পৃষ্ঠপোষকতা করলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

৩.এই আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কোন স্থানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য অটোমেটিক ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

৪.এই আইনের ৬ক ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি আঠারো বৎসর বয়সের নিচে কোন ব্যক্তির কাছে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় অথবা তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় বা বিতরণ কাজে নিয়োজিত করলে অনধিক পাঁচ হাজার টাকায় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

৫. এই আইনের ৭ক ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক নির্ধারিত দায়িত্ব পালন না করলে অনধিক পাঁচশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

৬. এই আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, ধূমপান এলাকা হিসাবে চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট স্থানের বাহিরে সতর্কতামূলক “ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ” সম্বলিত নোটিশ বাংলা এবং ইংরেজীতে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে বা না করলে অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

৭. এই আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষতি সম্পর্কিত রঙ্গিন ছবি ও লেখা সম্বলিত সতর্কবাণী প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে কমপক্ষে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে মুদ্রণ করতে ব্যর্থ হলে বা না করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক দুইলক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ড দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি হবে।

মন্তব্য

ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্যব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, ( ২০১৩সাল পর্যন্ত সংশোধিত) আওতায় কোন অপরাধ করলে তা আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য।এ ধরনের অপরাধ যেকোন শ্রেনীয় ম্যাজিস্ট্রেট বিচার করতে পারেন তবে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না। এখানে কিছু স্থান আছে যে স্থানগুলো ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না, যেমন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগারের অভ্যন্তরে, হাসপাতালে, শিশুপার্কে, খেলাধুলা বা অনুশীলনের জন্য নির্ধারিত স্থানে, থিয়েটারের ভেতরে, এক কামরা বিশিষ্ট পাবলিক বাস ইত্যাদিতে অবশ্যই ধূমপান এলাকাকে আলাদা করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ সহজে প্রবেশ করতে না পারে এবং ধোয়াও আদান-প্রদান না হয়।

মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর: আইন বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।