অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ

ফৌজদারি কার্যবিধি কীভাবে পড়বেন : চতুর্থ অংশ [ধারা ৪০৪-৫৬৫]

অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:

আমাদের পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার ফৌজদারি কার্যবিধির শেষ অংশ। এখানে ৪০৪ ধারা থেকে ৫৬৫ পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই অংশটুকু অনেক বিস্তৃত হলেও বেশিরভাগ ধারাই আমরা বাদ দিয়ে পড়তে পারি। যে টপিকগুলো বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে সেগুলো বরং উল্লেখ করে দেখে নিই –

আপিল [ধারা ৪০৪-৪৩১]
রেফারেন্স ও রিভিশন এবং তা নিষ্পত্তির সময় [ধারা ৪৩২-৪৪২ক]
পাবলিক প্রসিকিউটর [ধারা ৪৯২-৪৯৫]
জামিন [ধারা ৪৯৬-৫০২]
ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর [ধারা ৫২৫ক-৫২৮]

এগুলোর বাইরে আরো কিছু ধারা আছে কিছু বিষয়বস্তু থেকে। সেগুলো দেখে নিলেই চলবে। আমরা এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকি।

১. আপিল আদালত কাকে বলে সেটা জানেন নিশ্চয়ই! আমরা আমলী আদালত বা Cognizance Court এবং বিচার আদালত বা Trial Court সম্পর্কে জেনে এসেছিলাম। এই দুইটি আদালতের নামকরণের ক্ষেত্রে দেখে আসলাম একটি আদালত কি ধরনের ভূমিকা পালন করছে তার ওপর নির্ভর করছে সেই আদালত বা কোর্টের পরিচয়। তো, সেই একইভাবে একটি আদালত যখন আপিল শোনে বা তার শোনার এখতিয়ার থাকে তখন তার ভূমিকা অনুযায়ী তাকে আপিল আদালত বা ইংরেজিতে Appellate Court বলা হয়।

আপিল সংক্রান্ত ধারাগুলো [৪০৪ থেকে ৪৩১ ধারা পর্যন্ত] পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আপিল করার বিধানগুলোকে ৫টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগগুলো একটি চার্টে দেখানো হলো নিচে; এর প্রতিটি মোটা রেখা দ্বারা ৫টি পৃথক অংশকে দেখানো হয়েছে। চার্টটিতে খেয়াল করুন যে, ৩ নং অংশে ৩টি ক্ষেত্রে আপিল করা যায় না; এ বাদে অন্যান্য ৪টি ক্ষেত্রে আপিল করা যায় – আপিল সংক্রান্ত ধারাগুলোর এই সংক্ষিপ্ত ম্যাপিংটা মনে রাখবেন। আপিল দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। ‘চিরুনি অভিযান’ মূল বইয়ে দণ্ডদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রগুলোকে একটি ফ্লো চার্টের মাধ্যমে আরো পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম। ঐ চার্টটিও দিয়ে দিলাম। juicylaw.com অনলাইনে এসবের আরো আপডেট থাকবে নিয়মিত যা সকলের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে । নিচের ছকে থাকা প্রতিটি ধারাই আপনাকে মনোযোগ দিয়ে খুঁটিনাটিসহ মনে রাখতে হবে। এখান থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। এর বাইরে ৪১৯-৪২২ পর্যন্ত ধারাগুলো দেখতে হবে। ৪২৬ ও ৪৩১ ধারাটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

২. রিভিশন সংক্রান্ত ধারা খুব অল্প। এর সবগুলোই সামগ্রিকভাবে বুঝে রাখতে হবে। ৪৩৫, ৪৩৬, ৪৩৯ এবং ৪৩৯ক ভালোভাবে বুঝতে চাইলে বেশ ঘাম ঝরাতে হবে। আপিল ও রিভিশন নিষ্পত্তির একটি সময়সীমা বেধে দেওয়া আছে ৪৪২ক ধারায়। এই ধারাগুলো ভালোভাবে দেখলেই চলে এখান থেকে। রিভিশন অংশ থেকে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নও আসে কিন্তু। খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকেই ঝালাই করে রাখবেন।

৩. পাবলিক প্রসিকিউটর এবং জামিন সম্পর্কে ৪৯২ থেকে ৫০২ পর্যন্ত প্রতিটি ধারাই ভালোভাবে পড়বেন। এখান থেকে প্রশ্ন আসে নিয়মিত।

৪. সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কমিশন শিরোনামে ৫০৩ থেকে ৫১২ পর্যন্ত আলোচনা আছে। অর্থাৎ সাক্ষী যখন হাজির হতে পারেন না আদালতে, তখন তার সাক্ষ্য প্রয়োজনে একটি কমিশন প্রেরণ করে নেওয়া হয়ে থাকে। এখান থেকে ধারণা নিতে হবে মূল ধারাগুলো পড়ে পড়ে। সাজেশন আকারে ৫০৯, ৫০৯ক এবং ৫১২ ধারা তিনটি বিশেষভাবে দেখে রাখবেন।

৫. ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর নিয়ে ৫২৫ক থেকে ৫২৮ পর্যন্ত আলোচনা আছে। এ সম্পর্কিত আলোচনা আমরা আগেও দেখেছি। সেখানে বিচারের জন্য বিভিন্ন বিচারিক আদালতে একটি মামলা স্থানান্তর হতে পারে। কিন্তু সেই স্থানান্তর আর এই স্থানান্তরের সামান্য পার্থক্য আছে। পার্থক্য এর মূল জায়গাটি হলো – এখানে হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ বা দায়রা কোর্টের স্থানান্তরের ক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে। মামলা স্থানান্তরের এই প্রয়োজন নানা কারণে উদ্ভব হতে পারে। মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে হতে পারে যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, বর্তমান আদালতে ন্যায়বিচার ব্যাহত হতে পারে। আবার হাইকোর্ট বা দায়রা জজ তার নিজের বিবেচনাবলে এই স্থানান্তর ঘটাতে পারেন তার অধীনস্ত কোর্টের ক্ষেত্রে। হাইকোর্টের এমনকি এই ক্ষমতাও আছে যে, একটি জেলার মামলা অন্য একটি জেলায় হস্তান্তরের। কোন কোন পরিস্থিতিতে কোন কোন উচ্চতর আদালত কিভাবে মামলা স্থানান্তর করতে পারেন তার বিস্তারিত বর্ণনা এইসব ধারায় দেওয়া আছে। ৫২৫ ক ধারায় আপিল বিভাগের, ৫২৬ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগের এবং ৫২৬খ ধারায় দায়রা কোর্টের স্থানান্তর ক্ষমতার বর্ণনা দেওয়া আছে। ধারাগুলো মনোযোগের সাথে মনে রাখতে হবে।

৬. ৫৬১ক একটি বিশেষ ধারা, যেখানে হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতার গ্রাউন্ড বর্ণনা করা আছে। এর ঠিক আগের ধারাতেই তথা ৫৬১ ধারায় একটি অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে। সেটা জরুরি। বিষয়বস্তু বললাম না। দেখে নেবেন। প্রশ্ন এসে যেতে পারে। এই ধারা দুইটি বাদে আরো বেশি কিছু ধারা গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন, যদি এনার্জি থাকে!

আজ এটুকুই। সকল শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীর জন্য শুভকামনা আমার পক্ষ থেকে। শীঘ্রই আসছি সাক্ষ্য আইনের আলোচনা নিয়ে।

লেখক : আইনজীবী ও ‘আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুক’ এর রচয়িতা এবং ফাউন্ডার – juicylaw.com ও আইনকানুন একাডেমি