অ্যাডভোকেট রায়হান কাওসার
অ্যাডভোকেট রায়হান কাওসার

বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার: ঘটনাস্থলেই সাক্ষীদের সম্মুখে পরিবারকে আটকের খবর জানানো প্রসঙ্গে

রায়হান কাওসার: কিছুদিন আগে এক তদবীরকারক এসেছিলেন তাঁর আসামীর জামিন করাতে। ৩০২-এর মামলা। ছেলে এবং পিতা আসামী। যেদিন আসামীদের কোর্টে সোপর্দ করা হয় সেদিনই আসামীগণ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেন। তদবীরকারকের দাবী আসামীগণকে যেদিন আদালতে উপস্থিত করা হয়- তার তিন দিন আগে তাদের আটক করা হয়। তৃতীয় দিন কোর্টে সোপর্দ করা হলে সেদিনই তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দেন। কিন্তু তদবীরকারকের দাবী আসামীদের দোষ স্বীকার স্বেচ্ছায় ছিল না।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় একজন ব্যক্তিকে আটক করার ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। যৌক্তিক সন্দেহ, বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা আমলযোগ্য অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে- এমন অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে যে কোন সময় আটক করার ক্ষমতা রাখে পুলিশ।

আইনজীবী হিসেবে মাঝে মাঝেই দেখি, আসামী দোষ স্বীকার করেছেন, কিন্তু পরে তা আবার অস্বীকার করেছন। অর্থাৎ রিট্র্যাকশন (Retraction) পিটিশন দিয়েছেন। তাহলে অর্থটা কী দাঁড়াল? হয় রিমান্ডে পুলিশ কর্তৃক আসামীকে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে অথবা ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে অথবা শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। যার ফলে আসামী দোষ স্বীকার করতে বাধ্য অথবা প্রলুব্ধ হয়েছেন। তা না হলে কেন একজন সুস্থ-সজ্ঞান ব্যক্তি রিমান্ডে নেওয়ার আগে দোষ স্বীকার করলেন না কিন্তু রিমান্ডে নেওয়ার পর দোষ স্বীকার করলেন? আবার কিছুদিন পরে সেই দোষ অস্বীকার করে আগের জায়গায় ফিরে গেলেন অর্থাৎ রিট্র্যাকশন পিটিশন দিলেন?

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের তুলনায় অনেক বেশি সেবামুখী এবং নাগরিক-অধিকার বিষয়ে সচেতন। তাঁরা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্বই পালন করেন। তবে বিপথগামী সদস্য একেবারে নেই- সেটা বলা যাবে না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার যে একেবারে হয় না- তা নয়। আমাদের দেশে বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে আসামীকে কোর্টে সোপর্দ করার আগেই আসামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু বরণ করেছেন। আবার, অনেক নাগরিক অভিযোগ করে থাকেন, তাদের স্বজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক তুলে নেওয়া হয়েছে।

২০০৪ সালের ০৭ নভেম্বর দৈনিক ডেইলী স্টার-এ খবর প্রকাশিত হয়, র‍্যাব কর্তৃক মেহেদী হত্যার মামলাটি পুলিশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অনেক সময় আসামী গ্রেপ্তার হয় কিন্তু তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। যেমন, ২০০৬ সালের ২৪ জুলাই দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত হয়, একজন গ্যারেজ কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটক হয় কিন্তু তার পরিবার তার কোন খোঁজ পাচ্ছিলেন না। ২০১৪ সালের নারায়নগঞ্জ সেভেন মার্ডারসহ অনেক ঘটনাই বলা যায় এ প্রসঙ্গে। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার রহস্য এখনও উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির জানার অধিকার রয়েছে কী অভিযোগে তাকে আটক করা হলো। একজন আইনজীবীর সাথে আলোচনা করার অধিকার তাঁর রয়েছে। আর যদি সেটা নিশ্চিত করতে হয় তাহলে আটককৃত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারকে দ্রুততম সময়ে আটকের খবর না জানালে তিনি তাঁর মৌলিক অধিকারকে যথাযথভাবে ভোগ (Exercise) করতে পারেন না।

সুতরাং, একজন ব্যক্তি আটক হওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলেই সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ফোন কলের মাধ্যমে কিংবা যে কোন গ্রহণযোগ্য পন্থায় উক্ত ব্যক্তির পরিবারকে আটকের খবর জানাতে হবে। আসামীকে থানায় নিয়ে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী করার পরে নয়, ঘটনাস্থলেই পরিবারকে জানাতে হবে সাক্ষীদের সম্মুখে। কেননা, মুক্ত পরিবেশ থেকে চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে গেলে মানুষ তার অধিকার আদায়ের ব্যাপারে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন।

ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ [৫৫ ডিএলআর, হাইকোর্ট (২০০৩) ৩৬৩] মামলায় আসামীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব আসামীর পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের জানানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা তেমন ফলপ্রসূ নয়। কেননা, আসামীকে কোন সময়, কোন জায়গায়, কী পরিস্থিতিতে, কাদের সামনে আটক করা হয়েছে- সে বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কোন দির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

একজন আসামীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কী হচ্ছে, না হচ্ছে তার কোন খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ থাকে না আসামীর পরিবারের। আর যদি আসামীকে থানায় নিয়ে তিন/চারদিন আটক রাখার পর তার পরিবারকে জানানো হয় যে আজকেই আসামীকে আটক করা হয়েছে- তাহলে কী আসামী কিংবা তার পরিবারের পক্ষে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হবে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসামীকে তিন চার দিন আগে তুলে নিয়ে গিয়েছিল?

যদি আসামীকে পুলিশ হেফাজতে কয়েকদিন আটক রাখার পর কোর্টে চালান দেওয়া হয় এবং কোর্টে সোপর্দ করা মাত্রই দোষ স্বীকার করেন, তাহলে আসামীকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগটি নষ্ট হয় না। আর যদি আসামী কোর্টে সোপর্দ করার পর দোষ স্বীকার না করেন, তাহলে পুলিশের হাতে রিমান্ডের অস্ত্রটি থেকেই যাচ্ছে- যেটি পরবর্তীতে পুলিশ কাজে লাগাতে পারবে যদি আসামী তাদের কথামত কাজ না করে।

এক্ষেত্রে আইনসিদ্ধভাবে রিমান্ড চাওয়ার আগেই আসামীকে কৃত্রিম রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাক্ষীদের সম্মুখে আসামীকে আটক করা হলে এবং তাদের সম্মুখে আসামীর আত্মীয়-স্বজনকে তৎক্ষণাৎ জানানো হলে আসামী হয়ত সম্ভাব্য অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে পারেন।

এছাড়াও, একজন আসামীর গ্রেপ্তারের পরিস্থিতি যেন একজন বিচারক বিচারের সময় বিবেচনায় নিতে পারেন, সেজন্য আসামী গ্রেপ্তারের সময় যদি কোন সাক্ষী উপস্থিত না থাকে তাহলে কর্তব্যরত পুলিশ/আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেটি একটি মেমোরেন্ডামে লিপিবদ্ধ করবেন এবং যত দ্রুত সম্ভব আসামীকে নিকটস্থ বাজার, মোড়, মহল্লায় উপনীত করবেন এবং আসামীকে আটক করা হয়েছে মর্মে সময় ও পরিস্থিতি উল্লেখ করে সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন এবং সাক্ষীদের সম্মুখেই আসামীর পরিবারকে ফোনকল করে জানাবেন অথবা বিশেষ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করবেন।

ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ [৫৫ ডিএলআর, হাইকোর্ট (২০০৩) ৩৬৩] মামলায় একজন আসামীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলেও কোন আসামী আটক হবার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীর স্বাক্ষর গ্রহণ এবং ঐ সমইয়েই সাক্ষীদের সামনে আসামীর পরিবার/নিকট বন্ধুকে জানাতে হবে মর্মে কোন নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা রয়েছে আসামীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে- যা আসামীর মৈলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় ফলপ্রসূ নয়।

সরকার হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন। যথারীতি আপিল খারিজ হয় [৮ এসসিওবি ২০১৬ এডি] কিন্তু আপিল বিভাগ যে রায় দেন সেখানেও আসামী আটক হবার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীর স্বাক্ষর গ্রহণ ও ঘটনাস্থলেই আসামীর পরিবারকে জানানোর বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই।

সংবিধানের ৩৩ (১) এবং ৩৫ (৪) অনুচ্ছেদ একজন নাগরিককে যে মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে তা রক্ষার্থে রাষ্ট্রের উচিত হবে ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করা কিংবা পুলিশ রেগুলেশনে পরিবর্তন আনা। ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৩ ধারায় একজন ব্যক্তির শরীর কিংবা কোন স্থান তল্লাসী করে মালামাল উদ্ধারের সময় যেমন সাক্ষীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তেমনি একজন ব্যক্তিকে আটক করার সময়ও সাক্ষীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে হবে।

পুলিশ রেগুলেশন ৩১৬- তে বলা হয়েছে, কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তলব করার অধিকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেই। একমাত্র যে পন্থায় তিনি কাউকে তার সামনে হাজির হতে বাধ্য করতে পারেন তা হলো তাকে গ্রেপ্তার করা। গ্রেপ্তার ছাড়া কোন অবস্থাতেই কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাজির হতে বাধ্য করা যাবে না।

উক্ত রেগুলেশনে আরও বলা হয়েছে, যখন কোন ব্যক্তিকে কোন অভিযোগের জবাব প্রদানের জন্য এমনভাবে হাজির করা হয় যে, সে প্রকৃতপক্ষে তার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে, তখন এরূপ ব্যক্তি পুলিশী হেফাজতে আছে বলে বিবেচনা করতে হবে।

সুতরাং, এটা আইনের সুস্পষ্ট বিধান যে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও যদি একজন অভিযুক্তকে তলব করা হয়, তাহলে তাকে গেপ্তার করা হয়েছে মর্মে ধরে নিতে হবে। সুতরাং জিজ্ঞাসাবাদের ওজুহাতে কোন অভিযুক্তকে তুলে নেওয়া যাবে না।

আমাদের পার্শ্ববরতী দেশ ভারতে ডি কে বসু বনাম স্টেট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল [(১৯৯৭) ১ এসসিসি ৪১৬] মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, গ্রেপ্তারে নিয়োজিত পুলিশ অফিসার একজন আসামীকে গ্রেপ্তারের সময় মেমো অব এ্যারেস্ট তৈরী করবেন যেখানে কমপক্ষে একজন সাক্ষী থাকবেন যিনি হবেন আসামীর পরিবারের কেউ অথবা অত্র এলাকার একজন সম্মানীয় ব্যক্তি যেখানে সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকবে এবং আসামীর কাউন্টার সিগনেচার থাকবে। সেখানে আসামী আটকের তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকবে।

যোগিন্দার কুমার বনাম স্টেট অব উত্তর প্রদেশ [১৯৯৪ (৪) এসসিসি ২৬০] মামলায় বলা হয়েছে, আসামীর কোন আত্মীয় বা বন্ধুকে আসামীর আটকের ব্যাপারে জানানো হয়েছে তা দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার ডায়রীভুক্ত করবেন।

সুতরাং আমাদের দেশেও একজন আসামীকে আটক করার সময় ভারতের মত মেমো অব এ্যারেস্ট থাকা অত্যন্ত জরুরী এবং সাক্ষীদের সম্মুখে আসামীর পরিবারকে তার আটকের সংবাদ জানানো যাতে তারা আইনজীবীর সাথে আসামীর অধিকার ও করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

গ্রেপ্তারকার্যে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট পুলিশ রেগুলেশনের অধীনে প্রস্তুতকৃত নির্দেশনামূলক ফর্ম/মেমোরেন্ডাম থাকবে যেখানে একজন আসামীকে কখন, কোথায়, কাদের সম্মুখে কী পরিস্থিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- তা উল্লেখ থাকতে হবে। যেমন আসামীর পরিচয়, শারীরিক অবস্থা, আটকের সময়, উপস্থিত সাক্ষীদের নাম, উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আসামীর নিকটাত্মীয়কে ফোনকল (লাউডস্পিকার) করে জানানো হয়েছে কী না কিংবা স্পেশাল মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানানো হয়েছে কী না। আসামী যদি কোন আইনজীবীকে ফোন করতে চায়- তা দেওয়া হয়েছে কী না।

যদি গ্রেপ্তারের সময় সাক্ষী না পাওয়া যায়- তা মেমোরেন্ডামে লিপিবদ্ধ করবেন এবং যত দ্রুত সম্ভব আসামীকে নিকটস্থ মহল্লা, বাজার, মোড়ে উপনীত করবেন এবং আসামীকে আটক করার সময় ও পরিস্থিতি উল্লেখ করে সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন এবং তাদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারকে ফোন কল করে বা স্পেশাল মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানানো হয়েছে কিনা সেটিও মেমোরেন্ডামে উল্লেখ করবেন।

উক্ত মেমোরেন্ডাম মামলার জব্দ তালিকার মত জুডিসিয়াল রেকর্ডের অংশ হবে। তবেই বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে একজন নাগরিক যে অধিকারগুলি পাওয়ার কথা- তা রক্ষিত হবে প্রকৃত অর্থে। এক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার কার্যকরীভাবে বাস্তবায়নের জন্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক যদি অনুচ্ছেদ ৩৩-এর আরও বিশদ ব্যখ্যা প্রদান করা হয়, তাহলে আটকের ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার আরও বেশি সুরক্ষিত হবে।

সহজভাবে, বিচার ব্যবস্থায় তিনটি পক্ষ থাকে তা হলো- বাদী, আসামী এবং বিচারক। এখন বাদী যদি আসামীকে নিরপেক্ষ লোকজনের অনুপস্থিতিতে বা গোপনে তুলে নিয়ে যায়, তাহলে নিশ্চই বাদী কর্তৃক আসামী ক্ষোভের শিকার হবেন না তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আইনের দৃষ্টিতে ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্র এবং একজন স্বতন্ত্র অভিযোগকারী উভয়েই একটি মামলার বাদী হিসেবে বিবেচিত। যদি তা-ই হয় তাহলে রাষ্ট্র তথা বাদী কর্তৃক একজন আসামীকে আটক করে বিচারকের হাতে পৌছানোর বিষয়টি নিরপেক্ষ দু’একজন লোকজনের সামনে যাতে সংঘটিত হয় এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকে সেজন্য আসামীকে আটক করার সময় অবশ্যই সাক্ষীদের সম্মুখে এ্যারেস্ট করতে হবে এবং মেমো অব এ্যারেস্ট তৈরী করতে হবে। একটি মামলার জব্দ তালিকা যেমন বিচারের সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়, তেমনি মেমো অব এ্যারেস্টও আদালতকে বিবেচনায় নিতে হবে। তবেই সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ যথাযথভাবে প্রতিপালন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।