দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাবেক বিচারক সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকার গঠনে রাষ্ট্রপতিকে ১১ আইনজীবীর চিঠি

অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মহলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনগণের মালিকানা সুপ্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন আইনজীবী রাষ্ট্রপতির কাছে এ আবেদন জানান। আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন- মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মির্জা আল মাহমুদ, এস এম জুলফিকার আলী জুনু, মো. সামশুল আলম, মো. হেমায়েত উদ্দীন বাদশাহ, মো. ওবায়দুল হাসান, এমাদুল হক, মো. শওকত উল্লাহ খান, মুনির হোসেন, মোস্তাক আহমেদ এবং মো. নাজমুল হাসান।

আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে রক্ষা করে, জাতীয় সংসদ, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখে, বাংলাদেশের মালিক জনগণের চরম অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এই দেশের জনগণের শাসনতন্ত্রের মৌলিক দলিল, সংবিধানের অভিভাবক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের নিয়মিত আইনজীবী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষভাবে অনুধাবন করে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণে সকল ক্ষেত্রে চরম হতাশা ও ব্যর্থতা, সীমাহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত গোটা বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করতে সরকার বিরোধী মতকে দাবিয়ে রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সভা, সমাবেশে বাধা, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ, হামলা, মামলা ও গ্রেফতার চালানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ঘটানোর মাধ্যমে চালানো হচ্ছে।

মানুষের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে নিবর্তনমূলক আচরণের মাধ্যমে জনমনে চরম ভীতি সৃষ্টি করার কারণে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবনতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির কারণে চরম অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরমত সহিষ্ণুতার ব্যর্থতা ও জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার সুযোগে কর্তৃতবাদী সরকারের দলবাজ নীতিনির্ধারকরা তাদের দলীয় ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করার অভিপ্রায়ে তাদের কর্তৃক সৃষ্ট নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন এবং সর্বোপরি সাংবিধানিকভাবেই বাংলাদেশ গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি মহোদয়গণের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করত: সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে এসে সকলের জন্য সম সুযোগ সৃষ্টি করে অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকল মহলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মালিক জনগণের ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করে বাংলাদেশে সংবিধানিক প্রাধান্য বজায় রাখার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

অতএব, বর্তমান বাংলাদেশে চলমান গভীর সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের চরম অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে জনগনের মালিকানা সুনিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতা বলে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনগণের মালিকানা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।