সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি

মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি আদালত

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে মামলার আবেদনটি করা হয়েছিল।

আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। মামলাটি গ্রহণের মতো কোনো উপাদান না থাকায় তা খারিজ করে দেন আদালত।

মামলার বাদী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে মামলাটি গ্রহণের মতো কোনো উপাদান না থাকায় তা খারিজ করে দেন আদালত।

এর আগে, রোববার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের সেরেস্তায় এ মামলার আবেদন করা হয়। আবেদনে মুরাদ ছাড়াও মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকে (নাহিদ রেইন্স) আসামি করা হয়েছিল।

অভিযোগে যা বলা হয়

মুরাদ হাসান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ও নাহিদ ডিজিটাল মিডিয়া উপস্থাপক। নাহিদ গত ১ ডিসেম্বর মুরাদের সাক্ষাৎকার নেন, যা পরে মুরাদ হাসান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকারে মুরাদ উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী এবং যে কোনো নারীর জন্য মর্যদাহানিকর ভাষা ব্যবহার করেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে সমাজে তথা রাষ্ট্রের সব মহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে জাইমা রহমানকে সামাজিক এবং ব্যক্তিগতভাবে অপদস্থ ও হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়, যা সার্বিকভাবে জিয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে সব নারী সমাজের জন্য মানহানিকর এবং অপমানজনক।

আরও উল্লেখ করা হয়, জাইমা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং মানহানি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ হয়েছে।

ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ চাওয়া হয় মামলার আবেদনে।

রাজশাহীর আদালতেও মামলা খারিজ

মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান মামলাটি খারিজের আদেশ দেন। 

রবিবার বগুড়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন। এ মামলায় ভার্চুয়াল টকশো’র উপস্থাপক শেখ মহিউদ্দিন হেলালকেও বিবাদী করা হয়।

রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ইসমত আরা জানান, মামলাটি খারিজ করে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন, তিনি যে ভিডিও ক্লিপ দাখিল করেছেন সেটি দেখেছেন। দেখার পরে তিনটি পর্যবেক্ষণে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নারীর প্রতি অশ্লীল মন্তব্য করে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান।

ফেসবুকে এক লাইভ অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের মেয়েকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি।

এরপরই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। সেখানে মাহির সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন তিনি। এমনকি মাহিকে ধর্ষণ এবং উঠিয়ে আনার হুমকি দেন। সে সময় চিত্রনায়িকাকে দেখা করার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন মুরাদ। তখন ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে প্রতিমন্ত্রী বলছিলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান।

সেই অডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। পরে তাকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। ওইদিন রাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।