ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: উকিল নোটিসের পর সরল পুলিশের মনিটর

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: উকিল নোটিসের পর সরল পুলিশের মনিটর

ঢাকার আদালতে পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে অভিযুক্তদের তথ্য প্রচারের মনিটরটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে এক আইনজীবী উকিল নোটিস পাঠানোর পর এ বিভাগের উপ কমিশনারের আদেশে হাকিম আদালত ভবনের নিচতলায় অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন অফিসের বাইরে ঝোলানো মনিটরটি গত রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরিয়ে নেওয়া হয়।

ওই মনিটরে প্রতিদিন থানা হাজত থেকে আসা অভিযুক্তদের নাম, ঠিকানা ও ছবি নিয়মিত সাধারণ মানুষকে দেখানো হত। অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ভাষ্য ছিল, অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এবং সাধারণের সুবিধার জন্য তারা এসব তথ্য প্রকাশ করত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লাবাবুল বাসার ওই মনিটর সরিয়ে নিতে পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডেপুটি কমিশনারকে উকিল নোটিস পাঠান গত সপ্তাহে।

সেখানে বলা হয়, “আপনার অফিসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে জনসাধারণের জন্য অভিযুক্তদের সমস্ত তথ্য উন্মুক্ত করতে গিয়ে আপনার অফিস অভিযুক্তের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে চলেছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।

“উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একটি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধান ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করেছে। আপনার অফিস কর্তৃক জনসাধারণের জন্য তথ্যের উন্মুক্ততা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

“উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একটি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধান ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করেছে। আপনার অফিস কর্তৃক জনসাধারণের জন্য তথ্যের উন্মুক্ততা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

কিন্তু অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ নিয়মিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মামলার আসামিদের তথ্য ও ছবি প্রচার ও প্রকাশ করছে, যা ওই আইনের লঙ্ঘন বলে আইনজীবী লাবাবুল বাসারের ভাষ্য।

নোটিসে তিনি লেখেন, “কোনো অভিযুক্তের তথ্য ও ছবি প্রচার ও প্রকাশ না করতে হাই কোর্ট বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও আইন অনুযায়ী পরিচালিত আপনার অফিস নিয়মিত উক্ত নির্দেশনা ভঙ্গ করে চলেছে।”

লাবাবুল বাসার বলেন, “অভিযুক্তের সমস্ত তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে বিচার হওয়ার আগেই ওই অভিযুক্তকে সাধারণ মানুষের মানসিক বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে আইনের চোখে নিরপরাধ হলেও অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ সোশাল স্টিগমার কারণ ঘটাচ্ছে।

“এমনকি বিচার প্রক্রিয়া শেষে আইনের চোখে একজন অপরাধীও তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য হকদার। আমাদের সংবিধান সে অধিকার নিশ্চিত করেছে। অথচ অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ সাংবিধানিক আইন, প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে নিয়মিত আইনের লঙ্ঘন করে চলেছে।”

এসব যুক্তি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে ওই মনিটর নামিয়ে ফেলতে বলা হয় নোটিসে। তা না হলে হাই কোর্টে রিট মামলা করা হবে বলে সতর্ক করেন নোটিসদাতা। তবে এক সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই মনিটর সরিয়ে নিল অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ।