কারামুক্তি মিললেও জল্লাদ শাহজাহানের মাথা গোঁজার ঠাঁই
জল্লাদ শাহজাহান ভূইয়া

কারামুক্তি মিললেও জল্লাদ শাহজাহানের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই

যার হাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কার্যকর হয়েছে ষাট অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড, সেই জল্লাদ শাহজাহান ভূইয়া ছাড়া পেলেন কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে। হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়। ভালো আচরণের কারণে তার সাজা কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়। জীবনের তিন দশক কারাগারে কাটিয়ে এখন কোথায় যাবেন শাহজাহান?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গির জীবনের শেষ ক্ষণের যিনি সাক্ষী, তিনি জল্লাদ শাহজাহান।

তার হাত ধরেই কার্যকর হয় এমন ৬০ জনের ফাঁসি। অবশ্য এই হিসেব দিয়েছেন শাহজাহান নিজেই। তবে কারাগারের রেকর্ড বলছে, এ পর্যন্ত ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন তিনি। তবে সব হিসেব ছাড়িয়ে জল্লাদ শাহজাহানের মুক্তিই এখন আলোচনায়।

অবশেষে দীর্ঘ ৩২ বছরের কারাজীবন থেকে মুক্তি। কেরানীগঞ্জের জেল থেকেই বেরিয়েই বললেন, মুক্ত জীবন তার ভালো লাগছে। কিন্তু এখন কোথায় যাবেন সেটি তার জানা নেই। শুনেছেন তার এক বোন আছে। কিন্তু সেই বোনকেও তার দেখা হয়নি।

রোববার (১৮ জুন) সকালে কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, তার অপেক্ষায় নেই কোনো স্বজন। তাই কারাগারে ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠা একজনের আশ্রয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার কোনো স্বজন আসেনি। কারাগারে তার সঙ্গে থাকা একজন শাহজাহানকে নিয়ে গেছেন নিজের বাসায়।

কারাগার থেকে বেরিয়ে অঝোরে কেঁদে কেঁদে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি এখন কী করব, কোথায় যাব, কী খাব? আমার ঘর-বাড়ি নেই। কারাগারে এক আসামি ছিলেন, যার বাসা রাজধানীর বসুন্ধরায়। আপাতত সেখানেই থাকব।

শাহজাহান বলেন, এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি এখন কী করব, কোথায় যাব, কী খাব? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে যেনো বাড়িঘর ও একটি কর্মসংস্থান করে দেন। অবিবাহিত শাহজাহান নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা।

শাহজাহানের জন্ম ১৯৫০ সালে। কারাগারের নথি বলছে ১৯৯২ ও ৯৫ সালের দুটি ডাকাতি ও হত্যা মামলায় তার মোট ৪২ বছরের কারদণ্ড হয়। পরে সেই সাজা কমে ৩২ বছর করা হয়। শাহজাহানের বয়স ৭৩ বছর। বিয়ে করারও সুযোগ হয়নি।

প্রতি ফাঁসি কার্যকরের জন্য দুই মাসের সাজা রেয়াত পেয়েছেন নামের আগে ‘জল্লাদ’ পরিচিতি বসা শাহজাহান। এই হিসাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেই তার সাজা কমেছে সোয়া চার বছর। আর ভালো আচরণ এবং অন্যান্য কারণে কারাবিধি অনুযায়ী কমেছে আরও কিছু সাজা।