কক্সবাজারে পাচারকালে বিচারকের বদান্যতায় উদ্ধার হলো ৩ রোহিঙ্গা শিশু সহ ৪ জন
ছবি: (বামে) পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া ৪ জন; (ডানে) পাচারের মূল হোতা শামসুল আলম

কক্সবাজারে পাচারকালে বিচারকের বদান্যতায় উদ্ধার হলো ৩ রোহিঙ্গা শিশু সহ ৪ জন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : অবৈধভাবে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া পাচার হওয়ার সময় বিচারকের বদান্যতায় পাচার হওয়া থেকে বেঁচে গেছে তিন রোহিঙ্গা শিশু সহ চার জন।

টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ রোডের সমুদ্র সৈকতের লম্বরীঘাটে গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

টেকনাফ থানা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য নির্বাচনি কাজে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে যাওয়ার সময় লম্বরীঘাটে মহিলা সহ কিছু মানুষের জটলা দেখতে পান।

জটলার বিষয়ে বিচারক মৈত্রী ভট্টাচার্য জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুদেরকে প্ররোচিত করে, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে যন্ত্রচালিত কাঠের বোটে করে তাদের মালয়েশিয়া পাচারের জন্য এখানে জড়ো করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন।

এসময় বিচারক মৈত্রী ভট্টাচার্য তাঁর সাথে থাকা কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের হিসাব সহকারী ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সহায়ক স্টাফ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশের কনস্টেবল আবদুল কাইয়ুম ও কনস্টেবল মোহাম্মদ রাফিকে মানব পাচারকারীদের আটক করতে নির্দেশ দেন।

পাচারকারীরা টের পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থল থেকে পাচার হতে যাওয়া কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুস সাত্তার ও জুলেখা বেগমের পুত্র আরিফুল ইসলাম (১৯), উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের আবুল কালাম ও সাজিদার কন্যা রোহিঙ্গা শিশু বিবি আয়েশা (১২), উখিয়ার কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের মোস্তাক আহমদ ও উম্মে ছলিমার কন্যা রোহিঙ্গা শিশু তাসফিয়া (১৪) এবং উখিয়ায় শফিউল্লাহকাটা ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের কালা মিয়া ও মমতাজের কন্যা রোহিঙ্গা শিশু বুশরা (১২) কে উদ্ধার করা হয়।

পরে টেকনাফ থানা কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে পুলিশ এসে পাচার হতে উদ্ধারকৃতদের তাদের হেফাজতে নিয়ে নেন এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেংগুরবিল গ্রামের আমির হামজার পুত্র পলাতক শামশুল আলম প্রকাশ কালাবাম্বুর মালিকানাধীন একটি যন্ত্রচালিত কাঠের বোট জব্দ করে।

এ ঘটনায় পাচার থেকে বিচারক মৈত্রী ভট্টাচার্যের বদান্যতায় উদ্ধার হওয়া আরিফুল ইসলাম, রোহিঙ্গা শিশু বিবি আয়েশা, তাসফিয়া, বুশরা এবং মূল পাচারকারী ও বোটের মালিক আমির হামজার পুত্র পলাতক শামশুল আলম প্রকাশ কালাবাম্বুকে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। টেকনাফ থানার এসআই সনজীব কুমার পাল বাদী হয়ে করা মামলায় ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের ৩১/৩৪/৩৬ ধারা এবং ১৯৪৬ সালের বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। টেকনাফ থানার মামলা নম্বর : ১৩, তারিখ : ০৬/০১/২০২৪ ইংরেজি এবং যার জিআর মামলা নম্বর : ১৩/২০২৪ ইংরেজি (টেকনাফ)। মামলায় আরো ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃতদের শনিবার (৬ জানুয়ারি) টেকনাফ থানা থেকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। আদালতের ছুটিকালীন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিমুন তানজিন রোহিঙ্গা শিশু ৩ জনকে সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখতে এবং অপর আসামী আরিফুল ইসলামকে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন বলে টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত জিআরও আনিসুর রহমান জানিয়েছেন।

জব্দকৃত বোটের মালিক, পলাতক আসামী শামশুল আলম প্রকাশ কালাবাম্বু মানবপাচারের মূল হোতা বলে জানা গেছে।

মামলাটি তদন্তের জন্য টেকনাফ থানার এসআই মোহাম্মদ সোহেল আহমদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে টেকনাফ থানার ওসি মোহাম্মদ ওসমান গণি জানিয়েছেন।