সম্পত্তি গ্রাসের চেষ্টা: বড় বোনের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত ফৌজদারি মামলা করল আদালত

কথা ছিল ছোট বোনের ৫ কাঠা সম্পত্তি কিনবেন বড় বোন। কিন্তু দলিল করতে গিয়ে ছোট বোনের সব সম্পত্তি এমনকি ভিটেমাটিটুকুও তুলে নিলেন বড় বোন। অবশেষে বড় বোনের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিকার পেয়েছেন ছোট বোন। আদালত দলিলটি বাতিল ঘোষণা করার পাশাপাশি বড় বোনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্যদানের অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত ফৌজদারি মামলা রুজু করেছেন।

রাজশাহীর বাগমারা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৮১/২০১৬ (অপ্র) মামলায় ৬ জুন এই রায় প্রদান করা হয়।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ফাতেমা একজন বিধবা, নিঃসন্তান ও অশিক্ষিত নারী। তার ৫ কাঠা জমি কেনার কথা বলে বড় বোন ছায়েদা দলিলে তুলে নেন ভিটেমাটিসহ ফাতেমার পুরো ৮ বিঘা সম্পত্তি। বিষয়টি জানতে পেরে নিরুপায় ফাতেমা বাগমারা সিনিয়র সহকারী জজজজ আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করেন।

মামলায় প্রমাণ হয় যে, বিধবা, নিঃসন্তান ও অশিক্ষিত ফাতেমার পক্ষে দলিল সম্পাদনের সময় কেউ উপস্থিত ছিল না। এমনকি দলিলের মর্মও ফাতেমাকে পড়ে শোনানো হয়নি। দলিললেখক, দলিলের সাক্ষী সবাই ছিল বড় বোন ছায়েদার নিকটজন।

আরও প্রমাণ হয়, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একটি চক্রের যোগসাজশে ছায়েদা এই দলিল করে নিয়েছেন, যেখানে তার ছেলে সাইদুর রহমান এবং দলিললেখক আব্দুল হাকিম অন্যতম মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন। দেখা যায়, ছায়েদার ছেলে সাইদুর রহমান দলিল লেখকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন এবং দলিল লেখক আব্দুল হাকিমের সঙ্গে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক আছে।

আরও জানা যায়, দলিল লেখক আব্দুল হাকিমের ভাই জাকিরুল ইসলামও দলিল লেখকের সহযোগী, যাকে এই দলিলের সাক্ষী করেছেন আব্দুল হাকিম। শুধু তাই নয়, দলিল লেখক আব্দুল হাকিমের স্ত্রীও সংশ্লিষ্ট ভবানীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নকলনবিশ হিসেবে কাজ করেন। এদের সবার সম্মিলিত যোগসাজশে দলিলটিতে ফাতেমার সমস্ত সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে প্রমাণিত হয়।

মামলায় আরও প্রমাণ হয় যে, ৫ কাঠার কথা বলে দলিলে ৮ বিঘা সম্পত্তি তুলে নেওয়া হলেও ছোট বোন ফাতেমাকে দলিলবাবদ কোনো মূল্যই পরিশোধ করেনি বড় বোন ছায়েদা। অন্যদিকে দলিল হলেও দলিলবলে সম্পত্তির দখল পাননি বড় বোন ছায়েদা। পুরো সম্পত্তি এখন পর্যন্ত ফাতেমার দখলেই আছে বলে দেখা যায়।

আরও জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন খরচ ফাঁকি দিতে দলিলটিকে হেবা দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিলে লেখা হয়, বড় বোন ছায়েদার সেবাযত্নে খুশি হয়ে ছোট বোন ফাতেমা সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। কিন্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায়, সেবাযত্ন করার দাবি বানোয়াট।

বড় বোন ছায়েদা ও দলিললেখক আব্দুল হাকিমের সাক্ষ্যের কিছু অংশ আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ছায়েদা আদালতে দাবি করেন, দলিল সম্পাদনের সময় ছোট বোন ফাতেমার পক্ষে জনৈক মকবুল চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে দলিললেখক আব্দুল হাকিম দাবি করেন, তাকে দলিল লেখার খরচ ফাতেমা (দলিলদাতা) দিয়েছেন। কিন্তু বিচারে দেখা যায়, তাদের দুজনই শপথ নিয়ে মিথ্যা বলেছেন।

আদালত তার আদেশে দলিলটি বাতিল করেন এবং বাদীর মামলার খরচ পরিশোধে বিবাদীকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে বিবাদী ছায়েদা ও দলিললেখক আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তাদের তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানা যায়।