বিচারকের জবানবন্দি: তিব্বত ট্যালকম পাউডার ও একটি সংসারের গল্প
মতিউর রহমান; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), পঞ্চগড়।

বিচারকের জবানবন্দি: তিব্বত ট্যালকম পাউডার ও একটি সংসারের গল্প

মতিউর রহমান: 

আসমা বেগমের বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। দীর্ঘ আট বছরের সংসার জীবনে হয়েছে তিনটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। স্বামী সাইফুল ইসলাম কৃষিজীবী। যৌতুকের কারণে স্বামী নির্যাতন করে, তেল, সাবান, কাপড়-চোপড় কিনে দেয় না ঠিকমতো। দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতে থাকতে থাকতে অবশেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে আসমা। পুলিশ তদন্ত করেছে মামলাটি। ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।

আজ আদালতে দীর্ঘ শুনানি হয়। শুনানিতে স্পষ্ট বোঝা যায় স্বামীর বিরুদ্ধে আসমার অভিযোগগুলো অমূলক নয়। বউকে সারা বছরে দুটি শাড়ি কিনে দেয় না সাইফুল। বউয়ের কাপড়চোপড় তেল সাবান দিতেও কার্পণ্য তার। টাকা জমিয়ে জমিয়ে শুধু জমি বন্ধক নেওয়ার ধান্দা তার।

বউকে নিয়ে কখনো বাজারে গিয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করি সাইফুলকে। সাইফুল না সূচক জবাব দেয়। আট বছরের সংসার জীবনে বউকে বেড়াতে নিয়ে যায়নি কোথাও। জামিন নিতে কত টাকা এনেছেন, সাইফুলকে জিজ্ঞাসা করি আমি। সাইফুল বলতে চায় না। উকিল মুহুরি খরচ বাদে এখনো সাইফুলের পকেটে টাকা আছে তা বোঝা যায়। সাইফুলকে টাকা বের করতে বলে আদালত।

টাকা দিলে কি জামিন দিবেন স্যার? সাইফুল জিজ্ঞাসা করে। এরপর জামার পকেট থেকে সবমিলে বের করে ৪,৪৯০/- টাকা। সাইফুল তখনও বুঝতে পারিনি টাকা দিয়ে কি হবে! প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় কেনাকাটার জন্য সব টাকা তুলে দেওয়া হয় আসমার হাতে। পুরো দুই ঘন্টা সময় দেয়া হয় বাজার করার জন্য। আসমা কে সাথে নিয়ে সাইফুল বাজারে যায়। আসমাও জীবনে প্রথম স্বামীকে নিয়ে বাজারে যায় আজ।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাজার থেকে ফিরে আসে তারা। মোটামুটি সাড়ে তিন হাজার টাকার বাজার করেছে আসমা। কিনেছে প্যারাসুট নারিকেল তেল, তিব্বত টেলকম পাউডার, ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম, হাতের চুড়ি, থ্রি পিস, সাবান, জুতা, বাচ্চাদের জন্য জামা ইত্যাদি।

এরপর স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামায় সাইফুল বলে আর কখনো স্ত্রীকে কষ্ট দেবেনা, কৃপণতাও করবে না কখনো। শেষে আসমা সাইফুলের হাত ধরে। তিন সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে ফিরে যায় বাড়িতে।

লেখক: মতিউর রহমান; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), পঞ্চগড়।