বিচারকের জবানবন্দি: তিব্বত ট্যালকম পাউডার ও একটি সংসারের গল্প
মতিউর রহমান; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), পঞ্চগড়।

সৌদি আরবের বিচারব্যবস্থা ও আদালতসমূহ

মতিউর রহমান: সৌদি আরব একটি ইসলামী রাষ্ট্র, তাই এর বিচার ব্যবস্থা (ফৌজদারি এবং দেওয়ানী উভয় ক্ষেত্রেই) ইসলামী আইনের (শরিয়াহ) উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আইনি ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছেন রাজা (king), যিনি আপিলের চূড়ান্ত আদালত হিসেবে কাজ করেন৷

সৌদি আদালত ব্যবস্থা তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।

১. প্রথম আদালত (সামারি এবং সাধারণ আদালত),

২. বিচার আদালত এবং

৩. সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।

শরীয়াহ আদালতের পরিপূরক হল অভিযোগ বোর্ড, যে সকল মামলায় সরকার জড়িত বোর্ড এমন মামলা গুলোর শুনানি করে।

সৌদি আদালত ব্যবস্থার তৃতীয় অংশে সরকারী মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভিন্ন কমিটি রয়েছে যা নির্দিষ্ট বিরোধগুলি নিষ্পত্তি করে থাকে। যেমন- শ্রম বা শ্রমিক সম্পর্কিত সমস্যা।

২০০৫ সালে একটি রাজকীয় আদেশ দ্বারা নীতিগতভাবে বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়। ২০০৭ সালের রাজকীয় আদেশে তা বাস্তবে রূপ লাভ করে। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং বিশেষ বাণিজ্যিক, শ্রম ও প্রশাসনিক আদালত প্রতিষ্ঠা।

শরীয়াহ (ইসলামী আইন)

শরীয়াহ বলতে ইসলামী আইনকে বোঝায়। এটি সৌদি আরবের সমস্ত আইনি বিষয়ের জন্য একটি নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে। আরবের সামাজিক রাজনৈতিক, ব্যবহারিক-অর্থনৈতিক জীবন ও শারীয়াহর মধ্যে আলাদা কোনো পার্থক্য নেই।

শরীয়াহ আইন প্রাথমিকভাবে পবিত্র কোরআন থেকে এবং দ্বিতীয়ত রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত। তৃতীয় উৎস হল ইজমা। ইজমা হলো নবী (সা.) এর মৃত্যুর পর সংঘটিত একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে জড়িত নীতিগুলোর বিষয়ে মুসলিম পণ্ডিতদের মতামতের ঐক্যমত্য। কিয়াস, উপমা, আইনের চতুর্থ উৎস।

শরীয়াহ অনুমান করে যে একজন আসামী দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ এবং শুধুমাত্র গুরুতর অপরাধে বা অভ্যাসগত অপরাধীদের ক্ষেত্রে গুরুতর শাস্তি হতে পারে।

ইসলামী আইন বা শরিয়া ‘ল এর উৎস মূলত দুটি, যথা:

১. প্রধান উৎস ও
২. অপ্রধান উৎস।

প্রধান উৎস আবার দুই ভাগে বিভক্ত যথা:
(ক) প্রাইমারি ও
(খ) সেকেন্ডারি

(ক) প্রাইমারী বা মূল উৎসের মধ্যে রয়েছে পবিত্র কুরআন এবং হাদিস।

(খ) সেকেন্ডারি বা গৌণ ও উৎসের মধ্যে রয়েছে ইজমা ও কিয়াস।

মাইনর উৎসের মধ্যে রয়েছে ইস্তিহাত বা গবেষণালব্ধ জ্ঞান, কাস্টম বা প্রথা, ইসতিসলাহ বা পাবলিক ইন্টারেস্ট এবং ইসতিহসান বা অন্য অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়সমূহ।

হায়ারারকি বা পদসোপান অনুসারে আদালতসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:

১. সাধারণ আদালত বা অর্ডিনারি কোর্ট

২. হাইকোর্ট এবং

৩. আপিল আদালত

প্রাথমিক পর্যায়ে মামলা সমূহ শুনানির জন্য সাধারণ আদালতে যায়। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগ পর্যন্ত শুনানি হয়ে থাকে।

শরিয়া আদালতের দেওয়ানী ও ফৌজদারি উভয় মামলার সাধারণ এখতিয়ার রয়েছে। বর্তমানে, প্রথম ধাপে দুই ধরনের আদালত রয়েছে: সাধারণ আদালত এবং সংক্ষিপ্ত আদালত। এখানে মামলাগুলো একক বিচারকদের দ্বারা বিচার করা হয়। ফৌজদারি মামলা ছাড়া যদি সম্ভাব্য শাস্তি মৃত্যু, অঙ্গচ্ছেদ বা পাথর মারা হয় যখন তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল থাকে।

এছাড়াও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে শিয়া সংখ্যালঘুদের জন্য পারিবারিক ও ধর্মীয় বিষয়ে দুটি আদালত রয়েছে। মক্কা ও রিয়াদে আপিল আদালত বসে এবং শরিয়াহ আদালতের সিদ্ধান্তগুলো আপিল আদালত পর্যালোচনা করে। আপিল আদালত বিশেষ করে যে বিষয়টি খেয়াল করে তা হল অধঃস্তোন আদালত পুরোপুরি শরিয়াকে মেনে রায় দিয়েছে কিনা।

সৌদি আরবের সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল নিম্ন আদালতের তত্ত্বাবধান করে এবং বাদশাহকে আইনি মতামত ও পরামর্শ প্রদান করে। এছাড়াও মৃত্যুদণ্ড, পাথর ছুঁড়ে মারা এবং অঙ্গচ্ছেদের শাস্তি পর্যালোচনা করে।

সৌদি আরবের বিচারকদের কাজি বলা হয়। মুফতি এবং উলামা সদস্য, অত্যন্ত প্রভাবশালী আইনি মতামত (ফতোয়া) জারি করে। গ্র্যান্ড মুফতি দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ হওয়ার পাশাপাশি বিচারিক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য; তার মতামত সৌদি বিচারব্যবস্থার মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী।

সাড়ে তিন কোটি মানুষের এদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০০ জন বিচারক রয়েছে। কাজিদের সাধারণত রিয়াদের ইনস্টিটিউট অফ হায়ার জুডিসিয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর যোগ্যতাসহ সৌদি সরকার কর্তৃক স্বীকৃত একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া আইনে ডিগ্রি রয়েছে।

লেখক: অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পঞ্চগড়।