চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন (ইনসেটে)
চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন (ইনসেটে)

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে ১০ আইনজীবীর চিঠি

সম্প্রতি চাকরিচ্যুত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। চিঠিতে এ ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি স্বপ্রণোদিত রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আজ রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্ট রুলসের ১১ক এর বিধি ১০ অনুযায়ী এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর এই চিঠি প্রেরণ করা হয়।

চিঠি প্রেরণকারী সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী হলেন- মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো: তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আআবদুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো: সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী।

বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং এতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মারাত্মক অন্যায় ও অসংঙ্গতি জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এ ঘটনা বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের পথে অন্তরায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে গৃহীত বহুমুখী পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়বে। দুর্নীতি রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভীতিকর পরিবেশে থাকবেন এবং আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত হবেন।

এমতাবস্থায় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন হিসেবে বিবেচনা করে চিঠিতে সংযুক্ত প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (রুল নিশি) এবং চাকরীচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয়/উপযুক্ত আদেশ চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আলোচিত দুদক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। গত বুধবার দুদক কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে সাড়ে তিন বছর তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। এ সময় কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ছিলেন।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক, সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।

এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ। পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএল এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাবেক বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত বছরের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ।

আলোচিত এসব মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হল।