মোঃ কামাল হোসেন

সরকারি কর্মচারী ব্যক্তিগত ফৌজদারি মামলায় দন্ডিত হলে চাকরির ভবিষ্যত কি?

মোঃ কামাল হোসেন:

বাংলাদেশ সরকার তার বিভিন্ন ধরণের কাজ সম্পাদনের জন্য সরকারি কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করে থাকে।এসব সরকারি কর্মচারী তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন ও বিধি বিধান অনুসরণ করে থাকেন। আমাদের দেশে সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার সরকারি চাকরি আইন ও কিছু কিছু বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে।এসব আইন ভঙ্গের জন্য একজন সরকারি কর্মচারী বিভিন্ন ধরণের বিভাগীয় শাস্তি পেয়ে থাকেন। তদুপরিও অনেক সময় অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তেমনি একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অফিস বহির্ভূত কারণেও অনেক সময় মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে। একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হলে তার চাকরি থাকবে কি না তা চাকরি আইন ২০১৮ এ বর্ণনা করা হয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা ৪২(১) অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন আদালত যদি ফৌজদারি অপরাধে মৃত্যুদন্ড বা এক বছরের বেশি কারাদণ্ড প্রদান করে তাহলে দন্ড ঘোষণার পরপরই উক্ত কর্মচারী চাকরি হতে বরখাস্ত হবেন। অর্থাৎ এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে অথবা ফাঁসির আদেশ হলে তিনি চাকরি হতে বরখাস্ত হবেন। এখানে আইনে অপরাধের ধরন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন বিধিবিধান নেই। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মচারী তার অফিসের মামলা বা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দাম্পত্য, সম্পত্তি সম্পর্কিত যে কোন ধরণের ফৌজদারি মামলায় উক্ত দন্ডে দন্ডিত হলে চাকরি হতে বরখাস্ত হবেন। এখানে অপরাধ মূখ্য বিষয়,কি ধরণের অপরাধ তা মূখ্য বিষয় নয়।

অর্থ দন্ডে দন্ডিত হলে বিধান:

এখানে একটি প্রশ্ন সহজেই আমাদের মনের মধ্যে আসে যে একজন সরকারি কর্মচারী যদি শুধু অর্থ দন্ডে দন্ডিত হয় তাহলে তার চাকরি থাকবে কি না?
সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা ৪২(২) অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মচারী কোন ফৌজদারি অপরাধে এক বছরের কম মেয়াদের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হলে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত না করে কর্তৃপক্ষ অন্য বিকল্প শাস্তি দিতে পারবে। সুতরাং কোন সরকারি কর্মচারী আদালত কর্তৃক ফৌজদারি অপরাধে অর্থে দন্ডে দন্ডিত হলে তিনি চাকরি হতে‌ বরখাস্ত নাও হতে পারে। বরখাস্তের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে তাকে অন্য কোন লঘু শাস্তি দিতে পারবে। তবে আইনে এটি বাধ্যতামূলক নয়।এটা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর।

ফৌজদারি অপরাধে চাকরি হারালে বা অন্য কোন বিভাগীয় শাস্তি পেলে করণীয় কি:-

কোন সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধে এক বছরের বেশি কারাদণ্ড বা ফাঁসির আদেশ হলে তিনি চাকরি হতে বরখাস্ত হবেন এবং এক বছরের কম মেয়াদের জন্য কারাদণ্ড দন্ডিত হলে বা অর্থ দন্ডে দন্ডিত হলে বরখাস্তের পরিবর্তে অন্য শাস্তি পেতে পারেন। যদি কোন সরকারি কর্মচারী এই বিধানের অধীন শাস্তি পান সেক্ষেত্রে তিনি আদালত কর্তৃক প্রদত্ত শাস্তির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উচ্চতর আদালতে আপিল দায়ের করতে পারে।আইনের ৪২(৫) ধারা অনুযায়ী যদি আপিলে পূর্বে প্রদত্ত দন্ডাদেশ বাতিল হয়ে যায় তাহলে উক্ত কর্মচারী পূনরায় তার চাকরি ফিরে পাবেন বা অন্য কোন বিভাগীয় শাস্তি পেলে তা বাতিল হয়ে যাবে।

লেখক- সহকারী ব্যবস্থাপক (আইন), বিজিডিসিএল, কুমিল্লা।