আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ফাইল ছবি)

সরকারি কৌঁসুলিদের অবহেলার কারণে মামলাজট দুঃখজনক: আইনমন্ত্রী

রাষ্ট্রের পক্ষে ওকালতি করার জন্যই সরকারি কৌঁসুলিদের নিয়োগ দেওয়া হয় উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি কৌঁসুলিদের দ্বারা যদি রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষিত না হয়; তারা যদি ঠিকমতো কাজ না করেন, বিচারপ্রার্থীরা যদি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন, বিচার যদি বিলম্বিত হয়, তবে তা হবে দুঃখজনক।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কর্তৃক জিপি (সরকারি কৌঁসুলি) এবং পিপিদের (পাবলিক প্রসিকিউটর) ২৩তম বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোববার (৬ মার্চ) তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য ও শোষণ হতে মুক্তি এবং সার্বিক উন্নয়নের সোপান হিসেবে দেখতে চাইলে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সে কারণেই তার দেওয়া সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তবে বঙ্গবন্ধু এমন এক স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে বিচারপ্রার্থী মানুষ স্বল্প খরচে, সহজে ও দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করছেন। স্বাধীন ও বিশ্বমানের বিচার বিভাগ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আনিসুল হক বলেন, বিচারক, জিপি, পিপি, আইনজীবী, আদালতের কর্মচারীসহ বিচার প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপালনরত সবাইকে নিয়েই কিন্তু বিচার বিভাগ। তাই বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন (স্টেক হোল্ডার) হিসেবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জিপি ও পিপিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

জিপি ও পিপিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, শুধু সরকারি মামলায় সরকারকে যথাযথভাবে রিপ্রেজেন্টেশন করা নয়, স্ব-স্ব অফিসের সঠিক ব্যবস্থাপনা, সঠিকভাবে মামলার ফাইল পরিচালনা, সরকারসহ সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে মামলা পরিচালনা করে সেবার মানসিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা পালন করে মামলা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো জিপি এবং পিপি বিভিন্ন অজুহাতে আদালতে সময়ের দরখাস্ত করে থাকেন। সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই আদালতের সময় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আদালতে সঠিক সময়ে সাক্ষী হাজিরসহ নির্ধারিত তারিখে সাক্ষী পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ঢিলেঢালা বা গড়িমসি মনোভাব কাম্য নয়।

মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের পক্ষে ওকালতি করার জন্যই সরকারি কৌঁসুলিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই সরকারি কৌঁসুলিদের দ্বারা যদি রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষিত না হয়; তারা যদি ঠিকমতো কাজ না করেন, বিচারপ্রার্থীরা যদি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন, বিচার যদি বিলম্বিত হয়, তবে তা হবে দুঃখজনক, যোগ করেন আনিসুল হক।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিদ্যমান মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির ওপর জোর দিতে হবে। এজন্য বিচারপ্রার্থী জনগণসহ আইনজীবীদের এ পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বক্তব্য দেন।

সূত্র: বাসস