পাবনার ঈশ্বরদীতে ছাব্বিশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগিতে বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাজা হয় আনোয়ার হোসেন জনির।
সম্প্রতি ওই ব্যক্তিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের চিফ রাইটারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাধারণত কারাগারের পুরনো বিশ্বস্ত কয়েদিদের গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় দণ্ডিত কয়েদিকে এ দায়িত্ব দেওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত কারা কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারাগারের প্রধান রাইটারের দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ পরীক্ষিত কয়েদি ছাড়া কাউকে এই পদে দেয়ার নিয়ম নেই।
প্রধান রাইটার কারাগারে আসামি ও কয়েদিদের অপরাধের অভ্যন্তরীণ বিচার, তাদের শৃঙ্খলা ও সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা ছাড়াও বাড়তি আয় উপার্জনের বেশ সুযোগ আছে। পাশাপাশি এটি কারাগারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ বলেও উল্লেখ করেন সাবেক ওই কারা কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. তারেক কামাল বলেন, কয়েকদিন আগে আনোয়ার হোসেন জনিকে প্রধান রাইটার করা হয়েছে। সে কেস টেবিলে (আসামি-কয়েদিদের বিচার) কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে।
তবে বিষয়টি আলাদা করে ভেবে করা হয়নি। সে কয়েদি বলেই এই দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠলে তাকে বাদ দেওয়া হবে বলেও জানান তারেক কামাল।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার খুলনা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ট্রেন মার্চ কর্মসূচি ছিল। শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বগি লক্ষ্য করে উপর্যুপরি বোমা নিক্ষেপ করে ও গুলিবর্ষণ করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
ওইদিন রাতে ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি নজরুল ইসলাম শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রোস্তুম আলী ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্পর্শকাতর এই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৫২ আসামির মধ্যে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
আনোয়ার হোসেন জনির এই মামলায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার কয়েকদিন পরেই জনিসহ দণ্ডপ্রাপ্তদের পাবনা জেলা কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সম্প্রতি এই জনিকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান রাইটার নিয়োগ করা হয়েছে।