সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম
সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম

১৬ মে বা তার কাছাকাছি সময়ে আত্মসমর্পণ করতে পারেন হাজী সেলিম

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম আগামী ১৬ মে বা তার কাছাকাছি সময়ে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।

হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, আশা করছি আগামী ১৬ মে বা তার কাছাকাছি সময়ে হাজী সেলিম আত্মসমর্পণ করবেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

আগামী ২৫ মের মধ্যে হাজী সেলিমকে অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে দণ্ড বহাল থাকায় হাজী সেলিমকে কারাগারে যেতে হবে। কারাগারে না গিয়ে তার জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

এ প্রসঙ্গে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘কারাগার থেকে হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সেই সঙ্গে জামিন আবেদনও করবেন। যেহেতু হাজী সেলিম সংসদ সদস্য, আশা করছি আত্মসমর্পণের পর কারাগারে গেলেও তিনি জেল কোডের নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন।’

এদিকে দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ঈদের আগে অনেকটাই চুপিসারে বিদেশে যান হাজী সেলিম। দেশের বাইরে থেকে গত বৃহস্পতিবার ফিরে এসেছেন তিনি।

গত ২৫ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায় হাইকোর্ট থেকে অধস্তন আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ওই দিন রায় ঘোষণার পর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় হাজী সেলিমকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুদক এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশের রায় দেন আদালত।

এরপর বিচারিক আদালত বলেন, যেদিন হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাবেন, সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়। একইসঙ্গে যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা দেওয়া হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে বলা হয়।

২০২০ সালের ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। সে আদেশ অনুসারে নথি আসার পর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।