প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও আদালতের রায়
মোঃ মনিরুল ইসলাম মিয়া; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও আদালতের রায়

মোঃ মনিরুল ইসলাম মিয়া: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। প্রস্তাবিত বিদ্যালয়গুলো তিনটি ধাপে জাতীয়করণ করা হয়। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলায় আদালতের রায় বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করবো।

জাতীয়করণের জন্য আওতাভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩ খ্রি. তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। উক্ত প্রজ্ঞাপন এর দফা ৩.০ অনুসারে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এমপিওভুক্ত, স্থায়ী নিবন্ধনপ্রাপ্ত, অস্থায়ী নিবন্ধনপ্রাপ্ত, বর্তমানে চালু থাকা কমিউনিটি এবং সরকারি অর্থানুকূল্যে এনজিও কর্তৃক নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৭ মে ২০১২ তারিখের পূর্বে স্থাপিত ও পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ, ক্ষেত্রমতে প্রযোজ্য বিধি-বিধান ও নীতিমালার আলোকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে, এই সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত হইবে।

জাতীয়করণের আওতাবহির্ভূতপ্রাথমিক বিদ্যালয়

উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন শাসিত/আধা স্বায়ত্বশাসিত/বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক, নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত ও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিগ্রহণের জন্য বিবেচিত হইবে না; প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করা স্বত্ত্বেও জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হইতে অনিচ্ছুক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অধিগ্রহণের জন্য বিবেচিত হইবে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণে কমিটি

জাতীয়করণের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয়সমূহের সম্পদ, অবকাঠামোগত অবস্থা, পাঠদান পরিস্থিতি, শিক্ষকের যোগ্যতা ও নিয়োগপদ্ধতি বাস্তব যাচাইয়ের মাধ্যমে অধিগ্রহণের উপযুক্ত বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকগণের চাকুরী সরকারিকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে উপজেলা/থানা, জেলা ও জাতীয়পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়।

উপজেলা/থানার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য-সচিব ও অন্যান্য তিনজন সদস্যর সমন্ধয়ে উপজেলা/থানা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। মহানগরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি আহবায়ক, সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য-সচিব ও অন্যান্য তিনজন সদস্যর সমন্ধয়ে মহানগর যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

তিনটি কমিটির ২য়টি হলো জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি, জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য-সচিব ও অন্যান্য তিনজন সদস্যর সমন্ধয়ে জেলা যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত ৩য় কমিটিটি হলো কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক ও  উপ—সচিব (বিদ্যালয়)কে সদস্য-সচিব করে অন্যান্য পাঁচজন সদস্যর সমন্ধয়ে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করনে তিনটি কমিটির কর্মপরিধি

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত তিনটি কমিটি উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য গঠিত। উক্ত কমিটির নিজস্ব কর্মপরিধি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩ খ্রি. তারিখের প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।

ক. উপজেলা/থানা যাচাই-বাছাই কমিটির কর্ম-পরিধি

উপজেলা/থানা যাচাই-বাছাই কমিটি বিদ্যালয় জাতীয়করণের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক কমিটি। এই কমিটি সকল বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট দলিলপত্র পরীক্ষাপূর্বক অধিগ্রহণযোগ্য বিদ্যালয়ের তালিকা প্রণয়ণ, অধিগ্রহণের জন্য সুপারিশকৃত বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের যোগ্যতা, নিয়োগ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্যাদি পরীক্ষাপূর্বক সরকারিকরণযোগ্য শিক্ষকের তালিকা প্রণয়ন ও বিদ্যালয় অধিগ্রহণ ও শিক্ষকের চাকুরী সরকারিকরণ সম্পর্কে সুপারিশ সহ সংযুক্ত ছকে (ছক-ক, খ, গ ও ঘ) প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির বরাবর প্রেরণ করবে।

খ. জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কর্ম-পরিধি

উপজেলা/থানা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশকৃত বিদ্যালয়সমূহের দলিলপত্র ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পরীক্ষাসহ দৈবচয়ন (Random) ভিত্তিতে ন্যূনতম ১০% বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন, চাকুরী সরকারিকরণের জন্য উপজেলা/থানা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের যোগ্যতা, নিয়োগ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্যাবলী যাচাই, যাচাই-বাছাই শেষে বিদ্যালয় অধিগ্রহণ ও শিক্ষকের চাকুরী সরকারিকরণ সম্পর্কে সুপারিশ/মতামতসহ তথ্যাদি পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সে প্রেরণ করবেন।

গ. কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের কর্ম-পরিধি

উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটিকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান, জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশকৃত বিদ্যালয়সমূহের দলিলপত্র ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পরীক্ষাসহ ন্যূনতম ১% দৈবচয়ন (Random) ভিত্তিতে পরিদর্শন, জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক চাকুরী সরকারিকরণের জন্য সুপারিশকৃত শিক্ষকদের যোগ্যতা, নিয়োগ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্যাবলী পর্যালোচনা, উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের বিষয়ে কোন আপত্তি উত্থাপিত হইলে তাহা নিষ্পত্তিকরণ, বিদ্যালয় অধিগ্রহণ এবং শিক্ষকদের চাকুরী সরকারিকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি, জাতীয়করণ যোগ্য বিদ্যালয় ও চাকুরী সরকারিকরণের জন্য শিক্ষকদের তালিকা চূড়ান্তকরণ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের শর্তাদি   

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়রকরণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩ খ্রি. তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করেন উক্ত প্রজ্ঞাপন ৪.০ অনুসারে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি, জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি ও কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স কর্তৃক অধিগ্রহণযোগ্য বিদ্যালয় বাছাই এবং শিক্ষকের চাকুরী সরকারিকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নকালে নিম্নবর্ণিত শর্তাবলী পূরণ করার কথা বলা হয়েছে।

(ক) বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকিতে হইবে;

(খ) বিদ্যালয়ের নামে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অবিচ্ছিন্ন জমি থাকিতে হইবে। তবে জমির পরিমাণ কম হইলে অথবা জমি ভিন্ন ভিন্ন দাগে থাকিলে বাস্তবতার আলোকে ক্ষেত্রবিশেষে শর্তটি শিথিলযোগ্য হইতে পারে;

(গ) ব্যক্তি নামে স্থাপিত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণের অর্থ বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত তহবিলে থাকিতে হইবে অথবা সরকার কর্তৃক এই শর্ত শিথিল করা হইয়াছে মর্মে প্রামাণ্য দলিল থাকিতে হইবে;

(ঘ) বিদ্যালয়টিকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয় হইতে হইবে অর্থাৎ ইহাতে ১ম হইতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চালু থাকিতে হইবে;

(ঙ) বিদ্যালয়ে ১ম হইতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকিতে হইবে। তবে চরাঞ্চল, চা বাগান, হাওড়-বাওড় ও পার্বত্য জেলাসমূহে অবস্থিত বিদ্যালয় ও কমিউনিটি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৫০ জন হইলেও চলিবে;

(চ) বিদ্যালয়ের ২ কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোন বিদ্যালয় না থাকিলে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১৫০ জনের কম (চরাঞ্চল, চা বাগান, হাওড়-বাওড় ও পার্বত্য জেলাসমূহে অবস্থিত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৫০ জনের কম) হইলেও তাহা অধিগ্রহণের জন্য বিবেচনা করা যাইবে;

(ছ) ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু নাই এইরূপ কমিউনিটি বিদ্যালয় ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হইয়া থাকিলে তাহা বিবেচনা করা যাইবে;

(জ) বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈতনিক হইতে হইবে;

(ঝ) বিদ্যালয়ে ১ম হইতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নির্ধারিত পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ব্যবহৃত হইতে হইবে;

(ঞ) উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন শাসিত/আধাস্বায়ত্বশাসিত/বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক, নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত ও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিগ্রহণের জন্য বিবেচিত হইবেনা;

(ট) প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করা স্বত্ত্বে ও জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হইতে অনিচ্ছুক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অধিগ্রহণের জন্য বিবেচিত হইবেনা;

শিক্ষকের চাকুরী সরকারিকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নকালে নিম্নবর্ণিত শর্তাবলী

(ক) বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকিতে হইবে।

(খ) বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের চাকুরীতে যোগদানকালীন সময়ে বা তারিখে প্রযোজ্য/ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকিতে হইবে।তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগকৃত হইয়া থাকিলে চাকুরী সরকারিকরণের পরবর্তী ৩ বৎসরের মধ্যে নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনের শর্তে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাবিহীন শিক্ষককেও বিবেচনা করা যাইবে।

(গ) ইতঃপূর্বে এমপিওভুক্ত হইয়াছে কিন্তু শৃঙ্খলাজনিত কিংবা প্রশাসনিক অথবা অন্যবিধ কারণে বর্তমানে এমপিও স্থগিত বহিয়াছে এইরূপ শিক্ষককেও বিবেচনা করা যাইবে।

(ঘ) বিদ্যালয়ে সাধারণভাবে ১ জন প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকিবে। তবে ৪০০ জনের অধিক ছাত্র-ছাত্রী আছে এমন বিদ্যালয়ে ৫ম শিক্ষকের পদ সৃজিত থাকিলে তাহা বিবেচনা করা যাইবে;

(ঙ) প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত হইয়া থাকিলে নির্ধারিত বয়সের কম অথবা বেশী বয়সে যোগদানকারী শিক্ষককে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত হওয়া সাপেক্ষে বিবেচনা করা যাইবে।

জাতীয়করণের আইন ও বিধিমালা

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য ১৯৭৪ সালের ০৫ ই ফেব্রয়ারী Primary Schools (Taking Over) Act, 1974 নামে একটি আইন করা হয় যাহা ৩১ অক্টোবর ১৯৭৩ হতে কার্যকর করা হয়। উক্ত আইনের ৩(১) ধারা অনুসারে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয় যাহা নিম্নরুপ:

Not with standing anything contained in any other law, rule, regulation or bye-law for the time being in force or in any contract or agreement, or in any deed or other instrument, the Government may by notification in the official Gazette, take any primary school on such date as may be specified in the notification.

উক্ত আইনের 3(b) ধারা অনুসারে শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান করা হয় যাহা নিম্নরুপ-

All teachers of the primary school shall become employees of the Government and shall hold their service under the Government on such terms and conditions as the Government may determine;

বিধিমালা

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে Primary Schools (Taking Over) Act, 1974এর ধারা ৬, ৩(২)(বি) এর সহিত পঠিতব্য এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকুরীর শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৩ প্রণয়ন করে।  উক্ত১৯৭৪ সালের আইনের ৩(২)(বি) ও২০১৩ সালের বিধিমালার বিধি ৪(১) অনুসারে কিছু শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বিধান রাখা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক পদের জন্য মামলা ও আদালতের রায় সমূহ

আমি প্রথমেই আলোচনা করেছিলাম যে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তিনটি ধাপে জাতীয়করণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এমপিওভুক্ত অর্থাৎ রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো জাতীয়করণ করা হয়। উক্ত রেজিষ্টার্ড বিদ্যালয়গুলোতে ১ জন প্রধান শিক্ষক ও ৩ জন সহকারী শিক্ষককে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্বখাতে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী ও অস্থায়ী নিবন্ধনপ্রাপ্ত, পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত কমিউনিটি এবং সরকারি অর্থায়নে এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হয়। ২য় ধাপের বেশিরভাগ বিদ্যালয় গুলোতে ৪ জন সহকারী শিক্ষককে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্বখাতে নিয়োগ প্রদান করা হয়অর্থাৎ ২য় ধাপে কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়নি।

তৃতীয়ধাপে পাঠদানের অনুমতির সুপারিশপ্রাপ্ত এবং পাঠদানের অনুমতির অপেক্ষাধীন বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হয়। ২য় ধাপের ন্যায় উক্ত বিদ্যালয় গুলোতেও ৪ জন সহকারী শিক্ষককে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্বখাতে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ২য় ও ৩য় ধাপে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়নি।

উল্লেখ্য যে, ১ম ধাপে কিছু বিদ্যালয়ের কর্মরত প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ২য় ও তয় ধাপে সকল স্কুলের কর্মরত প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

কর্মরত প্রধান শিক্ষকদের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করায় বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগে সংবিধানের ১০২(২) অনুচ্ছেদের অধীনে রিট পিটিশন দায়ের করেন এবং অনেকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্টের কয়েকটি দ্বেত বেঞ্চ প্রধান শিক্ষকদের পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং কয়েকটি দ্বৈত বেঞ্চ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের ব্যাপারে observation প্রদান করেছেন।  নিম্নে কয়েকটি রায় আলোচন করা হালো।

মোসা সেলিনা পারভিন এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য (রিট পিটিশন নং-৪১৩৩/২০১৩) মামলায় কিছু observations প্রদান করেছেন যে, Respondents এর action স্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক এবং প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতা বিবেচনা করা উচিত।

৩ নং দরখাস্তকারী চার শিক্ষকের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র হলেও তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।একইভাবে আবেদনকারী নং ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬  এবং ৭ এরক্ষেত্রে, এটা প্রতীয়মান হয় যে তারা তাদের নিজ নিজ স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন কিন্তু তাদের কেউই তাদের নিজ নিজ স্কুলে প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পাননি।

উক্ত মামলায় Rule absolute করা হয় এবং নিমোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়

The concerned respondents are hereby directed to take positive steps and appoint the petitioners as Head Master/Head Mistress in their respective schools in which they are now serving, within a period of 60(sixty) days from the date of receipt of the certified copy of this judgment.

মোঃ তসলিম আলম ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য (৭৪ ডিএলআর (২০২২) ২৮১) মামলায় কিছু observations প্রদান করেছেন যে, রিট পিটিশননং ১৩৩৪৪/২০১৭ -এ গৃহীত রায়টি উল্লেখ করতে চাই।সেই মামলার তথ্যগুলো তাৎক্ষণিক রিট পিটিশনের অনুরূপ।

যাই হোক, উল্লিখিত রিট পিটিশনে, (“২০১৩ বিধি”) এর বিধি ৯(১) এবং বিধি ২(গ) এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। উক্ত রিটে ২০১৩ বিধির বিধি ৯(১) এর ”এবং উক্ত তারিখের অব্যবহিত পূর্বে নিয়োগ বিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিম্নে উক্ত শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হইবে” এং অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

subordinate legislation এর আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান আইন কার্যকর করা উক্ত আইন পরিবর্তন করা নয়; তদনুসারে সংসদ প্রশাসনিক সংস্থাগুলোকে যখন বিধি বা প্রবিধান প্রণয়নের জন্য কার্য অর্পণ করে, সংসদ স্বেচ্ছাচারী ও অযৌক্তিক বিধি প্রণয়নের অনুমতি দিয়েছে বলা যায় না।

আমাদের দৃষ্টিতে, ২০১৯ সালের বিধিমালার বিবি ৯ অযৌক্তিক ছিল কারণ,  যে শিক্ষকদের জাতীয়করণ করা হয়েছিল, তাদের পূর্বের চাকুরি মেয়াদ গণনা করা হবে কিন্তু তারা কখনই সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের সিনিয়র হবেন না এবং সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিম্নে উক্ত শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হইবে। আমাদের দৃষ্টিতে, যা জ্যেষ্ঠতার নীতিকে আঘাত করে এবং যা অত্যন্ত অযৌক্তিক। যার কারণে বিধি ৯ বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিল।

আদালত আরো একটি observation দেন যে, the Judgment of this Division, discussed above, has general applicability and is a judgment in rem. This is because, in declaring Rule 9, to the extent set out above, illegal, we have declared what the law is.

উপরোক্ত মামলাটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি তার কারণ হল বিধি-৯ বর্তমান রিট আবেদনকারীদের দাবির প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করছে। যদিও বর্তমান রিট পিটিশনাররা বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৯ চ্যালেঞ্জ করেনি, তবে আবেদনকারীরা বেআইনি ঘোষিত রায়ের সুবিধা নিতে পারে। আমরা এটা বলছি কারণ এবং পৃথক কোন প্রক্রিয়া শুরু করা যে কেউ আমাদের রায়ের উপর নির্ভর করতে পারে।

এটি স্পষ্ট যে, Impugned order ২০১৩ সালের বিধিমালার আলোকে জারি করা হয়েছিল। উক্ত বিধিমালার বিধি ৪ এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে জারি করা হয়ে ছিল। যাই হোক, বিধি ৪ বিচ্ছিন্নভাবে পড়া যাবে না। বিধি ৯ এর সাথে বিধি ৪ একই সাথে পড়তে হবে যেহেতু বিধি ৯ এ জ্যেষ্ঠতার বিধান রয়েছে।

সাধারণত নিয়োগ এবং জ্যেষ্ঠতা পৃথক বিধান এবং একসাথে পড়ার প্রয়োজন নেই তবে the instant case ভিন্ন।আবেদনকারীরা সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত নয়; তারা ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের পদনির্ধারণ তাদের জ্যেষ্ঠতার উপর নির্ভর করে। আমাদের দৃষ্টিতে, আবেদনকারীদের সহকারী শিক্ষক হিসাবে treat করার কারণ হল বিধি ৯।

আমরা যখন নিশ্চিতকরণ চেয়েছিলাম তখন Respondent No. 3 এর বিজ্ঞ কৌঁসুলিও এটি অস্বীকার করেননি। উপরে উল্লিখিত হিসাবে, বিধি ৯ অনুসারে, সরাসরি নিয়োগ ছাড়া অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষক করা যাবে না।

জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করেছেন। বিধিমালা, ২০১৩ ২(গ) একদিকে পূর্বের চাকুরি ৫০% গণনা করে  এবং অন্যদিকে বিধি ৯” একটি নির্দিষ্ট পদে নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে স্বীকৃত চাকরির মেয়াদকে প্রত্যাখ্যান করে”।

মোসা সেলিনা পারভিন এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য এর মামলা এবং বর্তমান রিট পিটিশনটি একই রকম।আমাদের দৃষ্টিতে, the petitioners of the instant writ petition stand exactly on the same footing. Therefore, justice demands similar treatment.

উক্ত মামলায় Rule absolute করা হয় এবং নিমোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয় “The respondents are directed to treat the petitioners as Headmaster of their respective schools either by way of issuance of fresh order of appointments or modification of the order dated 1-12-2016 bearing Memo No. 38. 007.015.0000.15.00.2013-402 in accordance with অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকুরীর শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৩ to the extent applicable, within a period of 3(three) months from the date of receipt of the copy of the Judgment and Order without fail.

ইতোমধ্যে, সরকার প্রধান শিক্ষক পদে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেছে। আপিলে writ maintainability বিষয়ে জোরালো চুক্তি উপস্থাপন হয়েছে যাহা বিচারিধীন আছে।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ের জন্য বেসরকারিপ্রাথমিকবিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। প্রধান শিক্ষক পদের ব্যাপারে কর্মরত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ আইনি লড়াই করে যাচ্ছেন। আপিল বিভাগের একটি পূনাঙ্গ রায়ের মাধমে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান আসবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : মোঃ মনিরুল ইসলাম মিয়া; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।