জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম

বিরোধী পক্ষে কাজ করায় পদ হারালেন আইনজীবী ফোরামের ৩ নেতা

বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের হয়ে কাজ করায় পদ হারিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের তিনজন নেতা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতিসহ কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে সংগঠনটির বগুড়া ইউনিটের দুই উপদেষ্টাসহ তিনজনের প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের কমিটির পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বগুড়া ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর জানান, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাদের এ সাজা দেওয়া হয়েছে।

ফোরামের পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত হওয়া নেতারা হলেন- বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি ও ফোরামের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, ফোরামের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শেখ মোখলেছুর রহমান এবং ফোরামের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা পাপন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বগুড়া ইউনিটের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ২৭ নভেম্বর বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের উপদেষ্টা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পিপি আবদুল মতিনের নেতৃত্বে পৃথক প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনের ফলাফলে ১৩টি পদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থী সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক প্রার্থী আতিকুল মাহবুব সালাম, ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রার্থী উজ্জ্বল হোসেন এবং সদস্য প্রার্থী আবু রায়হান পরাজিত হন।

দীর্ঘদিন বার সমিতির নেতৃত্বে থাকা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারে উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শেখ মোখলেছুর রহমান এবং সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা পাপন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করেছেন। ফলে ফোরাম মনোনীত সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও সদস্য প্রার্থী পরাজিত হন। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।

বিষয়টি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি জানতে পারলে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম বগুড়ায় পাঠায়। এ টিম ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর তিন অভিযুক্তকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের ২৬ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট শেখ মোখলেছুর রহমান এবং সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা পাপনকে ফোরামের পদ থেকে অব্যাহতি এবং তাদের প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করা হয়।

কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য (দপ্তর) আবদুল্লাহ আল মাহবুব স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গত শনিবার বগুড়ায় ফোরাম কার্যালয়ে পৌঁছে। বিষয়টি গোপন রাখা হলেও মঙ্গলবার বিকালে তা ফাঁস হয়ে যায়।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বগুড়া ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী আজগর ও সহ-সভাপতি আবদুল বাছেদ তিন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শাস্তির কথা স্বীকার করেন।

তারা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তিনজনকে পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। তবে তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন কি না সে ব্যাপারে তাদের কিছু জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা পাপন জানান, তারা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলে তাদের ত্রুটিপূর্ণ কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছিল। রেজিস্ট্রি ডাকে যুক্তিযুক্ত জবাব দেওয়া হলেও তা কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে পৌঁছেনি। তাই তারা ফোরামের বগুড়া ইউনিটের তিন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে কেন্দ্রে কথা হয়েছে; শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আনীত শাস্তি প্রত্যাহার হবে।

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, কোন্দলের কারণে বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতি নেতৃত্ব দীর্ঘদিন জামায়াত-বিএনপির হাতে রয়েছে। এবার জাতীয়তাবাদী ফোরামের কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিনসহ কয়েকজনের পক্ষে কাজ করায় তাদের সভাপতিসহ চারটি পদ হাতছাড়া হয়ে যায়।

সূত্র: যুগান্তর