ভিকটিম সেজে সাক্ষ্য দিতে এসে ধরা, বাদী-আসামী-ভুয়া সাক্ষীসহ কারাগারে ১১
কারাগার (প্রতীকী ছবি)

সাজা ভোগ করা বিদেশি কারাবন্দিদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

কোনো অপরাধে সাজা ভোগ করার পরও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে, এমন সাজাপ্রাপ্ত বিদেশিদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ মার্চ তারিখ ধার্য রেখেছেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে তালিকা দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার বিভূতি তরফদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর থানার বাসিন্দা গোবিন্দ উড়িয়াকে (২৬) আটক করে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী -বিজিবি’র সদস্যরা। ওইদিনই আটক ব্যক্তিকে শ্রীমঙ্গল থানায় সোপর্দ করে তার নামে মামলা করে বিজিবির হাবিলদার মো. রশিদ প্রধান।

তদন্তের পর ওই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান। ওইদিনই গোবিন্দ উড়িয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির, ১৮৯৮ এর ২৪২ ধারা ও দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন মৌলভীবাজারের চতুর্থ বিচারিক হাকিম এম. মিজবাহ উর রহমান।

অভিযোগ গঠনের সময় অনুপ্রবেশের দোষ স্বীকার করে নেন অভিযুক্ত গোবিন্দ উড়িয়া। ফলে অভিযোগ গঠনের দিনই মামলার রায় দিয়ে দেন বিচারক। দোষ স্বীকার এবং অতীতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ না থাকায় আদালত গোবিন্দ উড়িয়াকে ২ মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইতোপূর্বে মামলা সংশ্লিষ্টতায় হাজতবাস করে থাকলে উক্ত হাজতবাসকালীন দণ্ডবিধির ৩৫ক ধারা অনুসারে বাদ যাবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সে অনুসারে রায়ের দিন অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত গোবিন্দ উড়িয়া চারদিন বেশি হাজতবাস করে ফেলেছেন।

রায়ে বলা হয়, যেহেতু আসামি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন, সেহেতু ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আসামিকে বিধি মোতাবেক প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ রায়ের পর দুই বছর কেটে গেলেও কারাগার থেকে ছাড়া না পাওয়ায় গোবিন্দ উড়িয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন করে একটি টেলিভিশন চ্যানেল। ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গত ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার।

সাজা ভোগ করা কারাবন্দি গোবিন্দ উড়িয়ার কারামুক্তি ও তার প্রত্যাবাসনের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিটে।

রিটকারী এ আইনজীবী বলেন, অন্তর্বর্তী আদেশে গোবিন্দ উড়িয়াকে কারামুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশর পরও দুই বছর ধরে একজন বিদেশিকে তার দেশে ফেরত না পাঠিয়ে কারাবন্দি রাখা সংবিধানের ৩২ এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণার লঙ্ঘন।

অনুপ্রবেশের দায়ে দণ্ডিত ভারতের গোবিন্দ উড়িয়া সাজা ভোগ করার পরও কারাবন্দি রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, আদালতের নির্দেশ মতো গোবিন্দ উড়িয়াসহ সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি কারাবন্দিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করার নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে বিদেশি কারাবন্দিদের সাজার মেয়াদ শেষে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি বিভাগ করার নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভুত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, মৌলভীবাজার জেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।