সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেয়নি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি দেশটির শীর্ষ আদালত রায় দেয়, বিশেষ বিবাহ আইনে সমলিঙ্গ মিলনকে অন্তর্ভুক্ত করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওই আইন পরিবর্তন করতে হলে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
সমলিঙ্গের সম্পর্ককে বিয়ের সমতুল মর্যাদা (সিভিল ইউনিয়ন) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ও তাঁদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার নিয়ে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ভিন্নমত দেখা দেয়।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এস কে কউল সংখ্যালঘুর রায়ে ওই দুই বিষয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অন্য তিন বিচারপতি সংখ্যাগুরুর রায়ে তার বিরোধিতা করে জানান, এমন সম্পর্ককে একমাত্র আইনসভাই আইন তৈরি করে স্বীকৃতি দিতে পারে।
আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) ওয়াশিংটনের ‘জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টার’ এবং দিল্লির ‘সোসাইটি ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইটস’ আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানালেন, বিয়ের সমানাধিকার প্রসঙ্গে তিনি নিজের অবস্থানে স্থির থাকবেন।
শীর্ষ আদালতের সমলিঙ্গের বিয়ের পক্ষে রায় না দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, কখনও নৈতিক বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কখনও সংবিধান থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবং আমি আগে যা বলেছি, সেই সিদ্ধান্তেই স্থির থাকব।’’
সমলিঙ্গের বিয়ের আইনি স্বীকৃতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে জমে থাকা মামলাগুলি একত্রিত করে গত জানুয়ারি মাসে একসঙ্গে শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। গত ১৭ অগস্ট তার রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ একমত হয়ে যে রায় দিয়েছি, তাতে সমলিঙ্গ সম্পর্ক-ঘটিত অপরাধ কমানোয় বেশ অগ্রগতি ঘটেছে। এই সম্প্রদায়কে সমাজের সমান অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে সমলিঙ্গে বিয়ের অধিকার দেওয়া হবে কি না, সেটা আইনসভার এখতিয়ার মধ্যে পড়ে।’’
১৭ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিনও প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, আদালত আইন তৈরি করবে না, আইন তৈরি করবে আইনসভা। ‘পারসপেকটিভ ফ্রম দ্য সুপ্রিম কোর্ট অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’— এই শীর্ষক সভাটিতে সাংবিধানিক আইন নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের প্রভাব নিয়ে কথা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতিরা হয়তো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, কিন্তু সমাজে তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানিয়েছেন, প্রযুক্তির প্রভাবে সমাজে দ্রুত বিবর্তন ঘটছে, কিন্তু বিচারব্যবস্থার প্রভাব এখনও স্থিতিশীল।
এ দিনের আলোচনাসভায় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের অধিকার নিয়েও কথা ওঠে। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নই, যদিও আমি বিশ্বাস করি বিচারপতিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা হয়তো পাঁচ বছর অন্তর মানুষের ভোট চাইতে যাই না। কিন্তু সেটারও কারণ রয়েছে… বিশ্বাস করি, সমাজের বিবর্তনে বিচারব্যবস্থার একটি সুস্থির প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে এই যুগে, যখন প্রযুক্তির হাত ধরে দুনিয়া দ্রুত বদলাচ্ছে।’’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘ভারতের মতো বহুত্ববাদী সমাজে সভ্যতা, সংস্কৃতির স্থায়িত্ব বজায় রাখতে আমাদের ভূমিকা রয়েছে।… সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র ফলের দিকে চেয়ে আমাদের কাছে আসেন না। সংবিধান বদলের প্রক্রিয়ায় একটি কণ্ঠস্বরের খোঁজেও তাঁরা আদালতে আসেন। ’’