অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন সুপ্রিম কোর্টে দুদকের মামলার আইন কর্মকর্তা খুরশীদ আলম খান। পাশাপাশি টিআইবিকে ‘ওপেন লাইভ ডিসকাশন’ এর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দুদক আইনজীবী
আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় খুরশীদ আলম খান টিআইবিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, বিচারকরা দেখবেন আমাদের (দুদকের) গলদ কোথায়। আপনি (টিআইবি) কে? আপনি কীভাবে ডাটা নিলেন? কয়টা কেসের ডাটা নিয়েছেন। আমার সঙ্গে বসুন। সামনা-সামনি ডিবেট করি। ওপেন লাইভ ডিসকাশন হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ: বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর একটি ফলো-আপ গবেষণা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এতে বলা হয়, দুদকের কার্যক্রম মূল্যায়নের এই গবেষণার রেফারেন্স পিরিয়ড ছিল তিন বছর (২০১৬-২০১৮)। পরে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে দুদককে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং আইনে কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদভাবে বলা হয়েছে। তবে কার্যক্রম ও ক্ষমতার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। দুদক বিরোধীদলের রাজনীতিকদের হয়রানি, ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ আচরণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়া, পক্ষপাতপূর্ণ ভূমিকা পালন করার অভিযোগ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেই বেশিরভাগ তদন্ত পরিচালনা করে আসছে বলে সাধারণের মধ্যে ধারণা রয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও দুদকের তদন্ত চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের মূল ম্যান্ডেট দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা। আইনের চোখে সবাই সমান এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিরপেক্ষভাবে প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনের যে সৎ সাহস ও দৃঢ়তা তাতে ঘাটতি দৃশ্যমান দুদকের। তবে কর্মী নিয়োগ ও প্রচার-প্রচারণার মতো কিছুক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের মতো মৌলিক ক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতিকে সাধুবাদ জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটির সুফল দেশবাসী পেতে চায়। কিন্তু এর বাস্তবায়নের এক্তিয়ার যাদের হাতে, তার মধ্যে অন্যতম দুদক। সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই অকার্যকর করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’র মধ্যে একটি ধারা সংযুক্ত করে এক ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে দুদকের আইনগত ভিত্তিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মানি লন্ডারিংকে দুদকের আওতা বহির্ভূত করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন খাত এখনও দুদকের এক্তিয়ার বহির্ভূত। এ বিষয়গুলো সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতির পরিচায়ক। দুদকের মধ্যে এমন মানসিকতা দেখা যায়, যেন এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। যদিও সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এটি যে স্বাধীনভাবে সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে, সে ধরনের মানসিকতা ও প্রয়াস নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও এমন উদ্যোগ নেই। এসব কারণে উচ্চপর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয় না।
এ প্রতিবেদনের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি, টিআইবি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট করেছে। যা অজ্ঞতার একটা বড় ইন্সট্যান্স (দৃষ্টান্ত)। এটা পক্ষপাতদুষ্ট। এটা প্রত্যাখ্যান করছি। কি বলব আর। আমার মুখের ভাষা নেই।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে আমরা মামলা করি। আমরা লড়ছি। উনারা বলছেন, আমরা পলিটিক্যাল পক্ষপাতদুষ্ট। কীভাবে বললেন?। আরও বললেন, আমাদের রেজাল্ট মধ্যমমানের। আপনার (টিআইবি) দৃষ্টিতে আমরা মধ্যমমান, ছোট মান হতে পারি। কিন্তু ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারিক আদালতে দুর্নীতির মামলার দণ্ডের হার ৭০ শতাংশ। মধ্যমমানের হলে তো ৫০ শতাংশ হতো। উনারা ডাটা দেখেছেন শতকরা ৬৭ থেকে ১০০ পর্যন্ত এ গ্রেড। তাহলে আমি মধ্যমমান হলাম কী করে?।
টিআইবির এই গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, টিআইবির একজন গবেষক আমার কাছে এসেছিলেন ইন্টারভিউয়ের জন্য। কথার ফাঁকে উনি বলছেন, ‘স্যার যদি আপনি নাম দিতে না চান, আমরা আপনার নাম দেব না’। আমি বললাম নাম দিতে চাই। এই যে প্রশ্নটা, নাম যদি দিতে না চান, তথ্যদাতার নাম নিতে না চান, তথ্যদাতার নাম প্রকাশ না করেন, তাহলে কী ধরনের স্বচ্ছতা!। হোয়াট কাইন্ড অব ট্রান্সপারেন্সি। দিস অ্যাবসুলেটলি রাবিশ, ফলস।’
খুরশীদ আলম খান বলেন, এখন আমি কী করছি, কী পারফর্ম করছি, মধ্যমমান না নিম্নমান, এটা বেস্ট বলতে পারবে, যারা আমার অপজিশন ছিলেন তারা। যাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করছি। তার চেয়ে বেশি জানবেন বিচারক। ওনারা দেখবেন আমাদের গলদ কোথায়। আপনি কে? আপনি কীভাবে ডাটা নিলেন? কয়টা কেসের ডাটা নিয়েছেন। আমার সঙ্গে বসুন। সামনা-সামনি ডিবেট করি। ওপেন লাইভ ডিসকাশন হবে। সামনে থাকবেন কৃষক শ্রমিক জনতা, রিকশা পুলার, রিটায়ার্ড জাজ, রিটায়ার্ড পাবলিক সার্ভেন্ট। তারা বিচার করবেন। আমরা কতটুকু ট্রান্সপারেন্ট ওয়েতে কাজ করছি।