বন্দি স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে কারাগারে ‘কেবিন’ সুবিধা

কারাগারে প্রেম, প্যারোলে বেরিয়ে বিয়ে করলেন দুই কয়েদি

কারাগারে হয়েছিল পরিচয়। সেখানেই শুরু হয় প্রেম। আর দুই কয়েদির সেই প্রেমই পরিণতি পেল বৈবাহিক সম্পর্কে। না, এটা কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। বাস্তবে এ এক সত্য ঘটনা। এমনই এক প্রেম কাহিনির সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার।

সংশোধনাগারে বন্দি এই যুবক যুবতী আবদুল হাসিম ও শাহানারা খাতুনের প্রেমে বাধা হয়ে ওঠেনি বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে কারারক্ষীদের কেউই। মানবাধিকার সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি গত বুধবার (১২ জুলাই) দায়িত্ব নিয়ে মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে হাসিম ও শাহানারার চার হাত এক করালেন বিবাহ বন্ধনে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দি আবদুল হাসিমের বাড়ি অসমের দোরাং জেলার দলগাঁও থানা এলাকার রঙ্গনগারোপাথার গ্রামে। আর তাঁর প্রেমিকা শাহানারা খাতুন বীরভূম জেলার নানুর থানার উচকারণ-বালিগড়ির বাসিন্দা।

মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের কথা অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলায় হাসিম ৮ বছর ও খুনের মামলায় শাহানারা ৬ বছর ধরে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। সেখানেই হাসিমের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহানারার। পরিচয় গড়ায় প্রেমে। আর এদিন তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। দম্পতি পরিচয় পেয়ে খুশি দু‘জনেই। তবে মুক্তি না মেলা পর্যন্ত শ্রীঘরবাসী হয়েই থাকতে হবে নব দম্পতিকে।

কারাগারে প্রেম, প্যারোলে বেরিয়ে বিয়ে করলেন দুই কয়েদি
আইনিভাবে বিয়ে করে হাসিম-শাহানারা

হাসিম ও শাহানারা জানান, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দিদশাতেই তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান। তাতে তাঁদের দু’জনের পরিবারের কেউই আপত্তি করেন নি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য তাঁরা মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসিমের বাবা আবদুস সাত্তার নিজে তাঁর বন্দি মেয়ের ইচ্ছার কথা মানবাধিকার সংগঠনকে জানান।

এ বিষয়ে অনুমতির জন্য তিনি গত ১৬ই জুন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরির দ্বারস্থ হন। আবেদন মঞ্জুর হতেই শুরু হয় আবদুল হাসিম ও শাহানারা খাতুনের চার হাত এক করার প্রক্রিয়া।

এদিন মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে আইনীভাবে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে উপলক্ষ্যে তাঁদের দুজনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। বিয়ের পর দাম্পত্য সুখের সন্ধানে এদিনই তাঁরা বীরভূমের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন।

তবে সংক্ষিপ্ত ছুটি শেষে ১৬ জুলাই নবদম্পতিকে পুনরায় ফিরে যেতে হয়েছে জেলের জীবনে। এ নবদম্পতি জানান, “কপাল দোষে শ্রীঘরবাসী হয়েছি। এখন আমরা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছি। মুক্তি পেয়ে গেলে সুখের সংসার গড়ব।”

মানবাধিকার সংগঠনের কার্যকর্তা শামসুদ্দিন শেখ জানান,“আবদুল ধর্ষনের মামলা ও শাহানারা খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁরা দু’জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিল। তা নিয়ে তাঁদের পরিবার কারামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়। আবেদন মঞ্জুর হলে তাঁরা প্যারোলে মুক্তি পায়। এদিন তারা আইনীভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।”

এ প্রসঙ্গে কারামন্ত্রী জানান, পরিবারের কেউ মারা গেলে বা বিয়ের জন্য এক মাস পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়।

জেল সুপার সুদীপ বলেন, ‘এদের বিয়ের আবেদন পাওয়ার পর দপ্তরের এডিজি-র কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন আসায় প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে দু’জনকে।’