রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া শিশুদের কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে : কক্সবাজারের জেলা জজ
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া শিশুদের কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে : কক্সবাজারের জেলা জজ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সহকারী জজ এবং টেকনাফ উপজেলার সহকারী জজ এ সার্টিফিকেট ইস্যু করছেন।

গত ২১ মার্চ কক্সবাজার শহরের হোটেল ওশান প্যারাডাইসে “Co-ordination Meeting on Strengthening local level Legal Aid Committees” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ তথ্য প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প গুলোতে আশ্রয় নেওয়া “Forcibly Displaced Myanmar Nationals” অর্থাৎ “বলপূবর্ক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক” এর জন্ম নেওয়া শিশুদের কি স্ট্যাটাস হবে- বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিয়ানমার সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া শিশুদের রোহিঙ্গাদের সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আদালতের ইস্যু করা সার্টিফিকেট থাকতে হবে। মিয়ানমার সরকারের এরকম দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সহয়তায় কক্সবাজারের টেকনাফের সহকারী জজ মো: ওমর ফারুক এবং উখিয়ার সহকারী জজ (ভারপ্রাপ্ত) ফাহমিদা সাত্তার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যুর দায়িত্ব পালন করছেন। কোর্ট সার্টিফিকেট ইস্যুর কাজ এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, সংবিধানে বিদেশী নাগরিকদের আইনের আওতায় আনার বিধান রয়েছে। সে বিধানের আলোকে দেশের প্রচলিত আইনে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমে রোহিঙ্গা ভিকটিমদের আইনী সহায়তা কিংবা রোহিঙ্গা অপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র। সেজন্য জনগণের সার্বিক কল্যানেই বিচার বিভাগ কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এদেশের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আইনশৃংখলা রক্ষা, উন্নয়নে সহ দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। এজন্য বিগত বছরের মতো ঈদুল ফিতরের পর কক্সবাজার জেলার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগ ও লিগ্যাল এইড অফিস এর উদ্যোগে মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হবে।

আদালতে সাক্ষী হাজির করাতে, মামলা তদন্তে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবেরা আন্তরিক সহযোগিতা করায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁদের ধন্যবাদ জানান।

ইউএসএইড’র প্রমোটিং পিস এন্ড জাস্টিস (পিপিজে) অ্যাকটিভিটি’র সহায়তায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাঈমা হায়দার।

কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি’র সঞ্চালনায় ইউএসএইড’র প্রমোটিং পিস এন্ড জাস্টিস (পিপিজে) অ্যাকটিভিটির সহায়তায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক ও জেলা জজ মোহাম্মদ আল মামুন।

মতবিনিময় সভার প্রারম্ভে বক্তব্য রাখেন, USAID’s Promoting Peace and Justice Activity এর Chief Of Party হিদার গোল্ডস্মিত। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার (অতিরিক্ত জেলা জজ) ফারাহ মামুন, কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো: শাকিল আহমেদ, কক্সবাজার সদরের ইউএনও মোহাম্মদ জাকারিয়া, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী প্রমুখ।

এসময় অন্যেন্যের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৪ মোঃ মোশাররফ হোসাইন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’র উপ পরিচালক (অর্থ ও হিসাব, যুগ্ম জেলা জজ) মোঃ হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মাহমুদুল হাসান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ, কক্সবাজারের ৩০ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।