‘ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে সামারি ট্রায়াল’

মোহাম্মদ সেলিম মিয়া:

শুরু হয়ে গেছে আমের মৌসুম কিন্তু যে আম খাচ্ছি তা ফরমালিন মুক্ত তো? এ প্রশ্ন হরহামেশায় মনে উদয় হচ্ছে।

প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, নাগরিক সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) পরীক্ষা করে দেখেছে, ঢাকার বাজারের ৯৪ শতাংশ আমে ফরমালিন রয়েছে। আর শতভাগ লিচু ও জামে ব্যবহৃত হচ্ছে এই রাসায়নিক।

ফরমালিন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং খাদ্য দ্রব্যের সংরক্ষণ, পচনরোধ বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে অননুমোদিত, মাত্রাতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ফরমালিন ব্যবহার অনিরাময়যোগ্য রোগ ব্যাধির সৃষ্টি করিতেছে।

ফরমালিনের উক্তরূপ ব্যবহারের ফলে সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হইতেছে এবং ফরমালিনের উক্তরূপ অপব্যবহার রোধ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনে সরকার ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিকর পদার্থ হিসাবে উহার অপব্যবহার রোধ করিবার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করে।

আইনে “ফরমালিন’’ অর্থ ফরমালিন, ফরমালডিহাইড, প্যারাফরমালডিহাইড ও উহার যে কোন মাত্রার দ্রবণ, এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফরমালিন উৎপন্নকারী অন্য কোন পদার্থ;

উক্ত আইনের ২২ এবং ২৭ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি লাইসেন্স ব্যতীত ফরমালিন বিক্রয় বা ব্যবহার করেন অথবা কোন ব্যক্তি যদি উক্ত অপরাধ সংঘটনে কাহাকেও সহায়তা করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড, তবে ৬ (ছয়) মাসের নিম্নে নহে, বা অনধিক ৪ (চার) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, তবে ১ (এক) লক্ষ টাকার নিম্নে নহে, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

উপরে উক্ত অপরাধসহ (উক্ত আইনের ধারা ২০ ও ২১ এর অধীন অপরাধ ব্যতীত)অন্যান্য অপরাধসমুহের বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা ক্ষেত্রমত মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

উক্ত আইনে বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির চ্যাপ্টার ২২ মোতাবেক সামারি ট্রায়াল প্রয়োগ করে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গন দ্রুত অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে একজন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক ২ বছরের সাজা দিতে পারেন বিধায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনের ২২ এবং ২৭ ধারার বিচার এবং এতদসহ যে কোন আইনের অনধিক ২ বছরের সাজার বিচার সহজে এবং দ্রুত করতে পারেন।

সামারি ট্রায়াল বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গন দ্বারা পরিচালিত এটাও একধরনের ভ্রাম্যমাণ আদালত হতে পারে। উক্ত বিচারের দর্শন হলো, বিচার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগনই অপরাধ সংঘটনের স্থানে চলে যাবে, আসামীকে পুলিশ কষ্ট করে ধরে আনতে হবে না, প্রয়োজনে বিজ্ঞ বিচারক ঘটনাস্থলে বা আদালতে যে কোন জায়গায় বিচার করতে পারে। এ ক্ষমতা কিন্তু একজন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস এর বিধি ১২ দেওয়া আছে, দরকার শুধু প্রয়োগ। নরমাল আদালতের মতই এখানেও বিচার হবে কিন্তু সেটা হবে সংক্ষিপ্ত বিচার। সেখানে আসামীপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনজীবীও রাখতে পারবে কিন্তু প্রচলিত মোবাইল কোর্ট নয়, প্রচলিত মোবাইল কোর্ট কিন্তু বিচার করতে পারে না তারা শুধু দোষ স্বীকারের ভিত্তিতেই কনভিকশন দিতে পারে, দোষ স্বীকার না করলে কিন্ত মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ মোতাবেক অভিযুক্ত অপরাধীকে যথাযথ আদালতে পাঠিয়ে দিতে হয় বিচারের জন্য।

আমি মনে করি ছোট ছোট অপরাধ দমনে (যে সব অপরাধের সাজা অনধিক ২ বছর) এবং সে সব অপরাধের বিচারের সামারি ট্রায়াল হতে পারে একটা কার্যকর মাধ্যম। আমাদের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগন তাদের উপর অর্পিত ক্ষমতা অর্থাৎ সামারি ট্রায়াল প্রয়োগে এগিয়ে আসা উচিৎ। আশা রাখি সাধারণ মানুষ ব্যপকভাবে উপকৃত হবে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।