মহিষ চুরির মামলায় কক্সবাজারে ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে
ছবি : কক্সবাজারে কারাগারে পাঠানো ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোসেন চৌধুরী প্রকাশ।

মহিষ চুরির মামলায় কক্সবাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের জামিন  

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : মহিষ চুরির পৃথক ২টি মামলায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোসেন চৌধুরী প্রকাশ নইব্ব্যা চোরা জামিন লাভ করেছেন।

কক্সবাজারের অবকাশকালীন আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বুধবার (২১ ডিসেম্বর) তাকে জামিন প্রদান করেন

আদালতে আসামী পক্ষে মামলা ২টি শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু সহ ১৫/১৬ জন আইনজীবী। 

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো

কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ছিদ্দিক আহমদের পুত্র মোহাম্মদ নছিমের প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ৮টি মহিষ তার চিংড়ী ঘের থেকে চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া মহিষগুলো নবী হোসেনের কাছে রয়েছে জানার পর মালিকপক্ষ তার সাথে যোগাযোগ করলে নবী হোসেন মহিষ গুলো ফেরত দেওয়ার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এরমধ্যে নবী হোসেন চুরি করে আনা মহিষগুলো গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দেন।

পরে নিরূপায় হয়ে মহিষের মালিক মোহাম্মদ নাছিম বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় ২০২১ সালের ৯ মে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা জিআর মামলা নম্বর : ১২২/২০২১ (মহেশখালী)। বিভিন্ন চাপের কারণে নবী হোসেনকে এ মামলার এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

কিন্তু মামলার এজাহার থেকে নবী হোসেন তার নাম বাদ দিতে পারলেও পুলিশি তদন্তে মহিষ চুরির ঘটনায় নবী হোসেন সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া, একই মামলার অপর আসামী আবুল হাসেম নবী হোসেনকে মহিষ চুরির ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। ফলে নবী হোসেনের নাম চার্জশিটে ২ নম্বর আসামি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

দ্বিতীয় মামলা হলো

মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাট এলাকার দুদু মিয়ার ছেলে এবাদুল হকের ৬ লাখ টাকা মূল্যের আরো ৪টি মহিষ চুরি করে নিয়ে যায় নবী হোসেন। এ ঘটনায় চুরি হয়ে যাওয়া মহিষের মালিক এবাদুল হক বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় ২০২১ সালের ৫ জুন চকরিয়ার শাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নবী হোসেনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় নবী হোসেনকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়। যার জিআর মামলা নম্বর : ১৪৮/২০২১ ইংরেজি (মহেশখালী)। এ মামলায়ও তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নবী হোসেনকে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

মামলা ২ টিতে আসামী নবী হোসেন হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করলে হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী নবী হোসেন গত ১৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ভা:) মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী’র আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন আবেদন শুনানি শেষে না মঞ্জুর করে তাকে জেলে প্রেরণের আদেশ দেন। 

নবী হোসেন কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এ আদেশের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের অবকাশকালীন আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কোর্টে জামিন চেয়ে ২ টি পৃথক ফৌজদারী মিচ মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর : ৮৪১১/২০২২ ইংরেজি এবং ৮৪১২/২০২২ ইংরেজি।

বুধবার আদালতে মামলা ২টির শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আসামী নবী হোসেনকে জামিন প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নবী হোসেন চৌধুরী প্রকাশ নইব্ব্যা চোরা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে গরু, মহিষ চুরির মামলা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের আরো বেশ কয়েকটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।