খাদ্যদ্রব্য আইনের বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে: খাদ্যমন্ত্রী

খাদ্যদ্রব্য আইনের বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে: খাদ্যমন্ত্রী

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ পাস হয়েছে। বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি সংসদে অনুমোদন পেলে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। শুধু জরিমানা করেই ছাড় নয়, অবৈধ মজুতদারেরা না শোধরালে তাঁদের জেলে যেতে হবে।

আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নওগাঁ জেলার সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে হলে ব্যবসায়ীদের অধিক লাভের মনোভাব বদলাতে হবে। চালের দাম বাড়ার পেছনে চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠান—সবার দায় আছে। সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

আরও পড়ুনখাদ্যদ্রব্য আইনের ৪টি ধারার শাস্তি হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে

দেশের মানুষের সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নাই। সাধারণ মানুষের জন্য সরকারিভাবে ওএমএস চালু আছে। ওএমএস কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করতে ডিজিটাল কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস বিতরণ করা হবে। এতে এক ব্যক্তি বারবার চাল নিতে পারবেন না।’

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সাধন চন্দ্র মজুমদার আরও বলেন, ‘এখন স্পটে গিয়ে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স দিতে হবে। অনেকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটা লাইসেন্স নিয়ে কোটি কোটি টাকার পণ্য মজুত করে ফেলেন। এটা তো হতে পারে না। সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে থাকতে হবে।’

এ ছাড়া মজুতবিরোধী অভিযানকালে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কর্মস্থলে অবস্থান করার আদেশ জারি করতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

জেলা প্রশাসক গোলাম মওলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদে সাজা যাবজ্জীবন

খাদ্যপণ্য সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি মজুদ করলে দেশের প্রচলিত আইনে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনে খাদ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে কোনো ‘কাল্পনিক নামে’ বিক্রি করলেও দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

গেলো বছরের জুলাই মাসে সংসদে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল, ২০২৩’ পাস হয়। মূলত ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইন হয়।

এর আগে একই বছরের এপ্রিলে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া প্রস্তাবিত আইনটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

আইনসভায় অনুমোদিত এই বিল পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে আইন হিসেবে কার্যকর হয়।

আইনে খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যে কোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য, যথা চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি।

শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুত-সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

তবে এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুদ করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।

আইনে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে।

এছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ।

লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।

এতে আরো বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন–সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে চিহ্নিত হবে। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।

কিন্তু আইন থাকার পরও বিধিমালা না থাকায় অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। নতুন আইনের চূড়ান্ত বিধিমালা ভেটিংয়ের অপেক্ষায় আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।