অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন ডিসিকে নোটিশ
ইটভাটা

স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার, কার্যক্রম চালাতে পারবে না পার্বত্য জেলার ২৭ ইটভাটা

পার্বত্য জেলায় ২৭ ইটভাটার কার্যক্রমের ওপর এর আগে দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন আপিল বিভাগ। ইটভাটার জন্য স্থান নির্বাচন বিষয়ে ইটভাটাগুলোর মালিকদের আবেদন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে এ-সংক্রান্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকদের করা পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ রোববার (৪ জুন) এ আদেশ দেন।

মালিকপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আবেদন পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিকে আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। ফলে এ সময় পর্যন্ত ওই ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা যাবে না।

অপরপক্ষের আইনজীবী বলছেন, স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে লাইসেন্সবিহীন পার্বত্য জেলার ২৭ ইটভাটা কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বিধান অনুসারে, পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্যমতে, ইটভাটা কার্যক্রম বন্ধের প্রশাসনিক উদ্যোগ চ্যালেঞ্জ করে পার্বত্য জেলার ২৭ ইটভাটা মালিক হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত রুল দিয়ে ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

অন্যদিকে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে হাইকোর্ট লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গেলে পার্বত্য জেলার ২৭ ইটভাটা মালিক হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেখান। এ অবস্থায় মালিকদের করা রিটে পক্ষভুক্ত হয় এইচআরপিবি।

আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট পার্বত্য জেলায় অবস্থিত ইটভাটার মালিকদের রিট খারিজ করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকেরা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত গত ১৫ মার্চ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। মালিকদের করা পৃথক আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় রোববার শুনানি হয়।

আদালতে ইটভাটার মালিকদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

আদেশের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে লাইসেন্সবিহীন পার্বত্য জেলার ২৭ ইটভাটা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ইটভাটার মালিকদের আবেদন দুই মাসের মধ্যে পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিকে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইটভাটার মালিকদের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সালে কার্যকর হয়। আইনে কার্যকরের দুই বছরের মধ্যে অন্যত্র ইটভাটা সরিয়ে না নিলে লাইসেন্স বাতিল হবে বলে আইনে আছে। তবে পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে আইনে আছে পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি স্থান নির্বাচন করে দেবে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ওই কমিটি গঠিত হয়েছে। এখনো কমিটি পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে আইন অনুসারে ইটভাটার জন্য স্থান নির্বাচন করে দেয়নি। আপিল বিভাগে ২৭ ইটভাটার মালিকের আবেদন পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিকে তা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ সময় পর্যন্ত ওই ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা যাবে না।’