প্রসঙ্গ : আইন পেশার ইতিহাস ও আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা
অ্যাডভোকেট দীপজয় বড়ুয়া

প্রসঙ্গ ডাকাতি : অপরাধের ধরণ ও সাজা

দীপজয় বড়ুয়া : ডাকাতি এক ধরনের অপরাধ। কোনো মানুষের উপর বল প্রয়োগ করে, বল প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে অথবা তাকে ভয়ভীতি অবস্থার মধ্যে ফেলে, তার থেকে মূল্যবান দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলাই ডাকাতি। সাধারণ আইন অনুসারে ডাকাতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে যে, কোনো ব্যক্তি থেকে তার এখতিয়ারে থাকা সম্পত্তি নেওয়া বা কোনো ব্যক্তিকে ভয় বা বলপূর্বক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা নামই ডাকাতি। দেশভিত্তিক আদালতের আইন অনুসারে ডাকাতির সংজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে নাও মিলতে পারে।

ডাকাতি তার হিংস্র স্বভাবের জন্য চুরি থেকে আলাদা। বিভিন্ন ধরনের ডাকাতির মধ্যে একটি ডাকাতি হল, অস্ত্রসহ ডাকাতি, যেখানে অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। কিছু ডাকাতি আছে যেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। হাইওয়েতে অনেকসময় ডাকাতি করা হয় বা অনেকসময় পথচারীকে নির্বোধ বানিয়ে ডাকাতি করা হয়। এ ডাকাতিগুলো জনসমাগম আছে (যেমন: হাঁটতে হাঁটতে, পার্কে, রাস্তায় ইত্যাদিতে) এধরনের জায়গায় হয়। গাড়ি ডাকাতিও এমন এক ধরনের ডাকাতি, যেখানে বলপূর্বক বৈধ মালিকের থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়া চাঁদাবাজিও এক ধরনের অবৈধ কাজ, যেখানে জোর করে দ্রব্যাদি ছিনিয়ে নেওয়া হয়, এবং কোনো অর্থ পরিশোধ করা যায় না। এই চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অস্ত্রের পরিবর্তে প্রাথমিক ভাবে শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ ভাষাকে অপরাধীর অপভাষা বলা হয়। এছাড়া চলন্ত ট্রেনে ডাকাতি ও অনেক দেশে দেখা যায়।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৯১ ধারায় ডাকাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে পাঁচ (৫) বা ততোধিক ব্যক্তি মিলিতভাবে কোন দস্যুতা সংঘটিত করে বা করার উদ্যোগ নেয় কিংবা যেক্ষেত্রে মিলিতভাবে দস্যুতাকারী বা দস্যুতার উদ্যোগকারী ব্যক্তিগণের এবং উপস্থিত ও অনুরূপ দস্যুতা অনুষ্ঠানে বা এর উদ্যোগে সাহায্যকারী ব্যক্তিগণের মোট সংখ্যা পাঁচ বা ততোধিক হয় সেক্ষেত্রে অনুরূপ অনুষ্ঠানকারী, উদ্যোগকারী বা সাহায্যকারী প্রত্যেক ব্যক্তি ডাকাতি করে বলে গণ্য হবে।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৯৫ ধারা মোতাবেক যদি কোন লোক ডাকাতি করে, তবে উক্ত লোক যাবজ্জীবন বা ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দণ্ডিত হবেন। ডাকাতির অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনঅযোগ্য, আপোষঅযোগ্য, দায়রা আদালত কর্তৃক বিচার্য।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৯৬ ধারা মোতাবেক যদি মিলিতভাবে ডাকাতি অনুষ্ঠানকালে পাঁচ (৫) বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে যে কোন একজন অনুরূপ ডাকাতি অনুষ্ঠানকালে খুন করে তবে তাদের প্রত্যককে মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন বা ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দণ্ডিত হবেন। ডাকাতির অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনঅযোগ্য, আপোষঅযোগ্য, দায়রা আদালত কর্তৃক বিচার্য।

5 BLC(AD)21- It is not rare in our society that some body is arrested and thereafter money unlawfully demanded from him and on his failure to comply with the demand he is entangled in a false case showing recovery of illegal arms from him. In the same way it is not absent in our society that instead of filing application for T, I parade soon after holding of the occurrence there is a tendency to entangle innocent persons in false criminal cases after long time of the occurrence of the crime by holding T.I Parade. Therefore, immediately after the occurrence T.I. parade should be held. There is every possibility that delay in holding T.I parade may entangle innocent persons in false cases. To give punishment to the accused by holding T.I parade after long time of the occurrence is not sustainable.

41 DLR 32 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “সনাক্তকারী মহড়া পরিচালনাকারী অফিসারকে পরীক্ষা করা না হলে দণ্ডবিধির ৩৯৫/৩৯৭ ধারা সাজা সমর্থন করা যায় না। পূর্বে সনাক্তকারী মহড়া সম্পাদিত হলেও সাক্ষীগণ কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান আসামীদের সনাক্ত করতে পারে। এমনকি কোন আসামীর নাম উল্লেখ না করেও তাকে দেখাতে পারে।একাধিক সাক্ষী বিভিন্নভাবে আপীলকারীদের সনাক্ত করলে দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় সাজাদানের জন্য উহা যথেষ্ট সাক্ষ্য হয়”।

40 DLR 186 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “সনাক্তকরণ মহড়া নির্ভরযোগ্য হতে হবে। প্রথমতঃ সাক্ষী অভিযুক্ত লোককে চিনবে না। দ্বিতীয়তঃ ঘটনা সংঘটিত হবার পর অবশ্যই অভিযুক্ত লোককে দেখার তার কোন সুযোগ থাকবে না”।

19 DLR 662 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ সনাক্তকরণের ব্যাপারে তুচ্ছ ভুল ছাড়া সনাক্তকারী সাক্ষী কোনভুল করবে না”।

25 DLR 407 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ দন্ডবিধির ৩৯৭ ধারা উক্ত বিধির ৩৯৫ ধারার সম্পূরক। সে কারণে দুইটি পৃথক অভিযোগ গঠনের পরিবর্তে দণ্ডবিধির ৩৯৭ ধারাসহ ৩৯৫ ধারার অভিযোগ গঠন করতে হবে”।

41 DLR 239 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “দন্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় অভিযোগ গঠন করে আসামীকে ৩৯৭ ধারায় সাজা দেওয়া হয়। আসামীকে ৩৯৭ ধারায় বিচারের সম্মুখীন করা হয় নাই। সুতরাং ৩৯৭ ধারায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশ সমর্থন করা যায় না। কোন লোককে দণ্ডবিধির ৩৯৭ ধারায় দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা হলে একই মামলায় তাকে দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারার অপরাধের জন্য দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা যায় না”।

21 DLR(SC)161 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ দরখাস্তকারীকে বিচারাদাল্কত পৃথকভাবে দণদবিধির ৩৪২ এবং ৩৯৫ ধারায় দন্ডাজ্ঞা ও সাজা প্রদান করেন। আপীলে ৩৪২ ধারায় প্রদত্ত দন্ডাদেশ অবৈধ বলে দৃষ্ট হয়”।

21 DLR(SC) মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, Petitioners convicted and sentenced under section 342 and 395 P.C. Separately by the trial court; sentence imposed under section 342 P.C. using found illegal on appeal that does not affect the sentence imposed under section 395 P.C.

21 DLR(SC)385 মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের দ্বারা গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালগুলি বিশেষ ক্ষমতা আইনের তফসীলভূক্ত অপরাধের বিচার করে থাকেন। দণ্ডবিধির ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারা বিশেষ ক্ষমতা আইনের তফসীলভূক্ত ধারা নয়। সুতরাং এই ধারা দুইটির অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ আমলে নেয়ার এখতিয়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের নাই”।

দন্ডবিধির ৩৯৯ ধারা অনুসারে যদি কোন লোক ডাকাতি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তবে উক্ত লোক ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দণ্ডিত হবেন দন্ডবিধির ৪০০ ধারা অনুসারে যদি কোন লোক ডাকাতি সংঘটনের উদ্দেশ্য পরস্পর সঙ্ঘবদ্ধ রয়েছে,এইরূপ কোন দলে থাকে, তবে উক্ত লোক যাবজ্জীবন বা ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দণ্ডিত হবেন।

13 DLR 740 Nur Ali Gazi Vs. The State মামলা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “দন্ডবিধির ৪০০ ধারা অনুসারে উল্লেখিত অপরাধ প্রমাণ করতে অলে ইহার প্রমাণ করা অনাবশ্যক যে,অভিযুক্ত লোকের দলটি এক বা একাধিক ডাকাতি করেছিল। তবে অভ্যাসগতভাবে ডাকাত দলের সদস্য হওয়া মর্মে প্রমাণ না থাকলে এই ধারা অনুসারে সাজা দেওয়া যায় না। অত্র ধ্রারা অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, অভিযুক্ত লোক দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত দলের সংঘে নিবিরভাবে মেলামেশা করেছে”।

সুতরাং বলা যায় যে, কোনো ব্যক্তি থেকে তার এখতিয়ারে থাকা সম্পত্তি নেওয়া বা কোনো ব্যক্তিকে ভয় বা বলপূর্বক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা নামই ডাকাতি।

লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

তথ্যকণিকা : আইন শব্দসমূহ-এডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন, দণ্ডবিধির ভাষ্য- গাজী মোঃ শামসুর রহমান, দণ্ডবিধি- বাসুদেব গাংগুলী, উইকিপিডিয়া, 100 years Criminal Reference on The Penal Code- Advocate Md. Abul kalam Azad, The Penal Code- Advocate Md. Abul kalam Azad.