কিশোর তাসকিন আহম্মেদ শাফির বাবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারজেল হোসেন (বাঁয়ে)

‘শাস্তি তো আপনার হওয়া উচিত’, কিশোরের আইনজীবী বাবাকে বিচারক

কিশোর সন্তানের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়ায় তাঁর বাবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারজেল হোসেনকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। এ সময় আদালত ওই কিশোরের আইনজীবী বাবার উদ্দেশে বলেন, ‘অন্যায় আপনি করেছেন। অপরাধ আপনি করেছেন। এজন্য আপনার শাস্তি হওয়া উচিত।’

রাজধানীর বেইলি রোডে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে রিকশাচালক, আরোহী বাবা ও তার কোলের পাঁচ মাসের শিশুকে আহত করেন কিশোর তাসকিন আহম্মেদ শাফি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার কিশোর তাসকিন আহম্মেদ শাফির রিমান্ড শুনানিতে আদালত এ মন্তব্য করেন।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক আল-মামুনের আদালতে সোমবার (২২ নভেম্বর) এই রিমান্ড শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো আদেশ দেয়া হয়। সেখানে উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তার সামনে পুলিশকে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রী বিপ্লব সরকার কিশোর তাসকিন আহম্মেদকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ড শুনানিকালে তাসকিনের বাবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারজেল হোসেন আদালতে উপস্থিত হননি।

রিমান্ড শুনানিতে যা বললেন আদালত

এসময় বিচারক তাসকিনকে দেখে বলেন, ওর তো গাড়ি চালানোর বয়স হয়নি। লাইসেন্স নাই। তার হাতে গাড়ি দিল কেন? ওর বাবাকে গ্রেফতার করা উচিত।

এরপর বিচারক তাসকিনের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, গাড়ি কার নামে? জবাবে তাসকিন বলে, লাইসেন্স তার বাবার নামে।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেসমিন আক্তার বিচারককে বলেন, ‘সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি। ছয় মাস আগে কেনা হয়েছে। তার বাবা সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।’

এ সময় বিচারক তাসকিনের কাছে জানতে চান সে কোথায় এবং কোন ক্লাসে পড়াশুনা করছে? উত্তরে জানায়, রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।

এরপর বিচারক বলেন, ‘তাকে রিমান্ড দিতে পারবো না। রিমান্ড হবে না।’

তখন তাসকিনের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। বড় হও, অনেক গাড়ি চালাতে পারবে। তুমিও তো একজনের ছেলে। যে শিশুটাকে আহত করেছো সেও তো কারো না কারো ছেলে। কতো সময়, কত দিন পড়ে আছে। জীবনটা কি এতো ছোট!’

এরপর রিমান্ড নামঞ্জুর করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।

শুনানি শেষে তাসকিনের বাবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারজেল হোসেনসহ কয়েকজন আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন। তখন বিচারক তাদের বলেন, আদেশ তো হয়ে গেছে। এখন আর শুনানি করা যাবে না।

বিচারক তাসকিনের বাবার কাছে জানতে চান, সে (তাসকিন) কি লাইসেন্সসহ গাড়ি চালাচ্ছিল? তখন তার বাবা বলেন, না। কাউকে না জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় সে।

তখন বিচারক বলেন, ‘অন্যায় আপনি করেছেন। অপরাধ আপনি করেছেন। এজন্য আপনার শাস্তি হওয়া উচিত। শিশু বাচ্চাটার পা ভেঙে গেছে। যাই হোক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শেষ হোক। এরপর জামিন শুনানি হবে।’

এরপর তাকে আদালত থেকে তাসকিনকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।

যে ঘটনায় গ্রেফতার কিশোর

গত ১৯ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুল হাসান তার পাঁচ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে বের হন। তিনি একটি রিকশা নিয়ে মগবাজার থেকে বেইলি রোড হয়ে রমনা পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বেইলি রোডে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার তাদের বহনকারী রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।

এতে রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামসহ গুরুতর আহত হন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার পাঁচ মাসের শিশু পুত্র ইব্রাহিম মোহাম্মদ বিন হাসান। দুর্ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাসকিন তার মাকে নিয়ে বাসে করে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তার দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় তার খালার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার থানা পুলিশের সহায়তায় তাসকিনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়।