প্রকাশ্যে ধূমপান ও যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
হাইকোর্ট

৩৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন

যশোর সদরের মাইক পট্টি এলাকার হরিনাথ দত্ত লেনের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দীন আহমেদ ৩৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে বিজয়ী হয়েছেন। তাকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে ৫ শতাংশ হারে ১৮ লাখ টাকার বার্ষিক সুদ দিতে হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

আদালতে মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম শামসুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল। রাবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাব হোসেন।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজে এলএলবিতে ভর্তি হন। দুই বছর মেয়াদি পাস কোর্সে ১৯৮৮ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পরীক্ষা দেন মহিউদ্দীন আহমেদ। পরীক্ষার পর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর এলএলবি পরীক্ষা এবং খাতা মূল্যায়ন নিয়ে অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় এ নিয়ে খবর-প্রতিবেদনও হয়।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাবির সিন্ডিকেট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুরুতর অসদাচরণ, অবহেলা, দায়িত্বহীনতার দায়ে রাবির আইন বিভাগের দুই শিক্ষককে যথাক্রমে ৭ ও ১২ বছরের জন্য খাতা দেখা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু ওই বছর ৬ এপ্রিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলে মহিউদ্দীন আহমেদ অকৃতকার্য হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ‘দেওয়ানি কার্যবিধি এবং তামাদি আইন’ বিষয়ে ২৫ নম্বরের মধ্যে ২৪ পেয়েছেন। ১ নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হওয়ায় তিনি এ বিষয়ের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় উত্তরপত্র বিক্রি হয়ে গেছে।

পরে ওই বছরের শেষ দিকে তিনি যশোরের সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন তিনি। ১৯৯০ সালের ১৯ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে যশোরের জেলা জজ আদালতে আপিল করে রাবি কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাবির আপিল খারিজ করে দেন আদালত।

পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে (সিভিল রিভিশন) হাইকোর্টে আবেদন করে রাবি। ৬ বছর পর ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট রাবির সিভিল রিভিশনটি খারিজ করে দিয়ে জেলা জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের পর রাবি কর্তৃপক্ষ এলএলবির চারটি বিষয়ের উত্তরপত্রে মহিউদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত নম্বর গড় করে মহিউদ্দিনকে কৃতকার্য দেখায়। ২০০১ সালে তাকে এলএলবির সনদও দেওয়া হয়।

এরপর মহিউদ্দিন আহমেদ ২০০২ সালের ২২ জুন রাবি কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দেন। ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাকে জানানো হবে। এ অবস্থায় মহিউদ্দিন আহমেদ আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে যশোর বারে আইন পেশায় যুক্ত হন।

এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার ব্রেইন স্ট্রোক করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। কয়েক দফা ব্রেইন স্ট্রোকে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় রাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও রাবি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তাকে কিছুই জানায়নি।

২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ও ৫ নভেম্বর, ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮ মার্চ রাবি রেজিস্ট্রারের দপ্তরেও আবেদন করেন। প্রতিকার না পেয়ে ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও আবেদন করেন মহিউদ্দিন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশন রাবি কর্তৃপক্ষকে মহিউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দিয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় ২০২০ সালে ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠান মহিউদ্দিন আহমেদ।

আইনি নোটিশের পরও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানির পর উচ্চ আদালত তার ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল জারি করেন। কেন তাকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। চূড়ান্ত শুনানির পর রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন আদালত।

রায়ের পর মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে আসিফ মাহরিয়ার সৌম্য বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় পার করছি। আশা করছি, রাবি কর্তৃপক্ষ রায় মেনে নিয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।