প্রবেশন : অপরাধীর শাস্তি নয়, সংশোধন যার লক্ষ্য
সাঈদ আহসান খালিদ; সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রবেশন : অপরাধীর শাস্তি নয়, সংশোধন যার লক্ষ্য

সাঈদ আহসান খালিদ : চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম সম্প্রতি মাদক মামলার এক রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দোষ স্বীকার করায় তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর বদলে প্রবেশন আইনের অধীনে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। বিচারিক আদেশে প্রদত্ত নির্দেশনার একটি হচ্ছে, অভিযুক্তকে এক বছর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।

এই আদেশ স্বাভাবিকভাবেই দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকে প্রশংসা করছেন আবার কেউ কেউ সমালোচনা করছেন, কেউ আবার বিক্ষুব্ধ হয়েছেন- বিচারক কীভাবে “শাস্তি” হিসেবে কাউকে নামাজ পড়া-র আদেশ দিতে পারেন? শাস্তি হিসেবে নামাজ পড়ার কথা আইনে বা দণ্ডবিধিতে আছে নাকি? ইত্যাদি।

দেশের প্রচলিত আইন ও অপরাধবিজ্ঞান সম্বন্ধে না জানার কারণে আসলে এই তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। এতে দোষ নেই। বিষয়টির আইনগত ব্যাখ্যা জানলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, প্রবেশন কোন শাস্তি নয়। এটি সংশোধনের একটি সুযোগ। এমন নয় যে এই বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট-ই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিচারক যিনি এমন ব্যতিক্রমী আদেশ দিয়েছেন যে তাঁকে সাঁড়াশি আক্রমণের লক্ষ্য বানাতে হবে। তিনি পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করেছেন মাত্র৷

উদাহরণস্বরূপ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব ২০২০ সালে প্রতারণার এক মামলায় অভিযুক্ত দোষী প্রমাণিত হলেও আসামীকে কারাগারে পাঠানোর পরিবর্তে প্রবেশন এর সুযোগ দিয়ে শর্ত দিয়েছিলেন যে তাকে বই পড়তে হবে, গাছ লাগাতে হবে, খাওয়াতে হবে এতিমদের, নিয়মিত পড়তে হবে নামাজ, মাদক থেকেও দূরে থাকতে হবে।

২০২০ সালে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন, মাদক মামলার এক আসামিকে কারাদণ্ডের পরিবর্তে আট শর্তে এক বছরের প্রবেশন প্রদান করেন যার মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা ও মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।

একই বছর মাগুরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান পারিবারিক বিরোধের জেরে সৃষ্ট সহিংসতার এক মামলায় কারাদণ্ডের পরিবর্তে অভিযুক্তদের প্রবেশন দেন। আদেশে লেখা ছিলো- প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর ২টি বই (জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরের চিঠি), ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরও ২টি বই পড়বেন এবং আগুনের পরশমণি সিনেমাটি দেখবেন; এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে ২টি বনজ ও ৩টি ফলদ মোট ৫টি গাছ লাগাবেন।

২০২১ সালে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ৩৫টি মামলায় রায়ে ৪৯ জন অভিযুক্ত শিশুকে কারাদণ্ডের বদলে বই উপহার দিয়ে শিশুদেরকে পরিবারের জিম্মায় দেন।

একই বছর কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী এক রায়ে কারাদণ্ডের বদলে আসামীকে ৬০ দিনের মধ্যে ১০০টি বৃক্ষ রোপন, ২ বছর সেই বৃক্ষ পরিচর্যা এবং ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের শর্তে প্রবেশন দেন।

২০২২ সালে মারামারির একটি মামলায় দুই আসামিকে ছয় মাসের কারাভোগের বদলে ১০০ গাছ রোপণসহ বিভিন্ন শর্তে মুক্তি দিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান।

সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বঙ্গবন্ধুর অবমাননার এক মামলায় প্রবেশন মঞ্জুর করে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান রায়ে এই শর্ত দেন যে, কারাগারে যাওয়ার বদলে আসামিদেরকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, “কারাগারের রোজনামচা” এবং “আমার দেখা নয়াচীন”- বই তিনটি পড়তে হবে।

এমন উদাহরণ আরো অনেক রয়েছে এবং বিচারক ও আইনজীবীদের সচেতনতার কারণে প্রবেশন প্রদানের এই প্রবণতা বাড়ছে যা প্রশংসনীয়। এমনকি যে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে তিনিও গত ১৪ জুন এক শিল্পীর করা মানহানির মামলায় চট্টগ্রামের এক সংগীতশিল্পীকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বদলে ছয় মাস পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন কেননা অভিযুক্ত বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন।

প্রবেশন আইনের অধীনে বিচারক তাঁর আদেশে অপরাধীকে সংশোধনের নিমিত্তে যথোপযুক্ত শর্ত আরোপ করে কারাদণ্ডের পরিবর্তে প্রবেশন দিতে আইনগত ক্ষমতার অধিকারী। কী শর্ত আরোপ হবে সেটি বিচারকের Discretion বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। এটি প্রতিটি মামলার কন্টেক্সট অনুযায়ী নির্ধারিত হওয়াই স্বাভাবিক। সংশোধনের শর্ত হিসেবে গান শেখানোর আদেশ, সিনেমা দেখার আদেশ, বই পড়ার আদেশ, গাছ লাগানোর আদেশ দেওয়া গেলে নামাজ পড়ার আদেশ না দিতে পারার কোন যুক্তি অসার।

সব রেখে শুধু নামাজ পড়ার আদেশ নিয়ে সমালোচনা ধর্মবিদ্বেষের বহিপ্রকাশ ঘটায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অভিযুক্তের চারিত্রিক সংশোধনের সম্ভাবনা কি নেই? আর যদি সংশোধন না হয় বা শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে প্রবেশন আইনেই রয়েছে যে, বিচারক এই প্রবেশন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারেন।

এখন আসি প্রবেশন কেন প্রয়োজন?

আমাদের আদালতগুলো মামলায় ভারাক্রান্ত, আমাদের কারাগারগুলো উপচে পড়ছে কয়েদিতে, ওদিকে পর্যাপ্ত অপরাধী পাওয়া না যাওয়ায় ২০১৩ সালে সুইডেন চারটি কারাগার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে! অপরাধীর অভাবে নেদারল্যান্ডস প্রায় এখন ‘কারাগার-শূণ্য দেশ’ ঘোষিত হওয়ার পথে- এ পর্যন্ত মোট ১৮টি জেলখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে নেদাল্যান্ডস সরকারকে! নিজেদের জেলখানা অপরাধীশূণ্য থাকায় বন্ধ করার আগে এগুলোকে সচল রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রতিবেশি দেশ নরওয়ে থেকে ২৪০ জেলবন্দি অপরাধী এনে নেদারল্যান্ডসের একটি জেল কোনভাবে সচল রাখা হয়েছিল!

সেসব দেশে অপরাধের হার কম- তাই কারাগারে অপরাধীর সংখ্যা কম- এই সত্যের পাশাপাশি অপরাধ ও অপরাধীর প্রতি জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিও অপরাধ হ্রাস এবং কারাগার বিলুপ্তির একটি বড় অনুঘটক। ‘পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করো’- এই আপ্তবাক্যকে তাঁরা ভালোভাবে রপ্ত করেছে, ‘শাস্তি নয়, সংশোধন করো’- এই নীতিকে তাঁরা আঁকড়ে ধরেছে, শাস্তির ‘Retributive’ কিংবা’ Deterrent’ মতবাদ থেকে সরে এসে ‘Reformative’ কিংবা ‘Restorative Justice’ এ আস্থা রাখছে- এটির সুফল তাঁরা পাচ্ছে, কারাগার অপরাধীশূণ্য হয়ে যাওয়ার পেছনে এসবই মূল কারণ।

অন্যদিকে অপরাধ নির্মূলে অপরাধীকে ‘চৌদ্দ শিক’ এর ভেতরে আটকে রাখতে পারলেই আমরা চোখ বুজে শান্তি পাই, ভাবি- ‘প্রলয় বন্ধ হলো’। একজনের প্রলয় রুদ্ধ করতেই আমরা পাই- নিত্য নতুন ‘প্রলয়ঙ্করী’ অপরাধের দেখা, আরো কড়া আইন করো, কড়া শাস্তি, বাড়তি দণ্ড মেয়াদ, অপরাধী ধরো, শিকে পুরো। ফলাফলঃ কারাগারে ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে’- নতুন নতুন কারাগার স্থাপনের দরকার পড়ে, কেন্দ্রীয় কারাগার কয়েদির স্থানাভাবে স্থানান্তরিত হয় বর্ধিত কলেবরের নতুন ঠিকানায়।

শাস্তি বলতে আমরা এখনো ঐতিহাসিক ‘কারাদণ্ডাদেশ’ এর মধুতে আটকে আছি, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৫৩ ধারায় শাস্তির যে পাঁচ প্রকারভেদ তাতেও ‘দণ্ডাধিক্য’- মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সশ্রম কারাদণ্ড/ বিনাশ্রম কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত আর জরিমানা। কারাদণ্ড বা জরিমানার কোন বিকল্প আজো সংযোজিত হয়নি, রেস্টোরেটিভ জাস্টিস ‘অপরাধ বিজ্ঞান’ এর বইয়ে আর আইন পরীক্ষার খাতায় শোভা পাচ্ছে, পেনাল কোডে জায়গা হয় না।

গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের কথা আলাদা কিন্তু ছোট খাটো অপরাধে ছিঁচকে অপরাধীদেরকেও পেনাল কোড দেখিয়ে সোজা কারাগারে পাঠানো হয়, তাদের সংশোধনের, সমাজে পুনর্বাসনের প্রতি আমাদের আইনের বিচারক ও আইনজীবীদের আশ্চর্য অনীহা! অথচ যে কখনো কারাগারে যায়নি সেই অপরাধীটিও কারাগারে গিয়ে সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, সখ্য গড়ছে পুরাতন ও দাগি অপরাধীদের সাথে, পরিবার-সমাজ-বন্ধু- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্যুত ও অচ্ছুৎ অবস্থায় কারাজীবন শেষ করে সে যখন বেরিয়ে আসে, দেখে- ‘পৃথিবী বদলে গেছে’।

বাংলাদেশে Probation of Offenders Ordinance, 1960 নামে পাকিস্তান আমলে প্রণীত একটি আইন কার্যকর আছে। এই আইনের ৪ ও ৫ ধারায় একজন অপরাধী কে দণ্ডদানের বদলে বিচারক যথাক্রমে ‘শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি’ কিংবা একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্তাবধানে ‘প্রবেশন আদেশ’ এর মাধ্যমে মুক্তি দিতে পারেন, এই প্রবেশনের মূল উদ্দেশ্য- অপরাধীকে সমাজে সংযুক্ত রাখা, অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ প্রদান এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তিরোধ করা। মনে রাখা উচিত- ‘প্রবেশন’ কিন্তু কোন ‘শাস্তি’ বা Punishment নয়।

উপরোক্ত নির্দিষ্ট আইনটি ছাড়াও ‘কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন- ২০০৬’ এবং শিশু আইন-২০১৩ ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন কিছু আইনে প্রবেশন প্রদানের আইনগত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের বিচারক ও আইনজীবীদের বেশিরভাগ দণ্ডদানে যেমন উৎসাহী, প্রবেশনের এই আইনগত সুযোগটি প্রয়োগে একেবারে বিপরীত। অথচ কারাদণ্ডের বদলে সংশোধনমূলক বিচার প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবেও দায়বদ্ধ। ‘United Nations Minimum Standard Rules for Non-Custodial Measures’ এর ১.৫ ধারায় এই বাধ্যবাধকতার উল্লেখ আছে।

অপরাধীকে সমাজে সংযুক্ত রেখে সংশোধনমূলক শাস্তিদানের বিশ্বব্যাপী আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম- ‘Community Servicing’ বা ‘Community Sentencing’- যেটি বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় থিওরি কিংবা প্র্যাকটিস- প্রায় সবখানেই অনুপস্থিত। এই ব্যবস্থায় অপরাধীকে জেলে না পাঠিয়ে সমাজকল্যাণমূলক কোন কাজে বিনা পারিশ্রমিকে নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টা প্রদানের নির্দেশ দেয় আদালত। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। কারাগারের অন্যান্য দাগি অপরাধীদের সান্নিধ্যের বদলে এই ব্যবস্থায় অপরাধী সামাজিক কল্যাণে আত্মনিয়োগের সুযোগ পায়- তাঁর জীবন দর্শন পরিবর্তন ও আত্ম সংশোধনের সমূহ সম্ভাবনা ও পথ তৈয়ার হয়।

বিশ্বে বিভিন্ন দেশে সাধারণ নাগরিক তো বটেই নায়ক- নায়িকা, সুপারমডেল, জাতীয় দলের খেলোয়াড প্রমুখ পাবলিক ফিগার সেলিব্রেটিদের কে আইন ভঙ্গের দায়ে আদালত প্রায় সময় কারাদণ্ডের বদলে ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ প্রদানের আদেশ দিয়ে থাকেন। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করায় আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজ কে ২৫০ ঘন্টা ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত, গৃহপরিচারিকাকে মোবাইল ছুঁড়ে মারার অপরাধে সুপার মডেল নওমী ক্যাম্পবেলকে ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ এর আদেশ দেয় আদালত। তাঁর কাজ ছিল- টানা ৫ দিন ৭ ঘণ্টা সময়ধরে বাস ও রেল স্টেশনের মেঝে পরিষ্কার করা! একই শাস্তি থেকে রেহাই পায়নি হলিউডের লিন্ডসে লোহান কিংবা প্যারিস হিলটনের মতো মহাতারকারাও!

বাংলাদেশে’পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০’ একমাত্র আইন যেখানে এই ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ বা ‘সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদান’ কে কারাদণ্ডের বিকল্প শাস্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (ধারা- ৩০)। এটি বাংলাদেশের বিচার ও শাস্তি ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক। এমন বিধান সব আইনেই সংযোজন হওয়া জরুরি, সর্বাগ্রে প্রয়োজন পেনাল কোডে এটির অন্তর্ভুক্তি, একইসাথে চাই বিজ্ঞ বিচারক ও আইনজীবীদের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ।

শেষ করছি জুনায়েদ এর গল্প দিয়ে। জুনাইদের কথা মনে আছে? ওই যে সাদিয়ার জুনাইদ, তথা ‘গুটিবাজ জুনায়েদ’ যার মাইর দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, আমরা সবাই ছি ছি করেছিলাম, যাকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছিল, জেলে গিয়েছিল। সেই জুনায়েদ এখন অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে ফিরে এসেছে, ‘আলোর পরশ’ নামে পথ শিশুদের এক স্কুলে সে এখন পাঠদান করছে, স্বেচ্ছায়! যে অনুতপ্ত, যে ফিরতে চায় আলোর পথে- তাকে কারাগারের চৌদ্দ শিকে আটকে আর যাই হোক সমাজকে ‘অপরাধমুক্ত’ করা যায় না, দেশকে ‘কারাগারমুক্ত’ তো নয়ই।

কাজী শরীফুল এর মতো তরুণ বিচারকেরা জুনাইদ এর মতো মানুষদের আলোর পথে আনার ঠিক সেই কাজটিই শুরু করেছেন। প্রসব বেদনা ছাড়া নতুন কিছুর জন্ম হয় না। এই বেদনা অনিবার্য। তাই সমালোচনায় দমে যাওয়া যাবে না। বিচারককে অভিনন্দন জানাই।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।