মুহম্মদ আলী আহসান; অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কুষ্টিয়া।

মেডিয়েশন মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি ও আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের করণীয়

মুহম্মদ আলী আহসান: বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মেডিয়েশনসহ অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। প্রচলিত আইন-অনুযায়ী মেডিয়েশন প্রক্রিয়াটি সাধারণত দেওয়ানি মামলায় বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু কিছু আপসযোগ্য ফৌজদারি বিরোধ নিষ্পত্তিতেও এর ভূমিকা অপরিসীম।

মেডিয়েশনের বিভিন্ন সুবিধা বিবেচনায় একে মামলাজট নিরসনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মনে করা হয়। প্রচলিত আদালত ব্যবস্থায় রায়ের মাধ্যমে একপক্ষ হেরে যায় ও অন্যপক্ষ জয়লাভ করে। ফলে পক্ষদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মেডিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরোধীয় পক্ষগণ নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করেন। ফলে এই পদ্ধতিতে কোনো পক্ষ হেরে যান না, বরং উভয়পক্ষ জয়লাভ (win win situation) করেন। বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়।

সহজ পদ্ধতিতে মধ্যস্থতা মাধ্যমে মীমাংসার প্রশ্নে মহাগ্রন্থ বিজ্ঞানময় আল-কুরআন নিম্নে বর্ণিত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন-

কোনো নারী যদি তার স্বামীর পক্ষে থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আংশকা করে, তবে তাদের জন্য এতে কোনো অসুবিধা  নেই যে, তারা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোন রকমের আপোষ-নিষ্পত্তি করবে। আর আপোস-নিষ্পত্তিই উত্তম [সুরা নিসা (৪): ১২৮]

মুমিনদের দুটি দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ইনসাফ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। মুমিনগণ পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। [সুরা হুজুরাত(৪৯)]

তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টির আশংকা কর, তাহলে পুরুষের পরিবার হতে একজন সালিস ও নারীর পরিবার হতে একজন সালিস পাঠিয়ে দাও। তারা যদি মীিিমাংসা করতে চায়, তবে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত। [সুরা নিসা(৪)-৩৫]

তাদের বহু গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে যে সদকা বা সৎকাজ কিংবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার আদেশ করে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তা করবে আমি তাকে মহা প্রতিদান দেব। [সুরা নিসা (৪):১১৪]

অবশ্য তোমরা যতই চাও না কেন, স্ত্রী সাথে সমান আচরণ করা তোমাদের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু একজনকে উপেক্ষা করে অন্যের দিকে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ো না (যাতে কারো এটি মনে না হয় যে, তার স্বামীই নেই)। আর যদি তোমরা নিজেদের ভুল সংশোধন করে নাও এবং আল্লাহ সচেতন থাকো, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা নিসা- আয়াত-১২৯]

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে অটল থেকো। তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য সাক্ষ্য দেবে। সত্য বলার কারণে যদি তোমার নিজের ক্ষতি হয় অথবা মা-বাবা বা আত্মীয়ের ক্ষতি হয়, তবুও সত্য সাক্ষ্য দেবে। আর পক্ষদ্বয় বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন (যে বিবেচনা না করেই) সত্য সাক্ষ্য দেবে।

আল্লাহর প্রাধিকার ওদের সবার ওপরে, লোভ লালসা বা প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে ন্যায় বিচার থেকে দূরে সরে যেও না। যদি পক্ষপাতিত্ব করে পেঁচানো কথা বলো, সত্যকে বিকৃত করো বা পাশ কাটিয়ে যও তবে মনে রেখো, আল্লাহ সব কিছুরই খবর রাখেন। [ সুরা নিসা আয়াত-১৩৫]

যে ব্যক্তি ন্যায়ের উপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মাঝে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (জামে তিরমিযী-১৯৯৩)।

আমি কি তোমাদেরকে রোযা, নামাজ ও সদকার মর্তবা থেকেও উত্তম বিষয় সম্পর্কে বলব না? সাহাবীগণ আরয করলেন, আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, বিবাদরতদের মধ্যে  মীমাংসা করা। আর জেনে রেখ, পরস্পর বিবাদই মানুষের দ্বীন  মুড়িয়ে দেয়। জামে তিরমিযী, হাদীস-২৫০৯।

বাংলাদেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি শুরু

ভারতীয় উপমহাদেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নতুন কিছু নয়। ব্রিটিশ আমলে খাজনা আদায়ের জন্য ১৮৭০ সালে পঞ্চায়েত প্রথা চালু করা হয়েছিল। স্থানীয় ছোটখাটো বিরোধের সমাধান পঞ্চায়েতের মাধ্যমে করা হতো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মেও পর ১৯৭৮ সালে সৃষ্টি হয় গ্রাম আদালত। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বিচারব্যবস্থায় এডিআর চালু করা হয়। আর ২০১২ সালে এ ব্যবস্থাকে  দেওয়ানি আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [ADR] কাকে বলে?

যখন কোনো একটি বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে আইনসিদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে আইন-আদালতের সচরাচর প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উক্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তাকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি [Alternative Dispute Resolution] বলে। সাধারণত কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালত ব্যবস্থা বা বিচার বিভাগীয় [Judicial], আধা বিচার বিভাগীয় [Quasi-judicial] এবং বিচার বিভাগ বহির্ভূত[Non Judicial] পদ্ধতিতে মীমাংসা করা হয়ে থাকে। বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়গুলোর বেশিরভাগই বিচার বিভাগ বহির্ভূত [Non Judicial] পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত যেখানে বিচার বিভাগ কোন ভাবেই সম্পৃক্ত থাকেনা।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়সমূহ

১. আলাপ-আলোচনা (Negotiation)

আলাপ-আলোচনা হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানেই কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে বিরোধের দুই পক্ষই যখন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই একটি সুবিধাজনক পরিনতির দিকে পৌঁছে বা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সমাধান করে থাকে। আলাপ-আলোচনার [Negotiation] মাধ্যমে শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২১০(২) ২১০(৩) উপধারায় বলা আছে।

২. সালিশ প্রক্রিয়া [Arbitration]

সালিশ [Arbitration] প্রক্রিয়াটি  অনেকটা মধ্যস্থতা পদ্ধতির অনুরূপ। এ কারণেই সালিশ কার্যক্রম  [Arbitration] কে মধ্যস্থতা কার্যক্রমের উন্নত সংস্করণ বলে মনে করা হয়। কেননা মধ্যস্থতা কার্যক্রমে মধ্যস্থতাকারী বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে পক্ষগণের উপর কোন পন্থা চাপিয়ে দিতে পারেন কিন্তু সালিস  কার্যক্রমের সালিশকারী (Conciliator) পক্ষগণের ওপর রায় চাপিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের রায়কে রোয়েদাদ [Award] বলা হয়। সালিশ [Arbitration]  প্রক্রিয়াটি সালিশ আইন-২০০১ দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ আইনের ২১০ বিরোধ সালিসীর (Conciliator) মাধ্যমে নিষ্পত্তি কথা বলা হয়েছে।

৩. মধ্যস্থতা কার্যক্রম

মেডিয়েশনের মাধ্যমে আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতের কর্মকর্তা ও  কর্মচারীদের করনীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মেডিয়েশন কী?

মেডিয়েশন (mediation) বা মধ্যস্ততা বিরোধ নিষ্পত্তির একটি সহজ, দ্রুত ও অর্থ-সাশ্রয়ী পদ্ধতি। মেডিয়েশন বলতে নমনীয়, অনানুষ্ঠানিক, অ-বাধ্যতামূলক, গোপনীয়, অ-প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং সম্মতিমূলক বিরোধ নিষ্পত্তির একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে মধ্যস্থতাকারী আপসের শর্তাবলী বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না দিয়ে পক্ষদের সমঝোতায় পৌঁছাতে সহায়তা করেন (Code of Civil Procedure 1908, ধারা ৮৯ (এ))।

অন্যদিকে UN Convention on International Settlement Agreements Resulting from Mediation, 2018-এ মেডিয়েশনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘মধ্যস্থতা’ একটি প্রক্রিয়া, যেখানে পক্ষগণ তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবৃন্দের (মেডিয়েটর) সহায়তায় বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে প্রচেষ্টা চালান এবং যেখানে পক্ষদের উপর উক্ত তৃতীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিবৃন্দের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার কর্তৃত্ব থাকে না” (Art 2)।

এই প্রক্রিয়ায় মেডিয়েটর নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দেন না, বরং তিনি বিবদমান পক্ষসমূহকে শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় পৌঁছাতে আইনগত ও মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন। স্বল্পতম সময়ে, ন্যূনতম ব্যয়ে ও সন্তোষজনক উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মেডিয়েশন প্রক্রিয়াটি ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে অধিকতর নিশ্চিত করতে পারে।

মেডিয়েশন ও মামলা

মেডিয়েশন ও মামলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, মেডিয়েশেনের ক্ষেত্রে পক্ষসমূহ পরস্পর সম্মতিতে সমঝোতায় উপনীত হলেই কেবল বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। অপরদিকে মামলায় একজন বিচারক আইন ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় প্রদান করেন- যেখানে পক্ষদের ইচ্ছার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে।

মেডিয়েশনে পক্ষগণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধানে পৌঁছান। মেডিয়েটর আলোচনার প্রক্রিয়াটি সহজতর করেন। এতে করে বিরোধীয় পক্ষসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থাকে বা সম্পর্কের উন্নতি হয়। ফলে পুনরায় বিরোধ সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যায়। অপরদিকে মামলায় পক্ষসমূহের মধ্যে আলাপ-আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ফলে মামলার চেয়ে মেডিয়েশন প্রক্রিয়ায় পক্ষসমূহের অধিক সন্তুষ্টি লক্ষ্য করা যায়।

গতানুগতিক বিচার-প্রক্রিয়ার মতো মেডিয়েশনে সাধারণত দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি বা সাক্ষ্য আইনের ধরা-বাঁধা নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। এটি একটি অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া যেখানে আইনজীবীদের উপস্থিতিও সবসময় প্রয়োজন হয় না বা সাক্ষীদের পরীক্ষা করতে হয় না। মেডিয়েশনের মাধ্যমে পক্ষসমূহ সমাধানে পৌঁছালে তার বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিশন হয় না (Code of Civil Procedure 1908, ধারা 89 (G) (12))|। ফলে, মেডিয়েশনের মাধ্যমে কম খরচে ও দ্রুততম সময়ে স্থায়ীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিকরা যায়।

তবে পক্ষসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক শক্তির তারতম্য থাকলে মেডিয়েশন পদ্ধতিতে কখনো কখনো অন্যায্য ফলাফলের ঝুঁকি থাকে। একজন দক্ষ মেডিয়েটর এই ঝুঁকিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে পক্ষদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করে বিরোধের সমাধান করতে পারেন।

বাংলাদেশে বিদ্যমান মেডিয়েশন সংক্রান্ত প্রচলিত আইনসমূহ

বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিম্নে উল্লেখিত বিভিন্ন আইনসমূহে মেডিয়েশনের বিধানাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-
বাংলাদেশে বিদ্যমান মেডিয়েশন সংক্রান্ত প্রচলিত আইনসমূহ

বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মেডিয়েশনের বিধানাবলী অন্তর্ভুক্ত করা আইনসমূহ

মেডিয়েশন করার বিদ্যমান আইনী পন্থাসমূহ 

ক) আদালতের মাধ্যমে মেডিয়েশন

বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন-অনুযায়ী দেওয়ানি মামলায় লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত সকল পক্ষের উপস্থিতিতে মামলার শুনানি মুলতবি করে বিরোধীয় বিষয়ে মেডিয়েশনের উদ্যোগ নিতে পারেন। মেডিয়েশন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য তিনি বিরোধীয় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট লিগ্যাল এইড অফিসার বা নিযুক্ত আইনজীবীদের কাছে বা যে-ক্ষেত্রে পক্ষদের কোনো আইনজীবী না থাকে, সেক্ষেত্রে পক্ষদের নিকট বা জেলাজজ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্যানেল আইনজীবীদের মধ্য হতে কোনো একজনকে মেডিয়েটর হিসেবে নিযুক্ত করতে পারেন (Code of Civil Procedure 1908, ধারা ৮৯এ)। আইনানুযায়ী মেডিয়েশনের এই উদ্যোগ গ্রহণ বাধ্যতামূলক (Code of Civil Procedure 1908, ধারা ৮৯এ)।

খ) লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে মেডিয়েশন

(১) মামলা দায়েরের পূর্বে (pre-case) মেডিয়েশন

প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় মামলা দায়েরের পূর্বে মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আইন-অনুযায়ী লিগ্যাল এইড অফিসার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন এবং উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে কেবল দেওয়ানি বা পারিবারিক বিরোধ নয়, বরং আপসযোগ্য ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রেও মেডিয়েশনের সুযোগ রয়েছে (আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৫, বিধি ৩(৪) ও বিধি ৪)।

আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৫ এর ৪ নং বিধিমালায় লিগ্যাল এইডি অফিসার কর্তৃক আপস মীমাংসার উগ্যোগ গ্রহণের বিষয় বর্ণিত আছে। উক্ত বিধিমালার আওতায় প্রদত্ত পরামর্শের ভিত্তিতে কোন আবেদনকারী আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সম্মতি প্রদান করলে লিগ্যাল এইড অফিসার আপস মীমাংসার লক্ষ্যে সম্মতি প্রদান করলে লিগ্যাল এইড অফিসার সংশ্লিষ্ট বিরোধ আপস মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অপর পক্ষকে অবহিত করবেন। অপর পক্ষ উক্ত আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সম্মতি প্রদান করলে লিগ্যাল এইড অফিসার পক্ষগণের উপস্থিতিতে মীমাংসা সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তবে আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে অপর পক্ষ সম্মতি প্রদান না করলে লিগ্যাল এইড অফিসার বিষয়ের উপর উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরের নিমিত্ত কমিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটির নিকট তার সুপারিশ প্রেরণ করবেন এবং সরাসরি প্রাপ্ত আবেদনের ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটি বরাবর আবেদন করবার জন্য আবেদনকারীকে পরামর্শ প্রদান করবেন এবং তার একটি কপি সংশ্লিষ্ট কমিটির নিকট প্রেরণ করবেন।

(২) মামলা দায়েরের পরে (post-case) মেডিয়েশন

মামলা দায়েরের পরেও আদালত উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে বা নিজ উদ্যোগে মেডিয়েশনের উদ্দেশ্যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট পাঠাতে পারেন (court-referred mediation) (Code of Civil Procedure 1908, ধারা ৮৯এ) ও আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৫, বিধি ২১ক)।

উক্ত বিধিমালায় ১৭ বিধিতে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি বিধান বর্ণিত আছে। উক্ত বিধি অনুযায়ী কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোন বিষয় প্রেরণ করা হলে তিনি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধকৃত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ বরারব নোটিশ প্রেরণ করবেন। তৎপর বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিসার বিরোধীয় বিষয়ে যে আইনের আওতাধীন সেই আইনে বর্ণিত পদ্ধতি অথবা উক্ত আইনে বিস্তারিত বিধান না থাকলে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। লিগ্যাল এইড অফিসার উক্ত বিধিমালার অধীন বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবার বা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর অনধিক ০৫ দিনের মধ্যে মীমাংসা চুক্তি বা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এর কপি পক্ষগণকে সরবরাহ করবেন এবং আদালত বা ট্রাইব্যুনাল হতে প্রাপ্ত দলিলাদি ও কাগজপত্রসহ উহার একটি কপি সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় কার্যাথে প্রেরণ করবেন।

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর অধীনে মেডিয়েশন

১। দেওয়ানী মোকদ্দমায় লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত শুনানি মুলতবি করে বাধ্যতামূলকভাবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং মধ্যস্থতা সংক্রান্ত শুনানীর জন্য একটি তারিখ ধার্য করবেন। উক্ত তারিখে বাদী, বিবাদী কিংবা পক্ষগণ চাইলে তাদের আইনগত প্রতিনিধি বা তাদের আইনজীবী স্বশরীরে আদালতে হাজির থাকার জন্য আদালত লিখিত নির্দেশ দিবেন ।

২। মধ্যস্থতা সংক্রান্ত শুনানীর নির্ধারিত তারিখে মোকদ্দমার বাদী, বিবাদী কিংবা তাদের আইনগত প্রতিনিধি বা তাদের আইনজীবী স্বশরীরে আদালতে হাজির হলে আদালত পক্ষগণ বা তাদের আইনগত প্রতিনিধিকে মধ্যস্থতার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা করে বোঝাবেন।

৩। ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়াবলী পক্ষগণকে ব্যাখ্যা করার পর পক্ষগণ সম্মত হলে আদালত নিজে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মধ্যস্থতার আলোচনা শুরু করবেন অথবা মধ্যস্থতার জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতিতে পক্ষগণের সুবিধামতো একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন। আদালত একই সময়ে পক্ষগণকে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের অন্য যে সকল বিকল্প রয়েছে অর্থাৎ, নিযুক্ত আইনজীবীগণের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ, জেলা জজ কর্তৃক প্রণীত প্যানেলের কোনো মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে মধ্যস্থতা অথবা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মধ্যস্থতা ইত্যাদি বিষয় পক্ষগণকে বুঝিয়ে বলবেন এবং পক্ষগণ যদি এসব বিকল্পের যে কোনো একটিকে বেছে নেয়, তাহলে সে অনুযায়ী আদালত মধ্যস্থতার জন্য পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন । পক্ষগণের সঙ্গে ইতোপূর্বে সংশ্লিষ্ট ছিল বা প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে চাকরিরত আছেন এমন কোনও ব্যক্তিকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না ।

৪। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আদেশের দশ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মোকদ্দমার পক্ষগণ আদালতকে অবহিত করবেন। পক্ষগণ মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত করতে ব্যর্থ হলে আদালত পরবর্তী ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন। মধ্যস্থতাকারী উক্তরূপে নিযুক্ত হওয়ার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে মধ্যস্থতা কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। উক্ত কার্যক্রম যদি ষাট দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে মধ্যস্থতার অগ্রগতি বা যথাযথ কারণ বিবেচনায় অতিরিক্ত ত্রিশ দিন বর্ধিত করা যাবে।

৫। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে মধ্যস্থতাকারী উভয় পক্ষ কর্তৃক গৃহীত শর্তাবলি উল্লেখপূর্বক একটি চুক্তি প্রস্তুত করবেন এবং পক্ষগণ, তাদের নিযুক্ত আইনজীবীগণ ও মধ্যস্থতাকারী তাতে স্বাক্ষর প্রদান করবেন। উক্ত চুক্তি দাখিলের সাত দিনের মধ্যে আদালত উক্ত চুক্তির আলোকে ডিক্রি/আদেশ প্রচার করবেন। বিচারক নিজে আপস-মীমাংসা করে থাকলেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে মোকদ্দমার পক্ষগণ আদালতে দাখিলকৃত কোর্ট ফি ফেরত পাবেন। মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে মামলাটি পূর্ববৎ অবস্থা থেকে চলবে।

৬। বর্ণিত মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী পক্ষগণের বিরোধ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষগণকে কোনরূপ প্রভাবিত করবেন না। তিনি পক্ষগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবেন মাত্র।

৭। বিচারক নিজে মধ্যস্থতাকারী হলে এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে তিনি ঐ মোকদ্দমার বিচার করবেন না । তিনি মোকদ্দমাটি উপযুক্ত একটি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে বদলির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা জজের নিকট পাঠাবেন । কোনো আপীল মামলায় জেলা জজ মধ্যস্থতাকারী হলে এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে তিনি উক্ত আপীল মামলা বিচার না করে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করবেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার যথাযথ কারণ উল্লেখপূর্বক আইন ও বিধি অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা আদালতে দাখিল করবেন।

৮। মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় পক্ষগণের সাথে আলাপ-আলোচনা, বিবৃতি, স্বীকৃতি বা মন্তব্য গোপন রাখতে হবে এবং তা মোকদ্দমার কার্যক্রমে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার বা বিবেচনায় নেওয়া যাবে না।

৯। সর্বোপরি মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজনে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার যে কোনো পর্যায়ে পক্ষগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালত সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান মতে প্রয়োজনীয় আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করবেন।

অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর অধীন মেডিয়েশন

নতুন করে সংবিধিবদ্ধ অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ সালের ৫ম অধ্যায়ে ফয়সালামূলক বৈঠক ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ-নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উক্ত আইনের ২১ ধারায় বলা আছে যে, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের দায়েরকৃত সুদসহ ঋণ আদায়ের মামলায় বিবাদীপক্ষ লিখিত বক্তব্য পেশ করার পর অর্থঋণ আদালতের পরিচালনাকারী জজ ঐ মামলার পরবর্তী সকল  কার্যক্রম স্থগিত রেখে ফয়সালামূলক বৈঠক ডাকবেন এবং তাতে মামলার পক্ষগুলো এবং তাদের আইনজীবী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। ফয়সালা বা নিষ্পত্তিমূলক গোপনীয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এমনি বৈঠকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কোনো সমঝোতায় পৌঁছালে সমঝোতার শর্তাবলি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এবং উপস্থিত আইনজীবী ও প্রতিনিধিরা তা সত্যায়িত করবেন এবং এই চুক্তির ভিত্তিতে আদালত একটি আদেশ বা ডিক্রি জারী করবেন।

এমন বৈঠকে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে ঐ আদালতের পরিচালনাকারী বিচারক যদি ইত্যবসরে বদলী হয়ে না থাকে তাহলে মামলাটি এ বিষয়ে এখতিয়ার সম্পন্ন আরেকটি আদালতে স্থানান্তরিত হবে এবং মামলার কার্যক্রম সেই পর্যায় থেকে শুরু হবে যে পর্যায়ে সমঝোতা বৈঠকটি শুরু হয়েছিল, যেন সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠানের কোন কার্যক্রম ছিল না।

উক্ত আইনের ২২ ধারায় বলা আছে যে, মামলায় বাদীপক্ষ লিখিত বক্তব্য পেশ করার পর সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠানের কোনো আদেশ যদি দেয়া না হয়ে থাকে তাহলে আদালত স¦তঃপ্রণোদিত ভাবে কিম্বা পক্ষগুলোর অনুরোধে মামলার পরবর্তী সকল কার্যক্রম স্থগিত রেখে নিরপেক্ষ আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত জজ বা ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কোন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার অথবা সমঝোতার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত অপর কোনো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পাঠাবেন।

মধ্যস্থতার কার্যক্রম গোপনে অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যস্থতার পর মধ্যস্থতাকারী মধ্যস্থতার বিবরণ সম্বলিত একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করবেন। এ ধরনের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে কোন সমঝোতা হয়ে থাকলে বিরোধ  নিষ্পত্তির শর্তাবলি অন্তর্ভূক্ত করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে এবং মধ্যস্থতাকারী ও আইনজীবীদের তা সত্যায়িত করতে হবে। ঐ চুক্তির ভিত্তিতে আদালত একটি আদেশ বা ডিক্রী জারী করবেন।

এমন মধ্যস্থতা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে যদি কোনো ফয়সালা না হয় তাহলে যে পর্যায়ে মধ্যস্থতা শুরু হয়েছিল সে পর্যায় থেকে মামলার শুনানী শুরু হবে যেন এধরনের মধ্যস্থতার কোনো কার্যক্রম কখনই হয়নি। এমন মধ্যস্থতার কার্যক্রম গোপন থাকবে এবং মধ্যস্থতা চলাকালীন যেকোন যোগাযোগ বা সংলাপ ইত্যাদি বিশেষাধিকার হিসেবে গণ্য হবে এবং ঐ মামলার পরবর্তী কার্যক্রমে কিম্বা অন্য আর কোনো কার্যক্রম  সেগুলোর উল্লেখ করা হবে না কিম্বা সাক্ষ্যপ্রমাণেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

মামলার দুই পক্ষের মধ্যকার এধরনের চুক্তির ভিত্তিতে আদালতের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে কোন আপীল বা পর্যালোচনার আবেদন করা যাবে না। মামলাটি এমন সমঝোতার  মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষগলোকে কোর্ট ফির অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেবেন।

এমন সমঝোতা  বৈঠক বা কার্যক্রম ঐ বৈঠক বা কার্যক্রমের আদেশের তারিখ থেকে ৬০ দিন সময়ের মধ্যে এবং কতিপয় চুক্তিতে আরও ৩০ দিন সময়ের মধ্যে সম্পন্ন এমন বৈঠক বা কার্যক্রম আলোচ্য অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের প্রাধিকার প্রাপ্ত একজন অফিসার প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন এবং মামলার দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে আদালতকে এই বৈঠক বা কার্যক্রম শুরু করা সংক্রান্ত আদেশ ঐ অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে জানাতে হবে।

আপিল মোকদ্দমায় মেডিয়েশন

আপিল মোকদ্দমার ক্ষেত্রেও মধ্যস্থতার মাধ্যমে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি ব্যবস্থা রয়েছে। The Code of Civil Procedure 1908 এর Section 89(C) ধারা মতে আপিল আদালত আপিল মোকদ্দমা স্বয়ং মধ্যস্থতা করতে অথবা উক্ত আপিল মোকদ্দমার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতাকারী বরাবর প্রেরণ করতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে আপিল মূল ডিক্রীর বিরুদ্ধে হতে হবে এবং মূল মোকদ্দমায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী  বা তাদের স্থলবর্তীগণের মধ্য হতে হবে এবং যথাযথ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে আপীল মোকদ্দমাটি ৮৯(অ) ধারা মোতাবেক মেডিয়েশন মাধ্যমে নিষ্পত্তি  করতে হবে।

উক্ত আইনের 89(D) ধারা মতে The Code of Civil Procedure (Amendment) Act, 2012 প্রবর্তন হবার পূর্বে চলমান মূল দেওয়ানী মোকদ্দমা বা আপিল মোকদ্দমায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পক্ষগণ মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দরখাস্ত দায়ের করতে পারেন। উক্ত মূল মোকদ্দমা  বা আপিল মোকদ্দমাটি উক্ত আইনের 89(A) ও 89(C) অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশনের মাধ্যমে ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। উক্ত দাখিলকৃত দরখাস্তের ভিত্তিতে মূল দেওয়ানী মোকদ্দমা বা আপিল মোকদ্দমাটি উক্ত আইনের 89(A) ও 89(C) অনুযায়ী মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ

(১) মধ্যস্থতা শুরু হলে তার মাধ্যমেই মোকদ্দমার নিষ্পত্তি হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। মধ্যস্থতার আলোচনা শুরুর পর যদি দেখা যায় বিরোধীয় বিষয়টিতে পক্ষসমূহের অবস্থান এমন অনমনীয় যে কোনো মধ্যস্থতা সম্ভব নয়, অথবা মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি কোনো পক্ষের জন্যই অনুকূল কোনো অবস্থানের সৃষ্টি করছে না, তাহলে সেই পর্যায় হতে পুনরায় প্রচলিত আইনে মোকদ্দমার কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। কিন্তু মধ্যস্থতার আলোচনা একবার শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই পক্ষগণ আর প্রথাগত মামলা পরিচালনার কার্যক্রমে না গিয়ে মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী হবেন। এমতাবস্থায়, পক্ষগণের অন্তত একবার মধ্যস্থতার জন্য আলোচনায় বসা উচিত।

(২) মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে পক্ষগণ নিজেরাই নিজেদের পক্ষের মধ্যস্থতাকারী নির্বাচন করতে পারবেন। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় পুরো বিষয়টিতেই পক্ষগণের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

(৩) পক্ষগণ আদালত বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মোকদ্দমার বিরোধীয় বিষয়টি মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চাইলে এ বাবদ তাদের কোনো খরচ বহন করতে হয় না।

(৪) অন্য ক্ষেত্রে দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পক্ষগণ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণসাপেক্ষে মধ্যস্থতা বাবদ খরচ আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নিকট হতেও লাভ করতে পারে।

(৫) মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী কোনও সিদ্ধান্ত প্রদান করেন না, বরং তিনি পক্ষগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেন। এক্ষেত্রে পক্ষগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা থাকে।

সুবিধাসমূহ

(১) মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তা বজায় থাকা: মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় যে কোনো পর্যায়ে পক্ষগণের মধ্যে যে আলোচনাই হোক না কেন বা যে দলিল-প্রমাণই উপস্থাপন করা হোক না কেন, তার গোপনীয়তা অটুট থাকে এবং মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে মধ্যস্থতার আলোচনা আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য হয় না।

(২) মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি সহজ ও ফলপ্রসূ মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে পক্ষগণ বা তাঁদের নিযুক্ত আইনজীবীগণ মধ্যস্থতা আলোচনার স্থান, কাল এবং কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়া নিজেরাই ঠিক করেন বলে এর কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও ফলপ্রসূ। এর ফলে পক্ষগণের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয়।

(৩) মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি অনানুষ্ঠানিক: আদালতে অথবা সালিস আইনের অধীনে সালিসে সাধারণত পক্ষগণের কথা বলার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় পক্ষগণ নিজেরা নিজেদের সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তিতে অধিক কথা বলার সুযোগ পান। এর ফলে পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝির অবসানের ক্ষেত্র তৈরী হয়।

(৪) মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপণের সুযোগ কম: প্রচলিত পদ্ধতিগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ হয়ে থাকে, কিন্তু মধ্যস্থতার মাধ্যমে এক বৈঠকেই বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। এ পদ্ধতিতে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ৯০ (নব্বই) দিন সময় প্রয়োজন হতে পারে। পক্ষগণ মতৈক্যে উপনীত হওয়ার পরে আদালত সে মর্মে ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে ডিক্রি/আদেশ প্রদান করতে পারেন। এতে মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপণের সুযোগ কম থাকে।

(৫) মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ফেরতের সুযোগ: মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে পক্ষগণ কোর্ট ফি ফেরত পাবেন। ফলে পক্ষগণের অর্থের সাশ্রয় হবে।

(৬) মামলা পরিচালনা ব্যয় হ্রাস: মধ্যস্থতার মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম সময়ে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হয়। ফলে মোকদ্দমার সার্বিক পরিচালনা ব্যয়সহ আইনজীবীর ফি বাবদ ব্যয় কম হয়।

(৭) মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্বল্প সময় ব্যয় হয়: আদালতে বিচার বা সালিসের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা থেকে যায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হলে বিচারাদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বা সালিসী রোয়েদাদের বিরুদ্ধে আপীল বা উচ্চ আদালতে রিভিশন হয়। এরপর আপীল বা রিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগে আপীল বা লীভ টু আপীল হয়। আপীল বিভাগ আপীল বা লীভ টু আপীলে যে রায় বা আদেশ প্রদান করেন, তার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ পিটিশন দায়ের করে। এতে সব মিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা হতে পারে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হলে মধ্যস্থতার ডিক্রি/আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপীল বা রিভিশন রক্ষণীয় নয়। এর ফলে একদিকে যেমন বিরোধীয় বিষয়ের দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়, অন্যদিকে আপীল-রিভিশন ইত্যাদির আইনগত সুযোগ না থাকায় মামলার আর কোনো দীর্ঘসূত্রিতা থাকে না। এতে পক্ষগণের সময়, শ্রম ও অর্থের প্রভূত সাশ্রয় হয়।

(৮) মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জয়-পরাজয় থাকে না: মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পক্ষগণ স্বাধীনভাবে নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বিধায় এক্ষেত্রে পক্ষগণের মধ্যে জয়-পরাজয় এর প্রশ্নের উদ্ভব হয় না। এই পদ্ধতিতে win-win situation এর কারণে পক্ষগণ তাদের গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।

(৯) মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্থায়ী সমাধান হয়: মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পক্ষগণ ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাদের সমাধান খুঁজে নেন বা বিরোধ মীমাংসা করেন বিধায় একই বিষয়ে পক্ষগণের মধ্যে বা তাদের উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে পুনরায় বিরোধ সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ থাকে। ফলে বিরোধের একটি স্থায়ী ও সফল সমাধান হয় এবং পক্ষগণের মধ্যে সম্পর্ক অটুট থাকে।

আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করণীয়

কর্মকর্তার করণীয়

১।  উপযুক্ত মামলা চিহ্নিত করা-বিচারকগণ মামলার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে কোন কোন মামলা  মেডিয়েশনের জন্য উপযুক্ত তা চিহ্নিত করবেন।

২। পক্ষদেরকে মেডিয়েশন সম্পর্কে জানানো-বিচারকগণ মেডিয়েশন প্রক্রিয়ার সুবিধাসমূহ এবং ফলাফল পক্ষদেরকে অবহিত করবেন।

৩। মেডিয়েশনের জন্য মামলা পাঠানো-মেডিয়েশনের উপযোগী মামলাসমূহ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মামলা মেডিয়েশনে পাঠাতে হবে।

৪। মেডিয়েশন প্রক্রিয়ার প্রসেস তত্ত্বাবধান করা-বিচারকগণ মেডিয়েশন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবেন। মেডিয়েশন প্রক্রিয়া যাতে সঠিকভাবে পরিচারিত হয় সেভাবে দিক নির্দেশনা দিবেন।

৫। মেডিয়েটরের সিদ্ধান্ত অনুমোদন- পক্ষদের মধ্যে উপনীত মেডিয়েশনের সিদ্ধান্ত সঠিক ও আইনানুগ হলে উক্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিচারক আদালতে আদেশ দিবেন।

কোর্ট ষ্টাফদের দায়িত্ব

১।  প্রশাসনিক সাপোর্ট প্রদান-কোর্ট ষ্টাফগণ কেস রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করবেন এবং পক্ষগণ, শালিসগণ এবং পক্ষগণের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করবেন।

২। পক্ষদের সহায়তা করণ- পক্ষদের মেডিয়েশন প্রক্রিয়া বোঝানো এবং প্রয়োজনীয় দলিলাদি প্রাপ্তিতে সহায়তা করবেন এবং দিক নির্দেশনা দিবেন।

৩। কোর্ট ষ্টাফগণ মেডিয়েশন প্রক্রিয়ার গোপনীয়তা বাইরে প্রকাশ করবেন না।

৪। কেস রেকর্ড ও দলিলাদি সংরক্ষণ।

আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি

আদালতে না গিয়েও বিরোধের নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এ জন্য তিনশ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে কী কী শর্তে আপোষ হচ্ছে তা লিখে স্বাক্ষর করতে হবে। আপোষনামা লেখার সময় সাক্ষী রাখা উচিত এবং আপোষনামায়সাক্ষীদের স্বাক্ষর রাখাও দরকার। এই আপোষনামা প্রয়োজনে নোটারি করে নেওয়া উচিত। আপোষনামা পারিবারিক, ব্যবসায়িক, জমিজমা যেকোন বিষয়েই করা যায়। বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তির বন্টনের জন্য আপোষের মাধ্যমে বন্টন করে নেওয়া যায়। একে বন্টননামা দলিল বলা হয়। তবে বন্টননামা দলিল নোটারি করলে হবে না। এ  দলিল অবশ্যই সাবরেজিষ্ট্রির মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে নিতে হবে।

ফৌজদার কার্যবিধি-১৮৯৮ এ ৩৪৫ ধারায় আপোষযোগ্য ও অ-আপোষযোগ্য মামলার তালিকা নির্ধারিত থাকায় আদালত সবক্ষেত্রে আউট-অব-কোর্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করার অনুমতি দিতে পারে না। তবে কোন কোন ফৌজদারী মামলা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যস্থতায় অ-আপোষযোগ্য বিচারাধীন মামলার বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ জন্য আইন মেনে কিছু কিছু টেকনিক্যাল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে জঘন্যতম অপরাধ বা নারী নির্যাতনের কোন ঘটনায় আপোষ মীমাংসা করা উচিত নয়। আপোষনামা নিয়ে কোন মিথ্যা বা জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। করলে শাস্তি হতে পারে।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি তথা মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা পদ্ধতি বিষয়ে জনমনে সচেতনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের উচিত মামলা-মোকদ্দমার ঝামেলা পরিহার করে বিকল্প বিরোধের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা। বিকল্প বিরোধ ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রয়োগে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও অধিক মামলা নিষ্পত্তি করা স¤ভব। সেজন্য প্রয়োজন আদালত সংশ্লিষ্ট বিচারক, কর্মচারী, আইনজীবী ও অন্যান্য অংশীজনের জনগণের সমস্যা হƒদয় দিয়ে উপলব্ধি করা এবং তাদের সমস্যার সমাধানে আন্তরিক প্রচেষ্টা নেয়া।

লেখক : মুহম্মদ আলী আহসান; অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কুষ্টিয়া।

তথ্যসূত্র
১। আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০
২। আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা, ২০১৫
৩। মেডিয়েশন ম্যানুয়াল
আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৪। বিকল্প বিরোধ-নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া- বাংলা পিডিয়া