পাকিস্তানে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূল হোতা মন্ত্রী!

শর্ষের মধ্যেই ভূত। পাকিস্তানে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূল হোতা পাঞ্জাব প্রদেশের এক মন্ত্রী। সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও ইন্ধন রয়েছে।

সম্প্রতি দেশটির কাসুর শহরে ৬ বছর বয়সী শিশু জয়নাবকে ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডেও ওই চক্র দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। জয়নাব হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটক মোহাম্মদ ইমরান আলি ওই মন্ত্রীর অপরাধচক্রের অন্যতম চেলা। শিশু পর্নো বিদেশে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত চক্রটি।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কে সেই মন্ত্রী বা কারা তার সহযোগী, তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি সুপ্রিমকোর্ট।

পাকিস্তানের টিভি উপস্থাপক ড. শহিদ মাসুদ শিশু পর্নোগ্রাফির বিষয়টি তুলে ধরে আদালতে অভিযোগ করেন। কাসুরে শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে টিভি প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন তিনি। শহিদ মাসুদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আটক ইমরান আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা পাঞ্জাব পুলিশকে তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত।

ড. শহিদের দাবি, জয়নাব হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ইমরান পাকিস্তানের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী এক গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট। সরকারিমহলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে এমন গুমর ফাঁস করে দেয়ায় জীবন সংশয়ে রয়েছেন ড. শহিদ। এমনকি তার আশঙ্কা, পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই ইমরানকে হত্যা করা হতে পারে।

গত ৪ জানুয়ারি কোরআন ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে পাঞ্জাবের কাসুর শহর থেকে জয়নাবকে অপহরণ করা হয়। সেসময় বাবা-মা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে থাকায় খালার কাছে ছিল সে। ৯ জানুয়ারি শাহবাজ খান রোডে আবর্জনার স্তূপ থেকে জয়নাবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ নিয়ে কাসুরে এক বছরে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ১২ জন শিশু। ডিএনএ পরীক্ষার ভিত্তিতে ২৩ জানুয়ারি ইমরানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ২৪ বছর বয়সী ওই সন্দেহভাজন সিরিয়াল কিলার জয়নাবসহ ৭ জন শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে ইমরানের সঙ্গে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের যোগসাজশ থাকার ধারণাটি সামনে আসে ড. শহিদের টিভি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে।

ড. শহিদ তার অনুষ্ঠানে দাবি করেন, জয়নাবের সন্দেহভাজন হত্যাকারী একটি আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের ৩৭টি ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

বৃহস্পতিবার শহিদ মাসুদের বক্তব্যটিকে আমলে নেয় পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট। প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসার, বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল ও বিচারপতি ইজাজুল আহসানের সমন্বয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চ পাঞ্জাব পুলিশকে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ইমরান আসলেই আন্তর্জাতিক চক্রের হয়ে কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘টিভি উপস্থাপকের দাবি সত্য হলে মূল সন্দেহভাজনের নিরাপত্তাও একটি উদ্বেগের বিষয়।’

নিরাপত্তা হেফাজতে সন্দেহভাজনের নিরাপত্তা রক্ষার দায় পাঞ্জাবের আইজির। আদালত জানান, হেফাজতে থাকা অবস্থায় সন্দেহভাজনের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে এ জন্য পাঞ্জাব পুলিশকে দায়ী করা হবে। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলাটির শুনানি মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকি বলেন, হলিউড ও লস অ্যাঞ্জেলেস হল পর্নোগ্রাফির বৃহৎ কেন্দ্র। সেখান থেকেই হাতে-কলমে শিখছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার মিশন হল পাকিস্তানের সমাজে পর্নোগ্রাফিকে অনুমোদন দেয়া।’

এর আগে পাঞ্জাবের এডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল আসমা হামিদ আদালতকে জানান, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ উপস্থাপক মাসুদের বক্তব্যের সত্যতা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাজ শরিফ নিজেও। তিনি লেখেন, ‘জয়নাবকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছি। এ ইস্যুতে তদন্তের জন্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান) জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি এবং ফরেনসিক সায়েন্স এজেন্সির ডিজিকে সহযোগিতার জন্য তদন্ত দলকে দায়িত্ব দিয়েছি।’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম